করোনাভাইরাস বাস্তবতায় ব্যাট-বলের ঠোকাঠুকির ক্রিকেটে সর্বশেষ ও অপরিহার্য সংযোজন জৈব নিরাপত্তা বলয় বা বায়ো বাবল।
যে কোনো ধরনের ম্যাচের আগেই প্রাণঘাতী করোনা থেকে বাঁচতে খেলোয়াড়দের ঢুকে যেতে হচ্ছে এই নিরাপত্তা বলয়ে।
কিছু দেশ অবশ্যই ব্যতিক্রম। নিউজিল্যান্ডে যেমন ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর সবাই মুক্ত-স্বাধীন। কোনোরকম বলয়ের প্রয়োজন নেই। কেননা, নিউজিল্যান্ডে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেক কম।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। গত এক সপ্তাহ দিনে ৫০০ এর বেশি মানুষের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে রোববার বাংলাদেশে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। ২০ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া সিরিজের আগে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দলকেই থাকতে হবে জৈব নিরাপত্তা বলয়ে। সে পদক্ষেপও নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
আর দুই দলও প্রবেশ করেছে সেই বলয়ে। রোববার সকালে ঢাকা পৌছানোর পর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে চেক-ইন করেছে সফরকারী দল। অন্যদিকে মিরপুরে অনুশীলনের পর একই হোটেলের জৈব নিরাপত্তা বলয়ে ঢুকেছে বাংলাদেশ দল।
বাংলাদেশ দল অনুশীলন শুরু করতে পারলেও সেই অপেক্ষায় রয়েছে সফরকারীরা। নিজেদের হোটেল রুমে বাধ্যতামূলক তিন দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর তারা পাবেন অনুশীলন করার অনুমতি।
তবে সেটিও নির্ভর করছে করোনা পরীক্ষার ফলের ওপর। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী জানান, সোমবার করোনা টেস্টের পর আরও একটি করোনা টেস্ট হবে সফরকারী দলের সদস্যদের। দুটি পরীক্ষায়ই নেগেটিভ আসলেই কেবল অনুশীলনে নামতে পারবেন তারা।
‘আমাদের নির্ধারিত যে কোভিড প্রটোকল সে অনুসারে তারা হোটেলে অবস্থান করছেন। আগামীকাল তাদের একটা টেস্ট হবে। এরপর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরেকটা টেস্ট হবে। পরপর দুটা করোনা টেস্টে নেগেটিভ হলে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে তারা অনুশীলনের জন্য মাঠে আসতে পারবেন’, বলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী।
কোথায় যেতে পারবেন খেলোয়াড়রা?
জৈব নিরাপত্তা বলয়ে থাকা অবস্থায় ক্রিকেটারদের চলাফেরায় থাকে নানা বিধি-নিষেধ। সেটি থাকছে বিসিবির বলয়েও।
হোটেল, মাঠ, প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটি, জিম, হোটেলের সুইমিংপুলসহ অল্প কিছু জায়গায় আটকে থাকতে হবে ক্রিকেটারদের। এর বাইরে বেরুনোর কোনো সুযোগ নেই তাদের।
ঢাকায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে থাকবেন ক্রিকেটাররা। চট্টগ্রামে তারা থাকবেন হোটেল র্যাডিসন ব্লু এ। বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমাম।
কোথায় কোথায় যেতে পারবেন খেলোয়াড়রা, সেই বিষয়েও রাবীদের সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘স্টেডিয়ামসহ যত ধরনের প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটি আছে ইনক্লুডিং জিম সেগুলো ক্রিকেটাররা ব্যবহার করতে পারবেন। আর হোটেলে নির্দিষ্ট কিছু জায়গা আছে, সেখানে যেতে পারবে তারা। যেমন জিম, সুইমিংপুল।’
তিনি জানান, হোটেলের যেসব স্টাফ খেলোয়াড়দের দায়িত্বে থাকবেন তাদেরও করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নেগেটিভ আসার পরই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের।
কতবার হবে করোনা পরীক্ষা?
জৈব নিরাপত্তা বলয়ে প্রবেশের আগেই দুবার করে করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে খেলোয়াড়দের। গত ৭ ও ৯ জানুয়ারি দুই দফায় বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের করোনা পরীক্ষা করা হয়। নেগেটিভ ফলের পরই তারা প্রবেশ করেছেন বলয়ে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে আসার আগে দুবার করোনা পরীক্ষা হয়েছে ক্যারিবিয়ান খেলোয়াড়দের। সেখানে করোনা পজিটিভ আসায় বাদ পড়েছেন অলরাউন্ডার রোমারিও শেপার্ড।
ঢাকায় পৌছানোর পর আরও দুবার করোনা পরীক্ষা হবে সফরকারীদের। এরপরই মিলবে অনুশীলনের অনুমতি।
বিসিবির প্রধান চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ চৌধুরী নিউজবাংলাকে জানান, বায়ো বাবলে প্রবেশের পর বাংলাদেশ দলের সদস্যদের চার বার এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্যদের আরও পাঁচ বার করোনা পরীক্ষা করা হবে।
‘বায়ো বাবলে ঢোকার পর সাত দিনে তিনটি টেস্ট হবে। এরপর আবার টেস্ট হবে। সিরিজের মাঝামাঝি হবে আরেকটি টেস্ট’, বলেন ডা. দেবাশীষ।
তিনি বলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দেশে ফেরার আগে তাদের আরেকবার করোনা পরীক্ষা করা হবে। সেই টেস্টটি করতে হবে না বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের।
এই পরীক্ষাগুলোর পাশাপাশি যদি প্রয়োজন মনে হয়, তাহলে আরও করোনা পরীক্ষা করা হবে বলে জানান বিসিবির প্রধান চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট করোনা পরীক্ষাগুলো হবেই। সঙ্গে আমরা যদি প্রয়োজন মনে করি তাহলে আরও টেস্ট হবে।’
এই জৈব নিরাপত্তা বলয়ে খেলোয়াড়দের থাকতে হবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বলয়ের বাইরে চলে যাবেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা। আর সেদিনই শেষ করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল এলে বাড়ির বিমান ধরবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড় ও স্টাফরা।
২০ জানুয়ারি মিরপুরে প্রথম ওয়ানডের মধ্য দিয়ে নয় মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরবে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তারা খেলবেন তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টেস্ট। এর মধ্যে ঢাকায় হবে প্রথম দুটি ওয়ানডে ও শেষ টেস্ট। চট্টগ্রামে হবে শেষ ওয়ানডে ও প্রথম টেস্ট।