৩১৫ দিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তাতে উপলক্ষ্য অনেক। তামিম ইকবালের অধিনায়কত্বের শুরু যেমন, তেমনই সাকিবের ফিরে আসা। সঙ্গে হাসান মাহমুদের অভিষেক।
টসে জিতে তামিম সিদ্ধান্ত নিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর। তার সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করলেন সাকিব ও হাসান। সহায়তা করলেন মুস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। আর তাতেই ১২২ রানে গুটিয়ে গেল সফরকারীরা।
জবাবে আকিল হোসেনের স্পিন ও আলজারি জোসেফের পেসের সামনে কিছুটা হোঁচট খেয়ে সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতল টাইগাররা। ছয় উইকেটের জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিক দল।
১২৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই ওপেনার তামিম ও লিটন দাস শুরু করেন ধীরগতিতে। তাদের ৪৭ রানের ওপেনিং জুটি আসে ৮০ বলে। সেই জুটি ভাঙেন আকিল। দারুণ এক ডেলিভারিতে লিটনকে বোকা বানিয়ে বোল্ড করেন। তিনি ফেরেন ৩৮ বলে ১৪ রানের স্বভাববিরুদ্ধ ইনিংস খেলে।
ক্রিজে বেশিক্ষণ টেকেননি সাকিবের বদলে তিন নম্বরে ব্যাট করা নাজমুল হোসেন শান্ত। নয় বলে এক রান করে আকিলের বলে শর্ট মিডউইকেটে উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
সেখান থেকে সাকিবের সঙ্গে ২৬ রানের ছোট এক জুটিতে সম্ভাব্য বিপর্যয় সামাল দেন তামিম। ব্যক্তিগত ৪৪ রানে প্রতিপক্ষ অধিনায়কের বলে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
১২৩ রান তাড়ায় ৪৭ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন তামিম-লিটন। ছবি: এএফপি
সেখান থেকে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে আরও একটি ছোট জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নেন সাকিব। আকিলকে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হলে ম্যাচ শেষ করে আসা হয়নি সাকিবের।
মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে সেটি করে আসেন মুশফিক। ৯৭ বল হাতে রেখেই সহজ জয় পায় টাইগাররা।
চার উইকেট ও ১৯ রানের জন্য ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন সাকিব আল হাসান।
এর আগে ম্যাচের প্রথম ওভারে রুবেল হোসেনকে ছয় হাঁকালেও, দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে মুস্তাফিজের দারুণ এক ইনসুইংয়ে পরাস্ত হয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহ-অধিনায়ক সুনিল অ্যামব্রিস। রিভিউ নিলে দেখা যায়, লেগ স্টাম্পে যাচ্ছিল বল।
ম্যাচের চতুর্থ ওভারের মাঝপথে আসে বৃষ্টি। খেলা বন্ধ থাকে এক ঘন্টা। খেলা আবার শুরু হলে মুস্তাফিজের বলে গালিতে দারুণ ক্যাচ নিয়ে আরেক ওপেনার জশুয়া ডি সিলভাকে ফেরান লিটন দাস।
পাওয়ারপ্লেতে আর উইকেট না গেলেও, পাওয়ারপ্লের পর বোলিংয়ে এসে সাকিব রীতিমতো নাকাল করে ছাড়েন অনভিজ্ঞ ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের।
সাত ওভারের স্পেল যখন শেষ করেছেন সাকিব, ততক্ষণে উইন্ডিজের মিডল অর্ডারের পুরোটাই প্যাভিলিয়নে। নিজের দশম বলে সাকিব তুলে নেন নিজের প্রথম উইকেট। আন্ড্রে ম্যাকার্থির স্টাম্প ভেঙে সাকিব তুলে নেন ঘরের মাঠে নিজের ১৫০তম উইকেট।
এরপর পালা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদের। দারুণ এক ডেলিভারিতে পরাস্ত করেন জেসনকে, উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিম বিন্দুমাত্র সময় অপচয় না করে স্টাম্পিং করে ফেরত পাঠান উইন্ডিজ অধিনায়ককে।
নিজের পঞ্চম ওভারে এনক্রুমাহ বোনারকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন সাকিব। বোনার রিভিউ নিলেও, তাতে রক্ষা হয়নি তার। সাত ওভারের স্পেল শেষে সাকিবের ফিগার দাঁড়ায় ৭-২-৮-৩। তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপদে।
সেখান থেকে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালান কাইল মায়ার্স ও রভম্যান পাওয়েল। দুজনের ৫৯ রানের জুটিতে ধ্বংসস্তুপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল সফরকারীরা। তখনই অভিষিক্ত হাসান ভয়ংকর রূপ ধারণ করেন।
দারুণ এক ডেলিভারিতে পাওয়েলকে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানিয়ে ২৮ রানে ফেরত পাঠান প্যাভিলিয়নে। পরের বলেই রেমন রাইফারকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই ডানহাতি পেসার। যদিও রিপ্লে দেখাচ্ছিল বলটি চলে যেত স্টাম্পের ওপর দিয়ে। আম্পায়ার আউট দেয়ায় এবং দলের কোনো রিভিউ বাকি না থাকায় ফিরতে হয় এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে।
তিন উইকেট শিকার করেন হাসান মাহমুদ। ছবি: এএফপি
অন্য প্রান্ত আগলে রাখা কাইল মায়ার্সকে তার পরের ওভারেই ফেরান মিরাজ। ফ্লাইটেড এক টার্নিং ডেলিভারিতে মায়ার্স ৪০ রানে ফেরেন স্লিপে লিটনকে সহজ ক্যাচ দিয়ে।
পরের ওভারে ম্যাচে নিজের তৃতীয় ক্যাচ তুলে নেন লিটন। হাসানের বলে আকিল হোসেন ফিরে যান দ্বিতীয় স্লিপে থাকা লিটনকে সহজ ক্যাচ দিয়ে।
দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসে সাকিব ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুটিয়ে দিতে সময় নেন মাত্র দুই বল। আর্ম বলে আলজারি জোসেফের ব্যাট-প্যাডের ফাঁকা দিয়ে স্টাম্প ভেঙে নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
এই জয় দিয়ে ২০২৩ বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং ওয়ার্ল্ড সুপার লিগে দারুণ শুরু পেল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে দশ পয়েন্ট তুলে নিয়েছে টাইগাররা।
প্রায় এক বছর পর জয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরায় সাকিব-তামিমদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।