দুই পরাক্রমশালী দলের লড়াই জমল না। পাঁচ দিন দূরের কথা, দুই দিন পুরো খেলার আগেই জয় পেয়ে গেল ভারত। চার টেস্টের সিরিজে ১-২ এ পিছিয়ে গেল সফরকারী ইংল্যান্ড।
গোলাপী বলে কঠিন পিচ রান করতে ঘাম ঝরিয়েছে ব্যাটসম্যানদের। দেড়শ রানও হয়নি কোনো ইনিংসে।
প্রথম ইনিংসে প্রথম দিন ইংল্যান্ডকে ১১২ রানে গুটিয়ে তিন উইকেটে ৯৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে ভারত।
স্বাগতিকরা ভেবেছিল বড় ইনিংসে লিড নিয়ে সফরকারীদের চাপে ফেলা যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি। লাঞ্চের আগেই আগের দিনের সঙ্গে ৪৬ রান যোগ করেই ফিরে যান সাত ব্যাটসম্যান।
পিচের রহস্য ভেদ করতে না পারা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে উজ্জ্বল ছিলেন দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৬২ রান করা রোহিত শর্মা।
প্রথম দিন তিনি যেভাবে স্বাচ্ছন্দে ব্যাটিং করেছেন, দ্বিতীয় দিনে তার ছিটেফোটাও দেখা যায়নি। ৬৭ রানে তিনি পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরে যাওয়ার পর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ভারত।
প্রথম দিন রোহিতের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করা কোহলির ২৭ ই ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান হয়ে থাকে। রবিচন্দ্রন আশউইনের ১৭ রানই মূলত দ্বিতীয় দিন প্রথম ইনিংসে ভারতের সর্বোচ্চ সাফল্য।
প্রথম দিন দুই উইকেট নেয়া ইংলিশ স্পিনার জ্যাক লিচ দ্বিতীয় দিন নিয়েছেন আরও দুটি উইকেট।
তবে বিস্ময় জাগিয়েছেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন জো রুট। মাঝেমধ্যে টেস্টে হাত ঘুরিয়ে বোলারদের প্যাভিলিয়ন বদলাতে সহায়তা করা বা তাদের সামান্য বিশ্রাম দেয়ার কাজ করা রুট হয়ে গেছেন ভারতের মূল হন্তারক।
ছয় ওভার দুই বল হাত ঘুরিয়ে আট রানে তার পাঁচ উইকেট শিকার বহুকাল স্মৃতি হয়ে থাকবে।
প্রথম ইনিংসে ভারতের লিড ৩৩ রান। উইকেটের আচরণ রহস্যজনক। একটি বা দুটি ভালো জুটি গড়লেই চাপে পড়বে স্বাগতিকরা। এই স্বপ্ন নিয়ে ইংলিশরা মাঠে নামার পর প্রথম ইনিংসের সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারি আক্সার প্যাটেল এবারও নেন পাঁচ উইকেট।
আশউইনের ঘুর্ণিতে প্যাভিলিয়নে ফেরেন চার ইংলিশ ব্যাটসম্যান। ওয়াশিংটন সুন্দর নেন অপর উইকেট।
তিন স্পিনার ছাড়া দুই পেইসার ইশান্ত শর্মা ও জাসপ্রিত বোমরা একটি বলও করেননি দ্বিতীয় ইনিংসে।
ভারতের সামনে লক্ষ্যটা ছিল পুঁচকে। ৪৯ রানের লক্ষ্যে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা আর শুভমান গিল ব্যাটিং করেছেন টি টোয়েন্টি স্টাইলে। ৭.৪ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় কোহলি বাহিনী।
দুই ইনিংস মিলিয়ে ১১ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভারতের স্পিনার আক্সার প্যাটেল।
এ জয়ে একটা ছোট্ট রেকর্ড বুকেও ঢুকে গেছে ভারতের নাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বলের হিসেবে সবচেয়ে কম বল খেলে টেস্টে জয় দেখেছে ভারত। মাত্র ৮৪২ বলের ম্যাচ দেখল বিশ্ব।
এর আগে এই রেকর্ডটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার দখলে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৪৫ সালে মাত্র ৮৭২ বলে টেস্ট জিতেছিল অজিরা। ১৯৯৯ সালে ৮৮৩ বলে সাউথ আফ্রিকাকে হারায় ইংল্যান্ড। আর ২০০২ সালে ৮৯৩ বলে শারজায় পাকিস্তানকে হারায় অস্ট্রেলিয়ান।
ভারত বনাম ইংল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় টেস্ট দুই দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচ জিতে যেমন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেল ভারত, তেমনি সিরিজ জয়ের ব্যাপারটাও অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেল।
সিরিজের চতুর্থ ও শেষ ম্যাচটি একই ভেন্যুতে আগামী ৪ মার্চ ভারতের মুখোমুখি ইংল্যান্ড।