বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে

  •    
  • ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২১:৫২

একজন পেরেছেন, আরেকজন পারেননি। একজন হয়েছেন দেশের সর্বকালের সেরা পেইসার, আরেকজন অনন্ত আক্ষেপের নাম। দুজনের পথের কাটাও ছিল একই, চোট। একজন সেটিতে বারবার আঘাত পেয়েও ফিরে এসেছেন, আরেকজন শেষ পর্যন্ত পারেননি।

২০০১ সালের কথা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অনুরোধের ঢেঁকি গিলে বাংলাদেশের উদীয়মান পেইসারদের ঢাকায় দুই সপ্তাহের ক্যাম্প করাতে আসেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তি অ্যান্ডি রবার্টস।

সেই ক্যাম্পে ছিলেন মাশরাফি মোর্ত্তজা ও তালহা জুবায়ের। ক্যাম্পের শুরুতেই রবার্টস সব বোলারকে একটি করে নতুন বল দিলেন। জানিয়ে দিলেন, দুই সপ্তাহ পর দেখবেন বলের কী অবস্থা।

দুই সপ্তাহ পর দেখা গেল, বাকি সবার বল প্রায় পুরোটাই সবুজ। মাশরাফির শুধু সিমটুকু সবুজ, তালহারও প্রায় তাই। বিকেএসপির ঘাসের উইকেটে বল যেখানে পড়ে সেখানে দাগ পড়ে যায় ঘাসের। তাতে প্রমাণ মেলে মাশরাফি ও তালহার নিয়ন্ত্রণে সিম। রবার্টসও বললেন, এমনটিই চাচ্ছিলেন তিনি।

রবার্টস সেই ক্যাম্প শেষে বিসিবিকে অনুরোধ জানিয়ে গিয়েছিলেন এই দুজনকে চোখে চোখে রাখতে। সেই রবার্টসকে আজও মনে পড়ে তালহার।

সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে ‘লেজেন্ডস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি’ খেলতে কক্সবাজারে এসে তাই আক্ষেপ ঝড়ে তালহার কণ্ঠে। নতুন বলে এখনও সামান্য সুইং পান। শরীর সায় দেয় না কিন্তু চেষ্টা করেন। মার খেয়ে রেগেও যান। আফসোস করে বলেন রবার্টসের কথা। বলেন মাশরাফি ও তার কথা।

‘অ্যান্ডি রবার্টসকে অবশ্যই মনে পড়ে। জীবনের শুরুটা ওখান থেকেই। ঐ ক্যাম্পের পর ও আমার আর মাশরাফির কথাই বলে গিয়েছিল। আমাদের দুজনের দিকে খেয়াল রাখার জন্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার হয়নি, মাশরাফির হয়েছে। আমার ইনজুরিগুলো সাপোর্ট করেনি আমাকে। ওই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে অনেক কষ্ট লাগে’, বলেন তালহা।

হ্যাঁ, মাশরাফির হয়েছে। তালহার হয়নি।

একজন পেরেছেন, আরেকজন পারেননি। একজন হয়েছেন দেশের সর্বকালের সেরা পেইসার। আরেকজন অনন্ত আক্ষেপের নাম। দুজনের পথের কাঁটাও ছিল এক। চোট। একজন সেটিতে বারবার ছিটকে যেয়েও ফিরে এসেছেন। আরেকজন পারেননি।

দুজনের পথের মিলটা দেখুন! তালহার টেস্ট অভিষেক ২০০২ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে। কার বদলে? চোটে ছিটকে যাওয়া মাশরাফির!

অথচ দুজনের একসঙ্গে হওয়ার কথা ছিল কত কিছু! নতুন বলে সুইংয়ের সঙ্গে গতির মিশেলে পেইসার খরার দেশে মরুদ্যান হয়ে থাকতে পারতেন দুজনে। অথচ দুজনে একসঙ্গে খেলেছেন এমন ম্যাচ মাত্র একটি।

ভারতের বিপক্ষে সেই টেস্টে উইকেট পাননি তালহা। মাশরাফি ভারতের একমাত্র ইনিংসে তিন উইকেট পেয়েছিলেন। সেই ম্যাচ স্মরণীয় অবশ্য মোহাম্মদ আশরাফুলের ১৫৮ রানের ইনিংসের জন্য। সেটির সাহায্যে ফলো অন অবশ্য এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।

চেন্নাইয়ের এমআরএফ পেইস ফাউন্ডেশনে গিয়ে অ্যাকশন শুধরে আসেন মাশরাফি। পুরনো অ্যাকশনে চোটে পড়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। তাই এই পরিবর্তন।

