কক্সবাজারের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামটা ঠিক আধুনিক নয়। বরঞ্চ ঝাউবনে ঘেরা স্টেডিয়ামে ঢুকলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কথাই মাথায় ভাসে। প্রেসবক্সে পানি পড়ছে এয়ার কন্ডিশনার থেকে, সেই পানি ফ্লোরে পড়া থেকে আটকে রাখছে একটি বালতি। দুই মাঠের মধ্যে কেবল একটিতেই ছোট্ট একটা গ্যালারি রয়েছে।
এয়ারপোর্টের পাশের এই মাঠে ফ্লাডলাইট লাগানোর উপায় নেই। তাই খেলা যা হয়, সব দিনের বেলায়।
সেই দিনের আলো ছাপিয়ে শেখ কামাল স্টেডিয়ামের মাঠ নিজের আলোয় উদ্ভাসিত করলেন মোহাম্মদ রফিক। বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম কিংবদন্তি বলা হয় তাকে, প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে লাল বলে শিকার করেছিলেন ১০০ উইকেট।
তবে নতুন প্রজন্মের কাছে সে সব যতখানি নিজ চোখে স্বাদ নেয়া বাস্তবতা, তার চেয়ে বরং বেশি গল্প। রফিক অবসর নিয়েছেন ২০০৮ সালে, সেই ম্যাচেই নিয়েছিলেন শততম উইকেট। তবে আজ টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলে হয়ত তারাও বুঝতে পারত, রফিক কে ছিলেন।
অবসর নেয়ার এক যুগেরও পরে এসে ৫০ বছর বয়সে দিনটা নিজের করে নিলেন, তাও প্রবল প্রতাপে। লিজেন্ডস চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে মাঠে নেমেছিলেন নিজের সাবেক সতীর্থদের সঙ্গে একমি স্ট্রাইকার্সের হয়ে। বিপক্ষেও ছিলেন সতীর্থরাই।
একমি স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। যার অধীনে জাতীয় দলেও খেলেছেন রফিক।
পাইলট হয়ত জানতেন, রফিক আসলে কী পারেন। অবশ্য পাইলট কেন, রফিকের ক্ষমতা তো তাকে সরাসরি দেখা যে কেউই জানেন!
দিনের প্রথম ম্যাচে জেমকন টাইটান্সের বিপক্ষে তাই রফিক ব্যাটিংয়ে এলেন তিন নম্বরে। বাংলাদেশ তার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের পরিচয় পেয়েছে বহুবার, সেটি দেখা গেল বৃহস্পতিবারেও। ৭০ বলের ম্যাচে খেললেন ১৩ বল, তাতে তিন ছক্কায় ২২।
লিজেন্ডস চ্যাম্পিয়নস ট্রফির নিয়ম খানিকটা ভিন্ন। দশ ওভারের ম্যাচের সঙ্গে বাড়তি ১০ বল, যেটি আরেক ওভার হিসেবে হিসাব হয়। বোলিংয়ে এসে নিজের কোটার দুই ওভার তো করলেনই রফিক, সঙ্গে বাড়তি ১০ বলের ওভারটিও করলেন। সেই ২২ বলে রান দিলেন মাত্র ১০ রান, তুলে নিলেন দুই উইকেট।
তার কিপটে বোলিংয়ে স্ট্রাইকার্সের বেঁধে দেওয়া ১১২ রান থেকে ১৮ রান দূরে থামলো টাইটান্স।
দ্বিতীয় ম্যাচেও তিন নম্বরে নামলেন। এবার অবশ্য আগের ম্যাচে চার না মারার হিসাব মেটালেন চারটি চার মেরে, সঙ্গে একটি ছয়, তাতে ১৭ বলে ২৯। পরে বল হাতে এক উইকেট। তাতে দলও জয় পেল ৩৮ রানের বড় ব্যবধানে।
প্রথম ম্যাচে বোলিংয়ে যে ঘূর্ণির জাল বিছালেন, তার পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রফিক অবশ্য বরাবরের মতই সোজাসাপ্টা। এমন বোলিংয়ের রহস্য কী- উত্তর, কোনো রহস্যই নেই!
‘রহস্যের কিছু নেই। এখানের সবার সঙ্গে খেলেছি। তাই জানি কার কী উইক পয়েন্ট। আমি কী করি ওরা জানে, ওরা কী করে আমি জানি। সুতরাং প্রতিবছর এখানে যে একটা মিলনমেলা হয়, সেটাই কিন্তু বড় পাওনা’, বলেন রফিক।
সব সময় মাঠে থাকতে চান, এমন প্রত্যাশাও রাখলেন তিনি। বললেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি এখনও মাঠে আছি, আলহামদুলিল্লাহ্! আল্লাহ্ আমাকে সুস্থ রাখছেন। যারা আমার দর্শক, দেশপ্রেমিক আছেন, ক্রিকেট পছন্দ করেন, তারা সবসময়ই আমাকে পছন্দ করেন। আমি ইনশাআল্লাহ্ সবসময় মাঠে থাকতে চাই।’
বৃহস্পতিবার দুই ম্যাচ খেলে ফেলায় শুক্রবারে রফিকদের খেলা মাত্র একটি। দুই ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালের পথে এক পা দিয়েই রেখেছেন তারা। চিরকালের পারফর্মার রফিক নিশ্চয়ই চাইবেন, সব ম্যাচ জিতে টুর্নামেন্টের সঙ্গে সিরিজ সেরাও হতে!