প্রথম ম্যাচেই বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ দেখলো টানটান উত্তেজনা। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয় পেলো মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। ব্যাটে বলে জ্বলে ওঠা মেহেদি হাসানই ছিলেন রাজশাহীর দুই রানের জয়ের নায়ক।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে এক সময় রাজশাহী ৬৭ রানেই হারিয়ে ফেলে পাঁচ উইকেট। সেখানে থেকে ৮৯ রানের দারুণ এক জুটিতে তাদের উদ্ধার করেন মেহেদি হাসান ও নুরুল হাসান সোহান। মেহেদির ৫০ রানে রাজশাহী সংগ্রহ করে ১৬৯।
সেই রান তাড়ায় জয়ের পথেই ছিলো মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ঢাকা। মুশফিক ও আকবর আলির কৃতিত্বে শেষ ছয় ওভারে তাদের দরকার ছিল ৫১। কিন্তু আকবর ও মুশফিক বিদায় নেয়ার পর রানের চাকা যায় থমকে। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় ৩০ রান।
ফরহাদ রেজার এক ওভারে তিন ছয়ে ২১ রান নিয়ে বল হাতে দারুণ পারফর্ম করা মুক্তার আলি ম্যাচ অনেকটাই নিয়ে আসেন নিজেদের ঘরে। কিন্তু মেহেদির পণ ছিল ম্যাচটা করে নেবেন নিজের।
একটি নো-বল করলেন শেষ ওভারে। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি ঢাকার। তার করা ওভারের সাত বলে মাত্র দুটিতে রান নিতে পারলেন মুক্তার। সব মিলিয়ে ওভারে রান হলো মাত্র ছয়। তাতেই, দুই রানের জয় নিশ্চিত করে ফেলে রাজশাহী।
এর আগে দুপুরে, ব্যাটিংয়ে একই ইনিংসে মুদ্রার দুটো পিঠই দেখে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। ব্যাটিং ঝলকের পাশাপাশি দেখা গেলো তাদের লাইনআপের ভঙুর দশাও।
শুরুটা দারুণ করেছিল তারা। পাওয়ার-প্লের ছয় ওভারে ৪৭ তুলে নেয়ার পর পরের চার ওভারে চার উইকেট হারায় তারা। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে মেহেদি ও সোহানের ৪৯ বলে ৮৯ রানের ঝড়ো জুটি। তাদের বিদায়ের পরই শেষ দুই ওভারে আসে মাত্র ১২।
শেষ পর্যন্ত মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী তাদের ইনিংসে শেষ করে নয় উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেন মেহেদি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ সোহানের। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নিজের ফেরার ম্যাচে মোহাম্মদ আশরাফুল করেন নয় বলে মাত্র পাঁচ।
ঢাকার সেরা বোলার ছিলেন মুক্তার আলি। চার ওভারে মাত ২২ রান দিয়ে উইকেট তুলে নেন তিনটি।
একটি করে উইকেট পান নাসুম আহমেদ, নাঈম হাসান ও মেহেদি হাসান রানা। ওভারপ্রতি দশের বেশি রান দিয়ে নাঈম ও নাসুম করেছেন সাধারণ মানের বোলিং।
জবাবে তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার তানজিদ তামিমকে হারায় ঢাকা। রান নেয়ার সময় বোলার এবাদত হোসেনের সাথে ধাক্কা লাগায় থেমে যেতে হয় তামিমকে। ততক্ষণে স্টাম্প উপড়ে তার বিদায়ঘন্টা বাজিয়েছেন রাজশাহী অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
ইয়াসির আলি রাব্বিকে মেহেদি ফেরালেও দারুণ ছন্দে ছিলেন নাইম শেখ। দারুণ প্রতিশ্রুতিময় সেই ইনিংস শেষ পর্যন্ত থেমে যায় ২৬ রানে। আরাফাত সানিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাইম বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন রনি তালুকদারের হাতে।
তবে সেখান থেকে বিপর্যয় সামলে নেন মুশফিকুর রহিম ও আকবর আলি। তাদের জুটিতে লক্ষ্যের দিকে এগুতে থাকে ঢাকা।
৭১ রানের জুটি ভেঙে রাজশাহীকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন ফরহাদ রেজা। ডিপ স্কয়ার লেগে মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর বলে ফেরার আগে আকবর করেন ২৯ বলে ৩৪।
কিন্তু পরের আট বলে মাত্র আট রান নিতে পারে ঢাকা। জমে ওঠে ম্যাচ। এবাদতকে স্কুপ করতে গিয়ে সোহানের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মুশফিক। ম্যাচের পাল্লা হেলে পড়ে রাজশাহীর দিকে।
শেষ দুই ওভারে রাজশাহীর দরকার ছিল ৩০। ফরহাদ রেজার করা ১৯তম ওভারে তিন ছয় মেরে ২১ রান তুলে নেন মুক্তার। সমীকরণ নামিয়ে আনেন ছয় বলে নয় রানে।
মেহেদির করা শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে কোন রানই নিতে পারেননি মুক্তার। পরের বলে মারেন চার। তার পরের বলেই মেহেদি করে বসেন এক নো-বল। কিন্তু ফ্রি-হিটে ব্যাটে বলই লাগাতে পারেননি মুক্তার। শেষ বলে নিতে পারলেন মাত্র এক রান। আর তাতেই টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে দুই রানের এক রোমাঞ্চকর জয় তুলে নেয় রাজশাহী।
ঢাকার হয়ে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন মুশফিক, আকবর করেন ৩৪। রাজশাহীর হয়ে একটি উইকেট শিকার করেন মেহেদি, ফরহাদ, এবাদত ও আরাফাত সানি কিন্তু চার ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে ম্যাচ নিজের করে নেন মেহেদি।