এমনটি হবে দিনের শুরুতে হয়ত কেউ ভাবেনি।
ঢাকার ক্রিকেট কিংবা ফুটবল, যে কোনোটিতেই আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ মানেই উত্তাপ। ১৯৯৮ সালের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দুই দলের ম্যাচ ছিল ২০ ফেব্রুয়ারি। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ম্যাচ, বাঁহাতি স্পিনার সাইফুল্লাহ খানের বোলিংয়ে শর্ট লেগে ফিল্ডিং করতে দাঁড়ান রমন লাম্বা। ব্যাটিংয়ে মেহরাব হোসেন অপি।
লাম্বাকে হেলমেট নিতে বলা হলে লাম্বা বললেন, দুয়েক বলের ব্যাপার, লাগবে না। অথচ সেই এক বলেই কী বিপদ হবে, সেটি যদি লাম্বা জানতেন!
শর্ট বল দেখেই পুল করলেন অপি, সেই বল গিয়ে লাগলো লাম্বার বাঁ কানের পাশে। হাওয়ায় ভেসে ওঠা বল লুফে নিলেন আবাহনীর উইকেটকিপার ও অধিনায়ক খালেদ মাসুদ। উদযাপন করতে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া লাম্বার দিকে ফিরে এলেন।
লাম্বা নিজেই হেঁটে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। খুব বেশি কিছু হয়েছে, এমনটি ভাবেনি কেউই। ক্লাব ডাক্তারের কাধে ভর দিয়ে মাঠ ছাড়েন। এরপর তাকে ভর্তি করা হয় ডেল্টা ক্লিনিকে। সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসপাতালে। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয়নি।
তিন দিন সংজ্ঞাহীন থাকার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন লাম্বা। ২৩ ফেব্রুয়ারিতে, যার ২৩ বছর আজ।
ক্রিকেট মাঠে মৃত্যুতে লাম্বা অবশ্য একমাত্র নন। ২০১৪ সালে শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে শন অ্যাবটের বাউন্সার মাথার পেছনে আঘাত হানে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ফিল হিউজের। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনিও।
লাম্বাকে আঘাত করা শট খেলা মেহরাব হোসেনের কাছে ব্যাপারটি দুর্ভাগ্যজনক। কখনও ভাবেননি, এমনটি হবে।
‘আমরা কেউই কখনও ভাবিনি আঘাত লাগা থেকে এত বড় কিছু হয়ে যেতে পারে। পরবর্তীতে ব্রেন হ্যামারেজের মত হয়েছে। খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে আমার শটেই এমন হয়েছে’, বলেন মেহরাব।
তিনি যোগ করেন, ‘এই ঘটনা প্রমাণ করে, খেলোয়াড়দের নিজের সুরক্ষা সবার আগে প্রয়োজন। অপি বলেন, ‘ওটা একটা দুর্ঘটনা ছিল যেটায় কারও কিছু করার ছিল না। একটা মেসেজ এখানে আসে যে যেকোনো খেলায় সবার আগে নিজের সুরক্ষা। এই ঘটনার মধ্য দিয়েই কিন্তু সারা বিশ্বে এই বার্তাটা গিয়েছে।’
প্রায় নয় বছর ঢাকার ক্রিকেট খেলেছেন লাম্বা। ছিলেন ঢাকা লিগের বিদেশি তারকা। তার এই দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির ২৩ বছর হয়ে গেলেও তার স্মরণে করা হয়নি কিছুই। না কিছু করেছে আবাহনী। না কিছু করেছে ক্রিকেট বোর্ড। কথা ছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের একটি প্রান্ত তার নামে নামকরণ করার। সেই স্টেডিয়াম থেকে ক্রিকেটই বিলুপ্ত এখন।
মেহরাবের মতে লাম্বা ভিনদেশি ছিলেন বলেই হয়তো এই অবস্থা। বলেন, ‘হয়ত তিনি বাংলাদেশি ছিলেন না বলেই এমনটা হয়েছে। হলে ভালো হত।’
লম্বা চুলের লাম্বা চলে গেছেন তার ২৩ বছর পার হয়ে গেছে। এখন অবশ্য আর কেউ এক বলের জন্য হলেও ক্লোজ-ইনে হেলমেট ছাড়া দাঁড়ান না।
লাম্বারা এভাবে স্মৃতি ও স্মারক হয়ে থাকেন সব সময়। তারা ফিরে আসেন না। ফিল হিউজ, রমন লাম্বা, তাদের কথা স্মৃতিতে আটকে থাকে। সেটি মলিন হয়। ওপারলোকের মায়া কাটিয়ে এপাড়ে তারা ফিরে আসেন না।