বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অনেক প্রশ্ন রেখে গেল উইন্ডিজ

  •    
  • ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২১:৩৭

প্রথম টেস্টে ভালো করা মুস্তাফিজ কেনো দ্বিতীয় টেস্টে সুযোগ পেলেন না এবং কেনো সাকিবের চোটের পর মাত্র চার নিয়মিত বোলার নিয়ে খেললো বাংলাদেশ, এমন প্রশ্নেরও উত্তর নেই।

এমনটি হবে, সেটি কারও সুদূর ভাবনায়ও ছিল না। বরঞ্চ ১২ জন নিয়মিত খেলোয়াড় ছাড়া বাংলাদেশ সফরে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কত দ্রুত হারাবে বাংলাদেশ, বিস্তর আলোচনা হয় তা নিয়ে।

পাশার দান উল্টে গেল সিরিজ শেষ হতে হতে। প্রথম টেস্টে তবু সান্ত্বনা ছিল, কাইল মেয়ার্সের ‘ওয়ান্স ইন আ লাইফটাইম’ ইনিংসের কাছে হারতে হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে একদম নাস্তানাবুদই করে ছেড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয় ইনিংস বাদে বাকি ম্যাচজুড়ে এগিয়ে ছিল তারা।

২০১২-১৩ মৌসুমের পর প্রথম বারের মত ঘরের মাটিতে দুই বা তার বেশি টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশ হারে সবকটি ম্যাচ। এমন এক সিরিজের পর তাই সব দিকে থেকে ছুটে আসছে সমালোচনার তীর। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান তো বলেই দিয়েছেন, কোচ, অধিনায়কসহ সবার কাছে জবাব চাইবেন তিনি।

সিরিজ জুড়েই বাংলাদেশ দলে দেখা গিয়েছে অব্যবস্থাপনা। প্রথম টেস্টে দলে ছিলেন চার স্পিনার। কিন্তু পিচে স্পিনারদের জন্য তেমন কিছু ছিল না। দ্বিতীয় টেস্টে স্কোয়াডের বাইরে থেকে দলে নেওয়া হলো সৌম্য সরকারকে। যিনি চার দিন আগেও সাদা বলে অনুশীলন করেছেন। ব্যাকআপ ওপেনার সাইফ হাসানকে টপকে তিনিই ঢুকে গেলেন একাদশে। এমন নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েই ক্যারিবিয়ানদের বিদায় জানায় বাংলাদেশ।

প্রস্তুতি কোথায়?

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে বাংলাদেশ দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই লাল বলের কোনো ম্যাচ খেলেননি। অদ্ভুত হলেও সত্য, গত ফেব্রুয়ারিতে খেলা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা টেস্টই ছিল টাইগারদের শেষ লাল বলের প্রস্তুতি।

আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর আগে সফর করেছে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে চট্টগ্রামে প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছেন তারা। সেই প্রস্তুতি ম্যাচের দলে ছিলেন পরবর্তীতে একাদশে সুযোগ পাওয়া কেবলমাত্র সাদমান ইসলাম।

পুরো সিরিজে বাংলাদেশ খেলোয়াড়দের টেস্ট মানসিকতার অভাবের কারণ হিসেবে তাই সবার আগে আসছে এই প্রস্তুতির অভাবই। সফরকারীরা যখন প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছেন তখন খেলতে পারতো বাংলাদেশও। অথচ, সেটি হয়নি।

কেনো হয়নি, সেই প্রশ্নের জবাব এসেছে বায়ো বাবলে খেলোয়াড়দের দীর্ঘ সময়ে থাকা নিয়ে। সিরিজের আগে না করে বরং ওয়ানডে ও টেস্টের মধ্যে করলে যে সমস্যা হতো না, সে বিষয়ে উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

একাদশ বিড়ম্বনা

একাদশ নিয়েও নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজমেন্ট। প্রথম টেস্টের আগে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো জানালেন, এমন পিচে পেইসার খেলানো মুশকিল। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসের প্রথম দুই উইকেট পেইসার মুস্তাফিজুর রহমানের!

