স্টেডিয়াম একটি। তবে তার ভেতরে দুটি মাঠ। দুটি আলাদা গ্রাউন্ড। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এসে দেখা মিলবে এই ‘টু ইন ওয়ান’ মাঠের। এই স্টেডিয়ামের ‘গ্রাউন্ড-টু’ মাঠের উদ্বোধন হয় গত শনিবার (২৩ জানুয়ারি)। নতুন এই গ্রাউন্ডেও আছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের সব ধরণের সুবিধা। এরই মধ্যে মাঠের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
কেবল দুটি আলাদা মাঠই নয়, নগরের উপকণ্ঠের লাক্কাতুরা এলাকার সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে ঘিরে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট কমপ্লেক্স গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেখানে থাকবে আউটার স্টেডিয়াম, ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, ডরমেটরি, বিদ্যালয়সহ প্রয়োজনীয় সব স্থাপনা। সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন, সব কাজ শেষ হলে সিলেটেই গড়ে উঠবে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট কমপ্লেক্স।
অবকাঠামোগত এই উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়েছেন সিলেটের ক্রীড়া সংগঠকরা। একই সঙ্গে নিয়মিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন ও প্রতিভা বিকাশে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সিলেটের ক্রিকেট সংগঠক আশরাফ আরমান বলেন, ‘সিলেটের ক্রিকেটের অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন হচ্ছে তা প্রশংসার দাবিদার। নতুন যে মাঠ হয়েছে সেখানে ক্রিকেটের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
২০০৭ সালে সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগান এলাকায় নতুন একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়। এরপর ২০১১ সালে এটিতে আন্তর্জাতিক মানের পরিবর্তন এনে সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম নামকরণ করা হয়। চা বাগান আর উঁচু নিচু টিলার দিয়ে ঘেরা স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য্য নজর কেড়েছে সবার।
ছবি: নিউজবাংলা
সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাঠের পাশেই তিন একর জমিতে নতুন আরেকটি মাঠের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ মাঠটি শনিবার বিকেলে উদ্বোধন হয়। এই স্টেডিয়ামটি প্রথমে আউটার স্টেডিয়াম হিসেবে নির্মাণ করা হয়। তবে এতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের সব সুযোগ সুবিধা থাকায় নতুন স্টেডিয়ামকে ‘সিলেট ক্রিকেট গ্রাউন্ডস-টু’ নামকরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিসিবির পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল বলেন, ‘সিলেট আউটার স্টেডিয়ামে আন্তজার্তিক ম্যচ আয়োজনের সবধরণের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কেবল ফ্লাড লাইটের ব্যবস্থা নেই। শিগগিরই বিসিবির পক্ষ থেকে এখানে ফ্লাড লাইট বসান হবে।
সিলেট ক্রিকেট গ্রাউন্ডস-টুয়ের চার পাশের পুরোটাই সবুজ গ্যালারি। চেয়ারের কোনো ব্যবস্থা নেই। সবুজ ঘাসের গালিচা বিছানো। গ্যালারিতে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরণের গাছ। এসব গাছ বড় হলে এই মাঠের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই মাঠে রয়েছে চারটি ড্রেসিং রুম। আলাদা প্রেস বক্স। রয়েছে চারটি পিচ।
নতুন স্টেডিয়ামের নাম সিলেট গ্রাউন্ডস-টু করায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আগের মাঠকে ‘সিলেট গ্রাউন্ডস-ওয়ান’ নামকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিসিবি ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা নিউজিবাংলাকে জানায়, এই দুই স্টেডিয়ামের পাশে অনুশীলনের জন্য নতুন আরেকটি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই স্টেডিয়ামের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ইতোমধ্যে ৩ শতক জায়গা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। অনুশীলন স্টেডিয়াম নির্মিত হলে সেখানে একসাথে ৭০ জন করে প্রতিদিন ২১০ জন ক্রিকেটার অনুশীলন করতে পারবে। নির্ধারিত ফি প্রদান করে যে কোনো ক্লাবই সেখানে ক্রিকেটারদের অনুশীলন করানোর সুযোগ পাবে।
এছাড়া এই এলাকায় একটি ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তুলবে বিসিবি। আর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নির্মাণ করবে ৪০ জনের আবাসনের সুবিধা সম্বলিত ডরমেটরি। যাতে টুর্নামেন্টের সময় ক্রিকেটাররা এসে এখানে থাকতে পারেন।
এছাড়া স্টেডিয়ামের পাশে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত একটি বিদ্যালয় নির্মাণ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এই বিদ্যালয়ের জন্য বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে জায়গা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট খেলতে আসা শিক্ষার্থীদের যাতে পড়ালেখায় বিঘ্ন না ঘটে সে জন্য এই বিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে স্থানীয়রাও পড়ালেখার সুযোগ পাবে।