প্রথম ম্যাচে ১৩১ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও তাসকিন আহমেদ বলেছিলেন, জয়ের জন্য করতে হবে কমপক্ষে ২৬০ থেকে ২৭০ রান। দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে মোহাম্মদ মিঠুন বলেছিলেন, দায়িত্ব নিতে হবে ব্যাটসম্যানদের।
সবই হয়েছিল ঠিকঠাক। তামিম-মিঠুন দায়িত্ব নিয়ে দলকে এনে দিয়েছিলেন ২৭১ রানের পুঁজি। তাসকিনরাও তৈরি করেছিলেন নিউজিল্যান্ডে প্রথম জয় পাওয়ার জন্য উইকেট নেয়ার সুযোগ।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি হলো না। তার একমাত্র কারণ ফিল্ডিং। সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন বাংলাদেশ ফিল্ডাররা; মিসফিল্ডিংয়ের জেরে বিলিয়েছেন রান।
এতে করে ২৭২ রানের লক্ষ্যে মাঠে নেমে অধিনায়ক টম ল্যাথামের সেঞ্চুরির কল্যাণে ১০ বল হাতে রেখেই পাঁচ উইকেটের জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। এই জয়ে সিরিজ জয়ও নিশ্চিত হয়ে গেল স্বাগতিকদের।
অথচ ল্যাথামের বদলে ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন মেহেদি হাসান কিংবা ৭৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা মিঠুন। ৭৮ রানের ইনিংসে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেওয়ার পর ডেভন কনওয়েকে দারুণ এক ডিরেক্ট থ্রো দিয়ে রান আউট করা তামিমও হতে পারতেন নায়ক।
শেষ দুজন হতে পারেননি। তাতে তাদের দায় নেই। কিন্তু মেহেদির দায় আছে।
আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ম্যাচ। প্রথম স্পেলে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচে এগিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। ল্যাথাম যখন ৫৮ রানে, তখন মেহেদির বলে সামনে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে তাকে দেন সহজ এক ক্যাচ।
কিন্তু মেহেদি সেই ক্যাচ ফেলে দেন। আর জীবন পেয়ে ল্যাথাম দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান।
মেহেদির আগে অবশ্য আরেকবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে বড় ভুল করেন মুশফিকুর রহিম। ব্যাট হাতেও এই ম্যাচে তেমন ভালো করতে পারেননি। ৩৪ রান করলেও বল খরচ করেছেন ৫৯টি।
কনওয়ের বিদায়ের পর চাপ তৈরির যে সুযোগ ছিল, সেটি করেছিলেন তাসকিন। জিমি নিশামকে বাধ্য করেছিলেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে। কিন্তু অতি সাধারণ সেই ক্যাচ ফেলে দেন মুশফিক।
জীবন পেয়ে ল্যাথামের সঙ্গে নিশাম গড়েন ৭১ বলে ৭৬ রানের জুটি। সে জুটি নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ডের সিরিজ জয়।
অথচ দিনের শুরুতেই লিটন দাসকে হারানোর পর তামিম ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে ভালো ভিত্তি তৈরি হয় ইনিংসের। ৭৮ রান করে তামিম দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হলেও সেখান থেকেই শুরু করেন মিঠুন।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইনিংস শেষে মিঠুন যখন ফেরেন, তার নামের পাশে ৫৭ বলে ৭৩ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। মেরেছেন ছয়টি চার ও দুটি ছয়। এই দুজনের ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশের পুঁজি ২৭১।
ক্রাইস্টচার্চের হাগলে ওভালে ২৬১ এর বেশি রান তাড়া করে জেতেনি কেউ। ২৭২ রানের লক্ষ্য বেঁধে দিয়ে তাই জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ।
তাতে শুরুটাও হলো দারুণ। ১১ ওভারের মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমান ফেরালেন গাপটিলকে, মেহেদি হেনরি নিকোলস ও উইল ইয়াংকে। তাতে জয়ের পাল্লা ভারী বাংলাদেশের দিকেই।
এরপর ল্যাথাম ও কনওয়ের ১১৩ রানের জুটি। সেই জুটিতে ম্যাচ বের করে নিচ্ছিল নিউজিল্যান্ড; বাঁধ সাধেন তামিম। তার ডিরেক্ট থ্রোতে ৭২ রানে ফিরতে হয় কনওয়েকে, ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।
কিন্তু তারপরই শুরু হয় ক্যাচ মিসের মহড়া। সঙ্গে মিসফিল্ডিংয়ে বারবার রান বিলানো তো ছিলই।
এসব সুযোগ নিতে কোনো ভুল করেননি ল্যাথাম। ১০১ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বলে চার মেরে দলের ম্যাচ ও সিরিজ জয়ও নিশ্চিত করেন ল্যাথাম।
শেষের দিকে বাংলাদেশ দলের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসে মুস্তাফিজের চোট। ৪৮তম ওভার করতে এসে তিন বল করেই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এখনও তাদের বিপক্ষে জয় নেই বাংলাদেশের। হয়তো সেরা সুযোগ ছিল এই ম্যাচেই। কিন্তু পিছলে হাতে কী আর জয় ধরা যায়!
সংক্ষিপ্ত স্কোরবাংলাদেশ: ২৭১/৬, ৫০ ওভার (তামিম ৭৮, মিঠুন ৭৩*, মুশফিক ৩৪, স্যান্টনার ২/৫১, জেমিসন ১/৩৬, হেনরি ১/৪৮)
নিউজিল্যান্ড: ২৭৫/৫, ৪৮.২ ওভার (ল্যাথাম ১১০*, কনওয়ে ৭২, নিশাম ৩০, মেহেদি ২/৪২, মুস্তাফিজ ২/৬২)