আগের ম্যাচ শেষে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছিলেন, বাংলাদেশের ব্যাটিং ১৩১ করার মতো নয়। জয়ের জন্য করতে হবে ২৬০-২৭০ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে অন্তত প্রথম ইনিংস শেষে সেই প্রাথমিক কাজটুকু করে রেখেছেন ব্যাটসম্যানরা।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিমের ৭৮-এ তৈরি হয়েছিল বড় সংগ্রহের ভিত্তি। আর সেই ভিত্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে ভালো সংগ্রহ এনে দিলেন মোহাম্মদ মিঠুন।
মিঠুনের ৫৭ বলে ৭৩ রানের দারুণ ইনিংসে ভর করে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ তুলেছে ২৭১। যা নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করছে আরেকটি বিষয়ও। ক্রাইস্টচার্চের এই মাঠে এখন পর্যন্ত ২৬১ রানের বেশি তাড়া করে জিততে পারেনি কোনো দল। সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে নিউজিল্যান্ডের তাই জিততে হবে রেকর্ড গড়েই।
অথচ ম্যাচের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ব্যাটিংয়ে নেমে ম্যাচের মাত্র দ্বিতীয় ওভারেই শূন্য রানে ফিরে যান লিটন দাস। পাওয়ারপ্লেটাও ভালো যায়নি সব মিলিয়ে, আসে মাত্র ২৬ রান।
কিন্তু তামিম ও সৌম্য সরকার মিলে নিশ্চিত করেন, আর সেই সময়ে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। তাদের ৮১ রানের জুটিতে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ, পায় বড় রানের ভিত্তি।
উইকেটে টিকে গেলেও নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন সৌম্য। মিচেল স্যান্টনারের বলে সামনে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন ৩২ রানে।
অন্য প্রান্তে অবশ্য তামিম তুলে নেন আরেকটি মাইলফলক। ফিফটি ছুঁয়ে তিনি বনে যান ওয়ানডেতে পঞ্চাশটি ফিফটি তুলে নেওয়া প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান।
তামিম অবশ্য এই মাইলফলক অর্জনের পথে পেয়েছেন ভাগ্যের সামান্য ছোঁয়াও। পঞ্চম ওভারেই ট্রেন্ট বোল্টের বোলিংয়ে কিপার টম ল্যাথাম ক্যাচ ধরলে তাকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন তামিম, সেখানে দেখা যায়, ব্যাটে নয়, বল লেগেছিল তামিমের ঊরুতে।
এরপর তামিমের একটি স্ট্রেইট ড্রাইভ থেকে দারুণ এক ফিরতি ক্যাচ নিয়েছিলেন দীর্ঘদেহী পেইসার কাইল জেমিসন। কিন্তু সিদ্ধান্ত থার্ড আম্পায়ারের কাছে পাঠানো হলে দেখা যায়, ক্যাচ ধরার পর শরীরের ভারসাম্য রাখতে গিয়ে বল মাটিতে ছুঁইয়ে ফেলেছেন জেমিসন। সে যাত্রায় তামিম যখন বেঁচে যান, তার রান তখন ৩৪। এরপর তামিম নিয়েছেন সেটির পুরো ফায়দা; তুলে নিয়েছেন ফিফটি।
তবে তামিমের ফেরাটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে। জিমি নিশামের বলে কঠিন একটি সিঙ্গেল নিতে যান তিনি, দ্রুত দৌড়ে এসে পা দিয়ে বল স্টাম্পে লাগান নিশাম। ততক্ষণে ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, তাতে তাকে ফিরতে হয় ৭৮ রান করে।
ফিফটির পর তামিম যে প্রতি-আক্রমণ করেছিলেন, তা অবশ্য সামান্য নষ্ট হয় মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে। নিজের পুরো ইনিংসে রান বের করতে সমস্যায় ভুগেছেন মুশফিক, শেষ পর্যন্ত যখন স্যান্টনারের বলে ফিরছেন, ৫৯ বলে তিনি করেছেন ৩৪।
এরপরে গল্পটুকু মিঠুনের। দারুণ সব শট খেলেছেন পুরো মাঠজুড়ে। ইনিংস শেষ করে যখন ফিরছেন মিঠুন, তিনি অপরাজিত ক্যারিয়ার সেরা ৭৩ রানে। মেরেছেন ছয়টি চার ও দুটি ছয়। নিজের ষষ্ঠ ফিফটি তো তুলে নিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিজের তৃতীয়।
আগের ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউট হয়েছিলেন মিঠুন, নিজের বোলিংয়ে হাত ছুঁইয়ে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা তাকে ফিরিয়েছিলেন নিশাম।
নিশামের বিরুদ্ধে বদলাও নিলেন অনেকটা মিঠুন। নিশামের বল খেলেছেন ১৫টি, তাতে রান নিয়েছেন ২৬!
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ শেষ করে ২৭১ রানে। এখন পর্যন্ত ক্রাইস্টচার্চের হাগলে ওভালে এত রান তাড়া করে জেতেনি কোনো দল। সর্বোচ্চ ২৬১ রান তাড়া করে স্কটল্যান্ড জয় পেয়েছিল কেনিয়ার বিপক্ষে, ২০১৪ সালে।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে দুটি উইকেট শিকার করেন মিচেল স্যান্টনার। একটি করে উইকেট পান ট্রেন্ট বোল্ট, কাইল জেমিসন ও ম্যাট হেনরি।