গত মার্চে যখন অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান মাশরাফি মোর্ত্তজা, তখনই জানিয়েছিলেন, খেলা ছাড়ছেন না। তবুও ২০১৯ বিশ্বকাপ থেকে তার অবসর নিয়ে চলতে থাকা গুঞ্জনের পালে আবারও লেগেছিল হাওয়া, আবারও উঠেছিল সেই একই প্রশ্ন, কবে অবসর নেবেন মাশরাফি?
সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি এখনও। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের জন্য ঘোষণা করা ২৪ সদস্যের প্রাথমিক দলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচকরা রাখেননি দেশসেরা ওয়ানডে অধিনায়ককে।
কেনো? সেই প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচকরা বলেছেন, ২০২৩ বিশ্বকাপের ভাবনায় নেই মাশরাফি। তরুণদের সুযোগ দিতেই জায়গা করে দিতে হচ্ছে তাকে।
মাশরাফির সাবেক সতীর্থ শাহরিয়ার নাফীসের মতে, মাশরাফির জন্য ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলাটা একটু কঠিন। সেজন্যই তাকে দলে রাখেননি নির্বাচকরা। তবে খেলোয়াড়টি মাশরাফি বলেই তার দলে না থাকা নিয়ে হচ্ছে এত আলোচনা।
নিউজবাংলাকে নাফীস বলে, ‘মাশরাফি ভাইকে দলে না নেয়ার যে ব্যাখ্যা নির্বাচকরা দিয়েছেন, ২০২৩ সালের জন্য তারা দল গঠন করতে চাচ্ছেন, নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতে চান। সব কিছু পর্যালোচনা করলে মাশরাফি ভাইয়ের ২০২৩ বিশ্বকাপে খেলা একটু কঠিন। অসম্ভব বলছি না, কিন্তু একটু কঠিন।
‘সেসব মিলিয়ে নির্বাচকরা এই সময়টা বেছে নিয়েছেন যেহেতু আমরা সব সময় চার বছরের হিসাবে একটা ওয়ানডে দল গঠন করি বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে। খেলোয়াড়টা মাশরাফি ভাই বলেই সিচুয়েশনটা মেনে নেয়া একটু কঠিন।’- বলেন নাফীস
নাফীসের মতে, মাশরাফি সারা জীবন খেলবেন না, এক সময় তার ১৯ বছরের ক্যারিয়ারের পর্দা নামতেই হবে।
সাবেক এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বলেন, ‘একজন খেলোয়াড় কত দিন খেলবেন, সেটা তার ওপর নির্ভর করে। মাশরাফি ভাইয়ের যেমন ক্যারিয়ার, বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার যেমন অবদান, তিনি যদি পাঁচ বছর পরেও বাদ পড়ত কিংবা জাতীয় দলে সুযোগ না পেত, তাকে নিয়ে সমান কথাই হতো। মাশরাফি ভাই এতটা বড় মাপের খেলোয়াড় বলেই এত কথাবার্তা হচ্ছে। এরকম সময় তো কখনও না কখনও আসতোই। মাশরাফি ভাই তো আর সারা জীবন ক্রিকেট খেলবেন না।’
মাশরাফির আরেক সতীর্থ হাসিবুল হোসেন শান্তর মতে, ফর্মে থাকা অবস্থায় অবসর নিয়ে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পারতেন মাশরাফি।
‘এখন তার যে সম্মান আছে, এই অবস্থা থেকে যদি সে অবসর নিত, তাহলে খুবই ভালো হতো। পারফর্ম করা অবস্থায় অবসর নিলে সেটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াত। অস্ট্রেলিয়ায় দেখুন, খেলোয়াড়রা টপ ফর্মে থাকার সময় অবসর নিয়ে ফেলে। এই জিনিসটা যদি মাশরাফি বাংলাদেশে শুরু করত, তাহলে সেটি আমার মতে খুব ভালো হতো। ও লড়াকু একটা ছেলে আসলে। সেই হিসেবেই ও আরও খেলতে চাচ্ছে।’-বলেন সাবেক এই পেসার।
ম্যাচ খেলে মাশরাফি বিদায় নিতে পারলেই ভালো লাগত জানিয়ে শান্ত বলেন, ‘আমি মনে করি যে, এভাবে না হয়ে একটা খেলা খেলিয়ে তাকে বিদায় দিলে ভালো হত। ওর ফিটনেস বা বলের গতি দেখেন, ওর বলের ধার কিন্তু আগের মত নেই। তো আমি মনে করি সে এখন অবসর নিলে তার সম্মানটা অনেক বেশি থাকত।’
বাংলাদেশের হয়ে ৩২টি ওয়ানডে খেলা এই পেসার বলেন, মাশরাফির উচিত এখন তরুণদের এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করা।
শান্ত বলেন, ‘এখন সে যে লেভেলে আছে, তার উচিত তরুণদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করা এবং বোর্ডের ভালো কোনো পজিশনে কাজ করা। সে এমপি হিসেবে কাজ করছে কিন্তু ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে কাজ করাটা অন্য ব্যাপার। খেলা তো সবাই সারা জীবন খেলতে পারবে না। গাঙ্গুলি যেমন এখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। এরকম কিছু একটা, বিসিবিতে কাজ করলে ভালো হবে।’
মাশরাফিকে ছাড়াই আগামী ১০ জানুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের জন্য ক্যাম্প শুরু করবে টাইগাররা। ২০ জানুয়ারি তামিম ইকবালের নেতৃত্বে ওয়ানডেতে মাশরাফি-পরবর্তী যুগের সূচনা করবে বাংলাদেশ।