ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হারার পর গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বলেছিলেন, কোচ-অধিনায়কসহ সবার কাছেই জবাব চাইবেন তিনি।
সেই লক্ষ্যে নির্বাচক, বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে ও তিন সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের টিকাদান কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে গণমাধ্যমকে পাপন জানালেন, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে ভালো খেলা বাংলাদেশ কেনো টেস্টে পারছে না, সেই সমস্যাটিই খুঁজছেন তিনি। নির্বাচক, বোর্ড পরিচালক, খেলোয়াড়- সবার সঙ্গে বৈঠকের কারণ ছিল এটিই।
‘বাংলাদেশ দলের যে খেলা দেখেছি আফগানিস্তানের সঙ্গে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টে, এই খেলা বাংলাদেশ দলের খেলা মনে হয় না। কারণ এরাই যখন ওয়ানডে খেলছে, টি-টোয়েন্টি খেলছে, তখন পুরোপুরি আলাদা। তখন তারা ভালো খেলছে। তাহলে টেস্টে সমস্যা কোথায়? ওদের সঙ্গে বসার এটাই পেছনে কারণ ছিল, প্রত্যেকের কাছ থেকে শুনতে চাচ্ছি, সমস্যাটা কোথায় বলে মনে করে।’
বৈঠক নিয়ে সন্তুষ্ট বিসিবি সভাপতি। জানান, সমস্যা নিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ একমত দুই পক্ষই।
পাপন বলেন, ‘আমি খুশি যে ওরা যেটা বলছে এবং আমাদের ধারণা যেটা ছিল যে সমস্যা কোথায়, বেশির ভাগই মিলে যাচ্ছে। ৯০ শতাংশই মিলে যাচ্ছে। আজকে কোচিং স্টাফদের সঙ্গে সভা আছে। ওদেরকেও জিজ্ঞেস করব সমস্যা কোথায়। এরপর আমরা ওদেরকে বলব সামনের দিনগুলোয় কী করতে হবে।’
বিসিবি সভাপতি মনে করছেন, সমস্যা কোথায় না জানলেও এখন যে পদ্ধতিতে এগুচ্ছেন, সেটিই সঠিক।
পাপন জানান, খালেদ মাহমুদ সুজন দলের ম্যানেজার থাকায় বোর্ড ও দলের মধ্যে যোগাযোগে ঘাটতি হয়নি। তিনিই ছিলেন দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম। যেখানে দলের পরিকল্পনা তিনি জানতেন আগে থেকেই, এখন দল মাঠে নামার পর জানতে পারেন।
এই সমস্যার কারণ ও সমাধানও খুঁজছেন জানিয়ে পাপন বলেন, ‘(কমিউনিকেশন গ্যাপ) কেন হচ্ছে, সেটাই তো জানতে চাচ্ছি। আমিও জানতে চাচ্ছি। যাকে এটা প্রশ্ন করা হয়, কেউই বলতে পারে না। কোনো প্রশ্ন করলে উত্তর নেই।...কাজেই এখানে কিছু কমিউনিকেশন গ্যাপ আছে।
‘পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে কিছু ইস্যু আছে। এটা আগের থেকেই মনে করতাম যে প্রতিটি ভুল। কিন্তু প্রথমবার যখন আফগানিস্তানের সঙ্গে হয়েছে, সবাই ধরে নিয়েছিল এটা একটি দুর্ঘটনা। হঠাৎ হয়ে গেছে। কিন্তু এবার দুটো ম্যাচ খেলার পরে সবাই বুঝতে পারছে, দেয়ার ইজ সামথিং রং।’
তবে সমাধানের উপায় কঠিন নয় বলেও মনে করছেন পাপন। তার মতে, সবাই একমত হতে পারলেই হবে সমস্যার সমাধান।
‘আগে যদি আপনি বুঝতেই না চান, আপনি যদি মনেই না করেন যে কোনো ভুল হচ্ছে, তাহলে তো কথা বলে লাভ নেই। আমি আপনাদেরকে কেবল একটা কথাই বলতে পারি, এই সমস্যার সমাধান কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। কিন্তু সবাই যাতে সমস্যাটায় একমত হয়, তাহলেই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে। জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না। এটা কেবল সময়ের ব্যাপার। কয়েক মাসের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।’
সাম্প্রতিক অতীতও তুলে ধরে পাপন জানান, ভারতে টস জয়ের পর সিদ্ধান্ত কী হবে, সেটি তিনি জানতেন এক, মাঠে হয়েছে আরেক। এমনটা হয়েছে বিশ্বকাপ ও সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে। কেনো হচ্ছে, তার উত্তরই চাই পাপনের।
‘আমাকে যেটা বলা হয়, সেটা হয়নি। এত কথা বলার দরকার নেই। আপনারা কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে চাচ্ছেন। আমি তো দোষী সাব্যস্ত করতে আসিনি। সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছি। বলছি যখন, এটাই যথেষ্ট। আমার কথা হচ্ছে, কেন হচ্ছে, এটাই বের করতে চাচ্ছি।’