ফেব্রুয়ারিতে বিসিবি জানায়, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার জন্য বাংলাদেশ দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা সফরে যাবেন না সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) এক চিঠির মাধ্যমে ছুটি চান সাকিব। মঞ্জুরও হয় আবেদন। কিন্তু ছুটি পাওয়ার পরই বিভিন্ন বোর্ড কর্মকর্তার কথায় জানা যায়, সাকিব টেস্ট খেলতে আগ্রহী নন। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ২০১৭ সালে টেস্টে তার আগ্রহ ফেরাতে তাকে দেওয়া হয়েছিল অধিনায়কত্ব।
টেস্ট খেলতে আগ্রহী নন- এই অভিযোগের জবাব দেন সাকিব শনিবার। অনলাইন একটি ক্রিকেট ওয়েবসাইটের ফেসবুক লাইভে এসে সাকিব বলেন, টেস্ট খেলতে চান না, বিষয়টি এমন নয়। এ বছরের শেষ দিকে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য আইপিএল খেলতে চান তিনি।
‘বারবার কথা হচ্ছে এই টেস্ট নিয়ে। আমি বিসিবিকে চিঠি দিয়েছি। যারাই বলছে আমি টেস্ট খেলতে চাই না বা খেলবো না- তাঁরা এই চিঠিটা পড়েনি। এটা হচ্ছে বড় কথা। আমি আমার চিঠির কোথাও উল্লেখ করিনি যে আমি টেস্ট খেলতে চাই না। আমি আমার চিঠিতে উল্লেখ করেছি যে, আমি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্যে এই সময়টায় আইপিএল খেলতে চাই’, লাইভে বলেন সাকিব।
সাকিবের এমন উত্তরের জবাবে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান বলেন, যেহেতু সাকিব বলেছে সে টেস্ট খেলতে চায়, সেহেতু আইপিএল খেলার জন্য তাকে যে অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়েছিল তা পুনরায় বিবেচনা করে দেখা হবে।
‘ও টেস্ট খেলতে চাচ্ছে ওর কথায় বোঝা গেছে। কাল পরশু আমি বোর্ডের সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে অনাপত্তি পত্রের ব্যাপারে চিন্তা করব। আগ্রহ থাকলে ও টেস্ট খেলবে, ও যাবে শ্রীলঙ্কা টেস্টে। আর বাকি যেটা আমরা দেখে সিদ্ধান্ত নেব কি করা যায় না করা যায়’, রোববার বলেন আকরাম।
সাকিবের শ্রীলঙ্কা সফরে না যাওয়া নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, এটি নিজেদের মধ্যেই মিমাংসা হওয়া উচিত বলে মনে করছেন সাবেক বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘একটা খেলোয়াড়ের সঙ্গে বোর্ডের সব সময় যোগাযোগ থাকবে। এই বিষয়গুলো কিন্তু সব সময় পাবলিকলি আসারও দরকার নেই। এটা বোর্ডের প্লেয়ার ম্যানেজমেন্টের একটি ইস্যু। তারা বসে এটা ঠিক করে নিবে। সাকিবের যদি এরকম একটা পরিকল্পনা করে এবং বোর্ড যদি মনে করে বৃহত্তর স্বার্থে এটি প্রয়োজন হতে পারে, এটা তো একটা সমঝোতার মধ্যে দিয়েই হতে পারে। এটা তো এত বড় ইস্যু হওয়ার কিছু নেই।’
সাকিব এবং বোর্ড পরিচালকরা, সবাই তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন মিডিয়ায়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, সাকিব কিছু বলছেন, তার উত্তরে বোর্ড কর্তারা। তার জবাবে আবারও সাকিব, তার প্রতিউত্তরে আবারও বোর্ড। গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে আছে দুই পক্ষ।
সাবেরের মতে, এটি কোনোভাবেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য মঙ্গলজনক নয় এবং বোর্ড এটির মধ্য দিয়ে নিজেদের খাটো করে ফেলছেন।
‘এটা (সাকিব বনাম বোর্ড পরিস্থিতি) তো মঙ্গলজনক হতে পারে না। কেনো হবে? ক্রিকেট বোর্ড তো অনেক ওপরে। ক্রিকেট বোর্ড এই পর্যায়ে কেনো এমন কন্ট্রাডিক্ট করবে। একজন ব্যক্তি তো পুরো বোর্ডের চেয়ে বড় হতে পারে না। ক্রিকেট বোর্ড যত এটা নিয়ে ঘাটাচ্ছে, তত নিজেদের খাটো করছে। বোর্ড ইজ বোর্ড, সবার ওপরে,’ বলেন সাবেক বিসিবি সভাপতি।
বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
তিনি যোগ করেন, ‘এবং যেটা দেখেন আমার কাছে সবচেয়ে খারাপ লাগছে, এটা কিন্তু রেগুলার ইস্যু হয়ে যাচ্ছে। সব ক্ষেত্রে এটা হওয়া উচিত না। বোর্ডের সাকিবের সঙ্গে বসা উচিত, সাকিবেরও বোর্ডের সঙ্গে বসা উচিত। আমাদের ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হবে, তবে গঠনমূলক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এগুলো তো আসলে আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত না, বোর্ডের হ্যান্ডলিংটা ঠিক হচ্ছে না বলেই কিন্তু এগুলো আলোচনায় চলে আসছে। ম্যানেজমেন্টের একটা বিষয় আছে, এখানে কিন্তু বোর্ড আবারও ব্যর্থতার একটা পরিচয় দিচ্ছে।’
সাবেক বিসিবি পরিচালক জামিল উদ্দিনের মতে, চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়ের উচিত জাতীয় দলকেই প্রাধান্য দেওয়া। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যারা চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়, তারা জাতীয় দলকে যে কোনো পরিস্থিতিতে রিপ্রেজেন্ট করবে। টি-টোয়েন্টিতে তো আপনি একা খেলবেন না, পুরো জাতীয় দলই তো খেলবে। সুতরাং আমার মনে হয় না যে এটা খুব ভালো যুক্তি যে টি-টোয়েন্টিতে খেলার জন্য আমি টেস্ট খেললাম না। যেখানে টেস্টে আমাদের অবস্থা শোচনীয়। তাকে সেখানে দলে না পাওয়াটা তো অপূরণীয় ক্ষতি।’
তবে ভিন্ন মত সাবেরের। তিনি বলছেন, এটি বোর্ডের ভালো পরিকল্পনা নয়, যে একজন খেলোয়াড়ের ওপর দল এতটা নির্ভরশীল।
‘ক্রিকেট তো একটা ওয়ান-ম্যান শো না। এটা একটা টিম স্পোর্ট। সবাইকেই অবদান রাখতে হবে। আমি যদি বোর্ডে হতাম, আমাকে দেখতে হবে যে সাকিব ছাড়া আমার টিমের শক্তিটা কী? একজনের ওপর আমি নির্ভর করব, সে যদি না যায় সেটা খুব ভালো পরিকল্পনা না। একজনের দিকে যদি আমি সব সময় থাকি যে সে আমাকে সব সময় রক্ষা করবে, তাহলে সেটা আমার দলের জন্য ভালো না’, বলেন তিনি।
শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য বাংলাদেশ দল রওনা দেওয়ার কথা ১২ এপ্রিল। আইপিএল শুরু হবে ৯ এপ্রিল। সেই আইপিএল প্রস্তুতির জন্য সাকিব দেশে ফিরছেন মঙ্গলবার। আকরাম সাকিবের অনাপত্তিপত্র পুনর্বিবেচনার কথা বললেও, সেটি হবে কিনা, এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি কিছু।