একাদশ নিয়ে অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার আরও দেখা গেলো দ্বিতীয় টেস্টের আগে। সাকিব আল হাসান চোটে পড়ে বাদ পড়ায় তার বদলে অধিনায়ক মুমিনুল হক বলেছিলেন এক জন বোলার ও এক জন ব্যাটসম্যানকে নেওয়া হবে। কিন্তু একাদশে তার বদলে এলেন মোহাম্মদ মিঠুন। যিনি আদতে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান!

সাকিবের বদলি নিয়ে আরেক কাণ্ড অবশ্য ঘটানো হয়েছিল আগে। তার বদলি হিসেবে প্রাথমিক স্কোয়াডের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয় সৌম্য সরকারকে। যিনি শেষ বার টেস্ট খেলেছেন ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। সাদমান চোটে পড়ে ছিটকে গেলে তার বদলি হিসেবে খেলানোও হয় সৌম্যকে। অথচ স্কোয়াডে ছিলেন ব্যাকআপ ওপেনার সাইফ হাসান!

প্রথম টেস্টে ভালো করা মুস্তাফিজ কেনো দ্বিতীয় টেস্টে সুযোগ পেলেন না এবং কেনো সাকিবের চোটের পর মাত্র চার নিয়মিত বোলার নিয়ে খেললো বাংলাদেশ, এমন প্রশ্নেরও উত্তর নেই।

দ্বিতীয় টেস্টে আবু জায়েদ রাহি ছয় উইকেট নিয়েছেন, কিন্তু দলে ছিলেন না আর কোনো নিয়মিত পেইসার। ছবি: বিসিবি

সাবেক বিসিবি নির্বাচক ও বাংলাদেশ অধিনায়ক ফারুক আহমেদের মতে, বাংলাদেশ চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

‘একাদশ নির্বাচনে খুব একটা চিন্তাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমার মনে হয়নি। সবগুলো ব্যাপারই আমার কাছে মনে হয়েছে তারা ভালোভাবে চিন্তা করেনি। উইকেট, টিম কম্বিনেশন, ব্যাটিং অর্ডারে কে কোথায় খেলবে। দল নির্বাচনে আমার মনে হয় খেলোয়াড়দের সামর্থ্যের চেয়ে পছন্দ-অপছন্দ বেশি গুরুত্ব পায়’, বলেন তিনি।

তিনি যোগ করেন, ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর বাংলাদেশ হয়ত অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিল। ফারুক বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্ট্রং টিমকে আমরা হারিয়েছি। এবার সুযোগ ছিল অনভিজ্ঞ দলকে হারানোর। ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর আমরা ভেবেছি যে টেস্ট সিরিজে শুধু নিয়মরক্ষার হবে। সেটা আর হয়নি।’

বিকেএসপির ক্রিকেট পরামর্শক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতে, এমন ফলের কারণ বাংলাদেশের নিজেদের মত খেলতে না পারা। অনভিজ্ঞ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে বাংলাদেশ অবমূল্যায়ন করেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা তো করেছেই অবশ্যই। এই দল যে শক্তিশালী তেমন না, আমাদের লেভেলে খেলতে পারিনি বলে এমন হয়েছে। আসলে ওরা এতটা ভালো দল না,’ বলেন তিনি।

স্পিন বিষে ঘায়েল করতে গিয়ে নিজেরাই ঘায়েল আর কত?

