রূপকথার রাজা মাইডাস বর পেয়ে চেয়েছিলেন, যা কিছু ছুঁয়ে দেবেন, তাই সোনার হয়ে যাবে। চাওয়ার পর বুঝেছিলেন, কত বড় ভুল করেছেন।খাবার খেতে গিয়ে দেখলেন সবই হয়ে যাচ্ছে সোনার। না খেয়ে মরতে বসে পরে প্যাক্টোলাস নদীতে স্নান করে সেই বর ফেরত দিতে হয় মাইডাসকে।প্যাক্টোলাস নদীটা তুরস্কে। মেহেদি হাসান মিরাজ সেখানে গিয়েছেন কি না কখনও, সে কথা জানা নেই। তবে মাইডাসের গল্প শুনলে আপাতত তিনি সেই নদীর ধারেকাছে যাবেন না। কে নেবে এমন ফর্ম হারানোর ঝুঁকি!
রাজা মাইডাস কোনোভাবে মিরাজকে চিনলে অবশ্য ঈর্ষান্বিত হতেই পারেন এখন। মিরাজের এই ‘মাইডাস টাচ’ তাকে কোনো বিপদে ফেলছে না, বরং মিরাজ এটি রেখে দিতে পারলেই বর্তে যাবেন।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের ডাকনাম সাগরিকা। বঙ্গোপসাগর থেকে দূরত্বটা সামান্য, কিলোমিটার দুয়েকের মত। সেই ভেন্যুতেই মিরাজের শুরু। সেই সাগরিকাতেই ইতিহাসের সামনে মিরাজ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে প্রথম টেস্টে মিরাজ যা ছুঁয়ে দিচ্ছেন, তা-ই হয়ে যাচ্ছে ঝকমকে সোনা। প্রথম ইনিংসে যখন ব্যাট হাতে ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না দলের ‘স্পেশালিস্ট’ সব ব্যাটসম্যান, মিরাজ সেখানে সেঞ্চুরি করে দলকে ৪০০ পার করালেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে চার উইকেট। যার সুবাদে ক্যারিবীয়রা গুটিয়ে গেল ২৫৯ রানে। পরে চতুর্থ ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট পড়ল তিনটি, সবকটিই মিরাজের।
তাতে প্রথম টেস্টে চতুর্থ দিন শেষে জয়ের পথে বাংলাদেশ। তবে জয়ের সঙ্গে সঙ্গে মিরাজের সামনে ইতিহাসের পাতায়ও নাম লেখানোর সুযোগ।
চতুর্থ দিন শেষে টেস্ট ক্রিকেটে মিরাজের উইকেট সংখ্যা ৯৭। আর তিনটি পেলেই ছুঁয়ে ফেলবেন তিন অংক। সেটিও বাংলাদেশিদের মধ্যে দ্রুততম। বর্তমান রেকর্ড তাইজুল ইসলামের। সেটি ২৫ টেস্টে। সাকিব আল হাসান করেন ২৮ টেস্টে।
অন্য যে রেকর্ডের সামনে মিরাজ, সেটির অবশ্য ‘বাংলাদেশ’ সীমানাটা নেই, বরং করতে পারলে হয়ে যাবেন ক্রিকেট ইতিহাসেরই অংশ। একই টেস্টে সেঞ্চুরি আর দশ উইকেট - এই কৃতিত্ব আছে মাত্র তিন জনের।
সেই তিন জন - ইয়ান বোথাম, ইমরান খান ও সাকিব আল হসান।
সাকিবের সঙ্গে জুটি গড়েই টেস্টে শুরু। চোটের কারণে এই টেস্টে সাকিব বোলিং করতে পারেননি ঠিক করে। সাত উইকেট নিয়ে আপাতত সাকিবের অভাবটা বুঝতে দেননি মিরাজ।
পঞ্চম দিনে তিন উইকেট নিলেই মিরাজ বোথাম-ইমরান-সাকিব হয়ে যাবেন না। হয়ত, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অলরাউন্ডার থেকে স্পেশালিস্ট অফ স্পিনার বনে যাওয়া মিরাজের এই কীর্তিকে হয়ত ম্যাট্রিক্সে গ্লিচ ধরেই নেবে লোকে।
অথচ এই অর্জনটি হয়ে উঠতে পারে মিরাজের অলরাউন্ডার সত্ত্বার পুনর্জন্মের সাক্ষ্য। যে মিরাজ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন অলরাউন্ড নৈপূণ্যে, সেটি ফিরিয়ে আনার মঞ্চ।
আর কিছু না হোক, অন্তত এই বাস্তবতাটা সামনে এসে দাঁড়াবে, মিরাজ অফ-স্পিনার নন। পুরোদস্তুর এক অলরাউন্ডার।