২৬ ডিসেম্বর, ২০০৪। ক্রিকেট ইতিহাসের ২২০১ নম্বর ওয়ানডে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি বাংলাদেশ ও ভারত।
সেই ম্যাচের আগে ওয়ানডেতে সর্বসাকুল্যে ছয় জয় বাংলাদেশের। অন্যদিকে ভারত সর্বশেষ বিশ্বকাপের রানার্সআপ। বাংলাদেশ জয় পাবে, সেটি হয়ত চরম আশাবাদী কোন বাংলাদেশ ভক্তও ভাবেনি।
অথচ হলো সেটিই। আফতাব আহমেদের ফিফটির পর মাশরাফি মোর্ত্তজার অলরাউন্ড নৈপুণ্য অঘটন ঘটিয়ে ১৫ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর পর বড় কোন দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয় ছিল সেটি।
পাকিস্তানকে হারানোর সেই ম্যাচের পর ৩৭ ম্যাচ জয়হীন ছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে সেই ধারায় ছেদ আনার পর হংকংয়ের বিপক্ষে একটি জয়। এরপরই সেই ভারত বধ, যেখানে অধিনায়ক ছিলেন হাবিবুল বাশার।
নিউজবাংলাকে বাশার বলেন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের সময় তারা দেশের মাটিতে জয়ের কথা ভাবছিলেন।
‘১৯৯৯ এর চার বছর পর জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে আমরা সেই টানা হারের ধারা ভেঙেছিলাম। জিম্বাবুয়েতে যখন জিতি তখন আমরা বলাবলি করছিলাম যে বাংলাদেশের মাটিতে জিতলে অনেক আনন্দ করতে পারতাম, এখানে তো তেমন কোন বাঙালি ক্রাউডও নেই’-বলেন সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তবে সেই আক্ষেপ মিটে যায় ভারতের সাথে ম্যাচে। সেদিন দর্শকে উপচে পড়ছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। বাশার বলেন, ‘তারপর আসলো ভারতকে হারানোর উপলক্ষ, ঘরের মাটিতে। মাঠে গিয়ে দেখলাম ফুল হাউজ। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ভরা ছিল আর বাইরে মনে হয় দাঁড়ানো দশ হাজার। দেশের মাটিতে এত লোকের মাঝে কখনও খেলিনি। এত মানুষের মাঝে ভারতের মত দলকে হারানো ছিল খুব আনন্দের।’
ম্যাচের আগে অবশ্য জয়ের ব্যাপারে খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না বাশার। তবে জানতেন, ভালো ক্রিকেট খেললে ভারতকে পেছনের পায়ে ঠেলে দেয়া সম্ভব।
‘ভারত খুব বড় দল। তখন আমাদের খেলা এমন ছিল যে আমরা আমাদের সেরাটা চেষ্টা করব এবং যদি সুযোগ পাই, সেটা মিস করব না। আমরা এটিই চেষ্টা করতাম, কারণ তখন তো আমরা খুব বেশি ম্যাচ জিতিনি। খেলার আগে অত আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু এটা জানতাম, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারলে ভারতকে পুশ করতে পারব’, বলেন বর্তমানে নির্বাচক বাশার।
সেই ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের পথে কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মোহাম্মদ কাইফ। তাকে রান আউট করে বাংলাদেশের জয়ের পথ সুগম করেন রাজিন সালেহ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ওই উইকেটেই আত্মবিশ্বাস পান তারা। রাজিন জানান, সেই রান আউটটি করে দেশের জন্য কিছু করার অনুভূতি পান তিনি।
‘ওই রান আউটটি যখন আমি করি, তখন নিশ্চিত ছিলাম না আউট কি না। ব্যাটসম্যানের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল আউট। যখন কাইফ আউট হয়ে গেল, আমাদের আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে গিয়েছিল যে আমরা ম্যাচটা জিততে পারব। আমি যে রান আউটটা করেছিলাম তখন মনে হয়েছিল যে দেশের জন্য কিছু করতে পেরেছি।’
সেই ম্যাচের পর থেকে বাংলাদেশকে অন্য নজরে দেখতে শুরু করে ক্রিকেট বিশ্ব বলে মনে করেন বাশার। তিনি বলেন, নিজেদের বিশ্বাসও বেড়েছিল সেই জয়ে।
মি.ফিফটি বলে পরিচিত এই সাবেক ব্যাটসম্যান বলেন, ‘বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অনেক বড় ব্যাপার ছিল। আমরা এত বিশ্বাসী ছিলাম না। জিম্বাবুয়েকে হারালাম, বাট আমাদের নিজেদের কাছেও প্রমাণ করার ব্যাপার ছিল যে আমরা বড় দলকে হারাতে পারি। ভারতের মত দলকে যখন হারিয়েছি, তখন সবাই বুঝতে পেরেছে যে এই দলটি আগের মত নেই, বাংলাদেশ সুগঠিত একটি দল। আগে যেমন আমাদের বিপক্ষে খেলার আগে অনেক দল চিন্তা করতো না, সেই ম্যাচের পর বাংলাদেশকে সবাই অন্যভাবে দেখা শুরু করল।’
সেই জয়ের পর বাংলাদেশ ভারতকে আরও হারিয়েছে চারবার। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে, এরপর ২০১২ সালে এশিয়া কাপে। এরপর ২০১৫ সালে টানা দুই জয়ে ভারতের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ।