বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফুটবলের ‘শত্রুতায়’ ইনজুরিতে ক্রিকেটাররা

  •    
  • ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:১৭

ফুটবল খেলতে গিয়ে ২০১৮ সালে চোট পান মুশফিকুর রহিম ও নাসির হোসেন। গত মাসে একই ভাবে চোটে পড়েন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ শুরুর ঠিক আগে আগে অনুশীলনে গা গরমের ফুটবল খেলার সময় গোড়ালির চোটে পড়েন মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ছিটকে যান প্রায় দুই সপ্তাহের জন্য।

সেই চোট থেকে যতদিনে সেরে উঠে মাঠে ফিরেছেন, তত দিনে পাঁচ ম্যাচ খেলে ফেলেছে রাজশাহী। তাতে দুই জয় ও তিন হার প্রমাণ করে, যাকে ঘিরে সাজানো হয়েছিল দল, তার অভাবে বেশ ভুগেছে রাজশাহী।

এই চোট আবারও তুলে নিয়ে এসেছে একটি প্রশ্ন। গা গরম করার জন্য ফুটবল কি আদৌ জরুরি?

ফুটবল খেলতে গিয়ে চোট নতুন কিছু নয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ২০১৮ সালে ফুটবল খেলতে গিয়ে চোটে পড়েন মুশফিকুর রহিম ও নাসির হোসেন। মুশফিকের চোট বড় না হলেও হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ে নাসির ছিটকে গিয়েছিলেন লম্বা সময়ের জন্য। সেই ইনজুরি থেকে ফেরার পর আর জাতীয় দলে নিয়মিত হতে পারেননি এক সময় ‘দ্য ফিনিশার’ খ্যাতি পাওয়া এই অলরাউন্ডার।

এই বছরের শুরুতেই অনুশীলনে ফুটবল নিষিদ্ধ করে ইংল্যান্ড। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের এই সিদ্ধান্ত আসে যখন ফুটবল খেলতে গিয়ে চোটে পড়ে যখন সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ থেকে ছিটকে যান ররি বার্নস।

২০১৮ সালে মুশফিকের ইনজুরির পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কিছু বিধি-নিষেধ এনেছিল ফুটবল খেলার ওপর।

ফুটবল খেলতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ার পর আর জাতীয় দলে সুযোগ পাননি নাসির। ছবি: ইউএনবি/এপি

সাবেক বাংলাদেশ পেসার তালহা জুবায়ের জানালেন, আগের মতো নিয়মিত খেলা হয় না ফুটবল, ইনজুরির ভয়েই।

‘আগে যেমন নিয়মিত হতো, ফুটবল এখন অনেক কমে গিয়েছে ইনজুরির ভয়ে। ঘরোয়াতে হলেও জাতীয় দল বা অনুর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে কিন্তু ফুটবল হয় না, ফুটসালের মত কিছু একটা হয়’, বলেন তালহা।

ফুটবলে বিপদ

গা গরমের ফুটবলে সাধারণত খেলা হয় ধীরে-সুস্থে। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরি জানালেন, সমস্যাটা হয় যখন খেলোয়াড়রা কঠোরভাবে খেলা শুরু করে।

‘ফুটবল একটা ভালো ওয়ার্ম আপ পদ্ধতি। আপনি যদি নিয়ম মেনে খেলেন, তাহলে অত বেশি সমস্যা হবে না। খেলোয়াড়রা যখন খেলতে যায় তখন অনেকে মনে রাখতে পারে না যে এটা ওয়ার্ম আপ গেম। ওরা সিরিয়াসলি খেলা শুরু করে। তখন গিয়ে ঝামেলাগুলো হয়’, বলেন দেবাশীষ।

তালহাও জানান, আগে গুরুত্ব দিয়ে খেলার কারণে ইনজুরি হতো বেশি। তিনি বলেন, ‘আগে যেমন হতো যে সিরিয়াস খেলছে, ইনজুরিও হয়। ওই রিস্ক থেকে চিন্তা করে অনেকেই ফুটবলটাকে এড়িয়ে যায়।’

বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিম জানান, কোন খেলার দিন সকালে হুট করে কারও চোটে পড়াটা কাম্য নয়। খেলোয়াড়রা বরং চান, চাপহীন পরিবেশে প্রস্তুতি নিতে।

‘অবশ্যই, এটা (চোট) হতেই পারে। এবং হয়নি যে তা না কিন্তু। ওয়ার্ম আপের সময় চোটের কারণে একটা বড় ম্যাচ খেলতে পারলো না, এমন কিন্তু হয়েছে। আমরা কেউ চাইব না একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে ফিট একটা প্লেয়ার ওয়ার্ম আপের সময় ইনজুরড হয়ে গেল। সবাইকে একটা বিপদহীন একটা পরিবেশ চাইবে। সেক্ষেত্রে ফুটবল অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ’, বলেন ফাহিম।

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের আগে চোট পেয়ে ছিটকে যান মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

ফুটবল খেলা জরুরী নয়

গা গরম করতে হলে ফুটবলই খেলতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। তবে ওয়ার্ম আপের সময় কিছু মুভমেন্টের মধ্যে থাকতে হয় দেখেই ফুটবল খেলা অভিমত দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের।

‘এটা (ফুটবল খেলে গা গরম) করতেই হবে এমন কোন কথা নেই। পৃথিবীর অনেক দল আছে যারা কখনই ফুটবল খেলে না। আমাদের দেশে ছেলেরা ফুটবল খেলতে পছন্দ করে। এটা ওয়ার্ম আপের একটা প্রয়োজনীয় অংশ হিসেবে করে তা না। ওয়ার্ম আপের সময় একটু মুভমেন্টের মধ্যে থাকতে হয়, সেটা ওরা ফুটবল খেলে করে নেয়। এটা আবশ্যিক নয় যে ফুটবল খেলেই ওয়ার্ম আপ করতে হবে’, জানান ফাহিম।

তালহা জানান, ফুটবলটা ঠিক গা গরমের অংশ নয়। ফুটবলটা বরং খেলা হয় আনন্দের জন্য।

‘ওয়ার্ম আপ তো বেসিক্যালি ফুটবল দিয়ে হয় না, ট্রেনার সেটি করায়। ফুটবলটা ফান গেমের মত থাকে। টিমের মধ্যে একটু আনন্দ দরকার থাকে। একটা প্রেশার ম্যাচে নামার আগে যদি সবাই একটু হালকা থাকে’, বলেন তালহা।

সাবেক পেসার হাসিবুল হোসেন শান্তও জানালেন, টিম স্পিরিট বাড়াতে সাহায্য করে ফুটবল। তিনি বলেন, ‘সাবধান থেকে ফুটবল খেলতে পারলে গা গরমের সাথে টিমের স্পিরিটটাও একটু বাড়বে। এটা নির্ভর করে। আমি বলছি না যে ফুটবল খেলাই যাবে না।’

ফুটবল বাদ দেওয়াই কি সমাধান?

ইংল্যান্ড যেমন ফুটবল নিষিদ্ধ করেছে তাদের অনুশীলন থেকে, তেমনি করে বাদ দিয়ে দিলে ইনজুরি-ভীতি কমে আসবে অনেকটাই।

তবে সেটি এখনই করতে রাজি নন বিসিবির ফিটনেস ট্রেনার তুষার কান্তি হাওলাদার। তার মতে, বাদ দিলে তার আপত্তি নেই, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ফুটবলে তেমন সমস্যা নেই।

‘আমি বলব, ফুটবল বিনোদন হিসেবে খেললে সেটা খারাপ না, কিন্তু সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদি না খেলে তাহলে অবশ্যই ভালো। তাহলে তো কোন ঝুঁকিই থাকল না’, বলেন তুষার।

তুষার ভারতের অনুশীলন দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে জানালেন, তারা ফুটবলটা খেলে নিয়ন্ত্রণ করে। শচীন বল পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তাকে কড়া ট্যাকেল করতে এগুচ্ছেন না কেউ। এমন ফুটবলে আপত্তি নেই তুষারের।

‘আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে ভারত দল ফুটবল খেলে। শচীন বল নিয়ে দৌড়াচ্ছে, কেউ তাকে চার্জ করছে না। চার-পাচ স্টেপ যাচ্ছে, বল ছেড়ে দিচ্ছে, খেলছে। যে খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করবে সে যদি বিনোদন হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সেটা ঠিক আছে’, যোগ করেন তুষার।

জাতীয় দলের অনুশীলনে ফুটবল। ছবি: বিসিবি

পরিত্রাণের উপায় কী?

নাজমুল আবেদিন ফাহিমের মতে, এমন কোনো খেলা বেছে নেওয়া উচিত গা গরমের জন্য, যেটা সবাই উপভোগ যেমন করবে, তেমনি শারীরিক কোন সংস্পর্শ হবে না।

‘যে কোনো মুভমেন্ট যেটায় শারীরিক সংস্পর্শ হবে না, এমন যেকোন মুভমেন্ট, যে কোনো খেলাই চলবে। অন্য কোনো একটা খেলার মধ্য দিয়ে হলে, সবাই সেটা উপভোগ করতে পারে। কিন্তু এমন কিছু করা উচিত যেটায় শারীরিক সংস্পর্শ হবার সম্ভাবনা নেই। তাহলে কোনো সমস্যা নেই, যে কোনো অ্যাকটিভিটি হতে পারে’, বলেন ফাহিম।

ড. দেবাশীষ অবশ্য বাদ দেওয়ার পক্ষপাতি নন। তার মতে, তার চেয়ে বরং একটু পরিবর্তন আনা যায় গা গরমের ফুটবলে।

‘এখন ওয়ার্ম আপের অন্যান্য অংশ থেকে কি ইনজুরি হচ্ছে না? আপনি যখন ব্যাটিং, বোলিং বা থ্রোয়িং প্র্যাকটিস করছেন, তখন মানুষের হাতে ফ্র্যাকচার হচ্ছে, ব্যথা হচ্ছে, তাহলে কি আপনি ট্রেনিং বন্ধ করে দেবেন? যেটা আপনি করছেন, সেটার গতি নিয়ন্ত্রণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা বাদ দেয়ার কিছু নেই। এটাকে পরিশ্রুত করতে পারেন’, বলেন বিসিবির প্রধান চিকিৎসক।

এ বিভাগের আরো খবর