তালহারও সমস্যা ছিল অ্যাকশনে। কিন্তু সেটি ঠিক করা হয়নি। তালহা জানান, চোটের ব্যাপারে সাহায্যও পাননি তেমন।

‘অ্যাকশনের সমস্যা ছিল। আমার মিক্সড অ্যাকশন ছিল। এই ইনজুরি নিয়ে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের কাছ থেকে সাহায্য পাইনি। পাইনি ট্রিটমেন্ট বা গাইডলাইন। নিজের খরচে করিয়েছি। ওটা যথেষ্ট ছিল না’, তালহার আক্ষেপ।

তালহার আক্ষেপ শুধু সেখানেই নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে পেইসাররা এক এক জন একাকী যোদ্ধা নিঃসঙ্গ শেরপা। সর্বশেষ উদাহরণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ। দুই টেস্টেই একাদশে ছিলেন মাত্র একজন করে পেইসার। প্রথম টেস্টে মুস্তাফিজুর রহমান। দ্বিতীয় টেস্টে আবু জায়েদ রাহি।

বাংলাদেশের উইকেট সাধারণত হয়ে থাকে স্পিন বান্ধব। পেইসারদের জন্য সেখানে সাহায্য সামান্য। জোরে বল করেও বল যথেষ্ট বাউন্স পাওয়া যায়, এখানেই তালহার হতাশা।

‘অনেক পেসার আগেও ছিল। এখনো আছে ভবিষ্যতেও আসবে। আপনি যদি উইকেট না দেন তাহলে আমরা কোথায় বোলিং করব? এত ফ্ল্যাট উইকেটে খেললে আসলে ঐ গতিটা থাকেনা। শরীরও সহায়তা করেনা। পেইস বোলিং অনেক কষ্টের ব্যাপার। এত দূর থেকে দৌড়ে আসবেন কিন্তু দেখলেন বল হাঁটুর উপরে উঠছেনা। কিপার পর্যন্ত বল পৌছাচ্ছে না। এটা দেখে হতাশ হয়ে যায় বোলাররা। ছন্দও নষ্ট হয়ে যায়’, তালহার অভিযোগ।

নিজের ক্যারিয়ারের উদাহরণ টেনে এনে তালহা বলেন, ‘সাউথ আফ্রিকা থেকে দেড় মাসের সফর শেষে দেশে ফিরে আবাহনী মাঠে টানা অনেকদিন উইকেটকিপার ৩০ গজ দূরে রেখে বল করেছি। যত সময় গেছে ছন্দ নষ্ট হতে হতে কিপার আবার ১৫ গজের মধ্যে চলে এসেছে।

‘আমি বলছিনা সাউথ আফ্রিকার মত উইকেট বানাতে। কিন্তু অন্তত পেস বোলারদের বলটা যেন ক্যারি করে। তাতে ভালো বল হবে। ব্যাটসম্যানকেও কোয়ালিটি বল বেশি খেলতে হবে। এখন স্পিনে ভালো। তখন পেসেও ভালো হবে’, উপায় বাতলান তালহা।

তালহার ক্যারিয়ার টিকেছে তিন বছর। ২০০২ সালে অভিষেক, ২০০৪ সালে ইতি। টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে ১৩ ম্যাচ। সেখানে উইকেট মাত্র ২০টি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৭৩ ম্যাচ খেলে ২২২ উইকেট নেওয়া তালহা হয়ে গেছেন আক্ষেপের নাম।

অ্যান্ডি রবার্টসের ক্যাম্পে পরিচয় হওয়া দুই উদীয়মান পেইসারের ক্যারিয়ারের গতিপথের শুরুটা ছিল অভিন্ন। চোট, ধাক্কা, এরপর আবার ফিরে আসার চেষ্টা। শেষ পর্যন্ত দুজনের পথ চলে গেছে ভিন্ন দুই দিকে।

মাশরাফি যখন তাই দেশের ক্রিকেটের সর্বকালের সেরাদের একজন হয়ে ক্যারিয়ারের ক্রান্তিলগ্নে, তাকে দলে নেওয়া হচ্ছে না কেনো সেই প্রশ্ন আসে।

তালহা হয়ে থাকেন হতাশার নাম। হয়ে থাকেন সাবেক। তালহা জুবায়ের হয়ে থাকেন বাংলাদেশের, আরেক জন হতে পারত দারুণ ক্রিকেটার।

এ বিভাগের আরো খবর