পাঁচ উইকেটে ২৪২ রান নিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। উইকেটে ছিলেন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। দিনের তৃতীয় ওভারেই লিটনকে হারানোর পর শঙ্কা ছিল বড় সংগ্রহ না গড়তে পারার।
সেটি অবশ্য হতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন ৪৩০ রানে। এরপর তৃতীয় সেশনে মুস্তাফিজের জোড়া আঘাতে দিনটি নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
লিটনকে হারানোর পর মিরাজকে নিয়ে সাকিব গড়েন ৬৭ রানের জুটি। সেই জুটিতে ৩০০ পেরোনোর পাশাপাশি টেস্টে নিজের ২৫তম ফিফটি তুলে নেন সাকিব। কিন্তু প্রথম সেশনের খেলা শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে রাখিম কর্নওয়ালের বলে বিদায় নিলে ম্যাচে প্রথম শতকের আশা বিলীন হয়ে যায় বাংলাদেশের।
সেই আশা অবশ্য পরে পূরণ করেছেন মিরাজ নিজেই। তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানের সঙ্গে দুটি কার্যকর জুটি গড়েছেন, তাতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছাড়িয়েছে ৪০০। আর মিরাজ?
২৩তম টেস্টে এসে তিনি তুলে নিয়েছেন নিজের প্রথম শতক। এর আগে টেস্টে দুই ফিফটি থাকলেও সেঞ্চুরি ছিল না এই অলরাউন্ডারের। সেই আক্ষেপ মেটালেন ১৬০ বল খেলে।
তবে সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকলেন না মিরাজ। রানের চাকা সচল করতে কর্নওয়ালকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফেরেন ১০৩ রানে। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ৪৩০ রানে।
নিজেদের ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চিন্তা হয়তো ছিল বাংলাদেশি স্পিনারদের খেলা নিয়েই। অথচ ঘাতক হয়ে দেখা দিলেন মুস্তাফিজ।
পঞ্চম ওভারেই জন ক্যাম্পবেলকে ফাঁকি দিয়ে মুস্তাফিজের বল লাগে তার প্যাডে, কিন্তু সাড়া দেননি আম্পায়ার। বাংলাদেশ অধিনায়ক মমিনুল হক রিভিউ নেন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। তাতে দেখা যায়, আউট ছিলেন ক্যাম্পবেল, সিদ্ধান্ত বদলাতে হয় আম্পায়ারকে।
পরের বলেই শেন মোসলিকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি, বেঁচে যান বাংলাদেশের একটি রিভিউ থেকেই। ১১তম ওভারে মোসলির পায়ে বল আঘাত হানার পর আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাট ছুঁয়ে গিয়েছিল বলটি। তাতে বাংলাদেশকে হারাতে হয় রিভিউও।
তবে মোসলির বিদায়ঘণ্টা বাজে পরের বলেই। মুস্তাফিজের দারুণ এক ইয়র্কারে সময়মত ব্যাট নামাতে পারেননি মোসলি, এবার আম্পায়ার আউট দিলে রিভিউ নেন তিনি নিজেই। রিভিউয়ে দেখা যায়, না নিলেই বরং ভালো করতেন।
বাকি দিনে বাংলাদেশ স্পিনাররা উইকেট নিতে পারেননি আর কোনো। বরং কপালে ভাঁজ যোগ হয়েছে দুটি কারণে।
যে কুঁচকির চোটের কারণে সাকিবের প্রথম টেস্ট খেলা নিয়ে ছিল সন্দেহ, সেটি দেখা দিয়েছে আবার। সেই চোটের জন্যই মাঠ ছাড়তে হয় সাকিবকে।
মাঠ ছাড়তে হয় সাদমান ইসলামকেও। শর্ট লেগে ফিল্ডিং করার সময় বলের আঘাতে গোড়ালিতে চোট পান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দলের চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণের পর তিনিও ওঠে যান মাঠ থেকে।
শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় দিন শেষ করে দুই উইকেটে ৭৫ রানে। ৪৯ রানে অপরাজিত আছেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েইট।
আপাতত দ্বিতীয় দিনটি এগিয়ে থেকে বাংলাদেশ শেষ করলেও, চোট চিন্তায় স্বস্তির নিশ্বাস হয়ত তাই ফেলা হচ্ছে না টাইগারদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ৪৩০, ১৫০.২ ওভার (মিরাজ ১০৩, সাকিব ৬৮, ওয়ারিকান ৪/১৪৪, কর্নওয়াল ২/১১৪)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭৫/২, ২৯ ওভার (ব্র্যাথওয়েইট ৪৯*, বোনার ১৭*, মুস্তাফিজ ২/১৮)