ঘরের মাঠে স্পিনারদের সহায়তা করে এমন পিচ বানানোর পরিকল্পনা বাংলাদেশ শুরু করে ২০১৬ সালের ইংল্যান্ড সিরিজে। সেবার সফলতাও এসেছিল, ইংল্যান্ডকে প্রথম বারের মত টেস্টে হারিয়েছিল টাইগাররা। এই ফর্মুলাতেই পরে তারা ঘরের মাঠে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

এই পরিকল্পনা বুমেরাং হয়ে আসে ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে। সেই টেস্টে আফগান স্পিনারদের দৌরাত্ম্যে ২২৪ রানের বিরাট পরাজয় মেনে নিতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার সেটি আবার হলো ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে। রাখিম কর্নওয়ালের ১৪ উইকেট ছিল সিরিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হওয়ার বড় কারণ।

তবে কি বাংলাদেশের সময় এসেছে স্পিন সহায়ক পিচ থেকে সরে দাঁড়ানোর? এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, এতদিন পেইসারদের তুলনায় স্পিনাররা সফল হওয়াতেই স্পিন সহায়ক পিচ ছিল।

‘বোলারদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে আমাদের স্পিনাররা ভালো ছিল এতদিন। পেইস বোলিংয়ে তেমন শক্তি আমাদের ছিল না। মাঝেমধ্যে দেখেছি পেইস বোলাররা আসছে কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক ওরা এগুতে পারেনি। যে কারণে স্পিনারদের প্রাধান্য ছিল এবং আমরা স্পিনিং উইকেটের সাহায্য নিয়েছি।

‘এখন সিচুয়েশন যেরকম যে আমরা ওই মানের স্পিন বোলিং দেখছি না বোলারদের কাছে। সাকিব না থাকায় আমাদের স্পিন আক্রমণটা আরও দুর্বল মনে হচ্ছে। যে তিন জন ঢাকায় খেলল, তারা তিন জনই যে খুব মানসম্পন্ন স্পিনার তা কিন্তু না। এখন আমাদের হাতে যে পেইসাররা আছে, তাদের যদি পাশাপাশি দাড় করাই, তাহলে খুব বেশি পার্থক্য হবে তা না। সে কারণেই আমাদের সামনে সুযোগ ছিল আমরা দুজন স্পিনার ও দুজন পেইসার নিতাম তাহলে আমাদের আক্রমণটা আরও ভালো হত’, বলেন ফাহিম।

সঙ্গে বিকেএসপির ক্রিকেট পরামর্শক যোগ করেন, সব দেশই এখন কাজ করছে উপমহাদেশে এসে স্পিন খেলার বিষয়ে।

রাখিম কর্নওয়ালের ১৪ উইকেট ছিল টেস্ট সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণে বড় প্রভাবক। ছবি: বিসিবি

‘এখন সব দেশই কিন্তু স্পিনার তৈরি করছে। আমরা যেমন পেইসার চাই যেন নিউজিল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকায় গিয়ে খেলতে পারি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওরাও কিন্তু চায়, স্পিনার গড়ে তুলতে যেন ওরা উপমহাদেশে এসে খেলতে পারে। সব দলেই ভালো স্পিনার, ভালো ব্যাটসম্যান আছে যারা স্পিনের বিপক্ষে ভালো। সুতরাং ঘরের মাঠের সুযোগ নেওয়ার যে ব্যাপারটি, সেটা কিন্তু পুরোপুরিভাবে নেই এখন’, বলেন তিনি।

আপাতত নিউজিল্যান্ডে পরের সফরে টেস্ট নেই বাংলাদেশদের। তবে সিরিজ হারার ক্ষোভের উদ্গিরণ ইতিমধ্যে দেখেছে ক্রিকেট। বোর্ড সভাপতি বলেছেন টেস্টের জন্য হতে হবে আলাদা দল।

মাত্রই ২০২০ সালের শুরুতে সাদা ও লাল বলের জন্য ভিন্ন চুক্তি দেয়া বিসিবির এই সিদ্ধান্ত আদৌ বাস্তবে রূপান্তরিত হবে কিনা, সেটি নিয়ে রয়েছে নানা জনের নানা মত। আপাতত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ শেষে আপ্তবাক্য দ্বিতীয় টেস্ট শেষে অধিনায়ক মুমিনুলের হকের সেই কথাটিই -

‘২০ বছর হয়ে গেছে। আমার মনে হয় ওইভাবে কোনো উন্নতিই হয়নি।’

এ বিভাগের আরো খবর