বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টেস্টে বাংলাদেশের ২০: রোমাঞ্চ ও আক্ষেপের গল্প

  •    
  • ১০ নভেম্বর, ২০২০ ১৫:৪৬

২০০০ সালের ১০ নভেম্বর শুরু হয় বাংলাদেশের টেস্ট যাত্রা। ২০ বছরে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে টেস্টে? উন্নতি হয়েছে কতটুকু?

২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। ব্লেজার পরে পিচে দাঁড়িয়ে দুই বাঙালি। দুজন দাঁড়িয়ে দুই প্রথমের সামনে। ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলির সেটি টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক। নাইমুর রহমান দুর্জয়ের? 

ঠিক তার দলের বাকি ১০ জনের মতো—স্বপ্নপূরণ। বাংলাদেশের যে প্রথম টেস্ট! টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন দুর্জয়। প্রথম টেস্টে খেলতে নামার সময় কেমন লাগছিল তাদের? 

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমেছিলেন শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ও মেহরাব হোসেন অপি। মেহরাব জানান, প্রথম টেস্টে খেলতে নেমে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। 

‘অসাধারণ একটা অনুভূতি ছিল। বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে একাদশে থাকতে পারাটা বিরাট একটা ব্যাপার ছিল। তখন আমি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। সব ক্রিকেটারই টেস্ট খেলার স্বপ্ন থাকে। সেদিন স্বপ্নটা পূরণ হয়েছিল’, বলেন মেহরাব। 

ওপেনাররা ফিরে যাওয়ার পর হাবিবুল বাশার তুলে নেন বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ফিফটি। তাকে ছাড়িয়ে যান আমিনুল ইসলাম বুলবুল; তুলে নেন বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম শতক। তাদের দুজনের ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসেই তোলে ৪০০। 

এরপর ব্যাটিংয়ের পালা ভারতের। নতুন বল অধিনায়ক দুর্জয় তুলে দিয়েছিলেন পেসার হাসিবুল হোসেন শান্তর হাতে। 

‘উদ্দীপ্ত ছিলাম। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলছি। এটা নিজের কাছে একটা গর্বের ব্যাপার। টেস্ট খেলছি, টেস্ট খেলা যে কী খেলা, সেই ধারণাই ছিল না সেই সময়ে। খেলতে হবে, এটাই আসলে মাথার মধ্যে ছিল। ওই সময়ের উত্তেজনা প্রকাশ করাটা আসলে খুবই কঠিন। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলছি, প্রথম ওভারটা করব—এটা বিশাল ব্যাপার’, বলেন শান্ত। 

সাদাগোপ্পান রমেশ, সৌরভ গাঙ্গুলি ও সুনীল যোশির ফিফটিতে ভর করে ভারত শেষ করে ৪২৯ রানে; হাতে পায় ২৯ রানের লিড।

ছয় উইকেট নিয়ে সেই ইনিংসের তারকা ছিলেন অধিনায়ক দুর্জয়; সঙ্গে তিন উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক। রফিকের জন্য সেটি ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। নিজেকে ভাগ্যবান ভাবেন এই কারণে। 

‘যেকোনো নতুন একটা কাজ করতে গেলেই কিন্তু নতুন একটা অভিজ্ঞতা হয়। বাংলাদেশের জন্য সেটি ছিল একটি নতুন অভিজ্ঞতা। আমি মনে করি আমি ভাগ্যবান যে আমি বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে ছিলাম’, বলেন বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে প্রথম ১০০ উইকেট নেয়া এই স্পিনার। 

দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতায় সেই টেস্ট বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। তবে প্রথম টেস্টের লড়াই দেখে বাংলাদেশের টেস্ট ভবিষ্যৎ নিয়ে উচ্চাশাই ছিল সকলের। কিন্তু তা কি সত্য হয়েছে গত ২০ বছরে? 

২০ বছরের অন্যতম বড় অর্জন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়। ছবি: বিসিবি 

 

গল্পটা আক্ষেপের 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) টেস্ট র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নয় নম্বরে। সাবেক ব্যাটসম্যান মেহরাব হোসেন অপির মতে, র‍্যাংকিংয়ে সেটার প্রতিফলন না থাকলেও বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের মান বেড়েছে এই ২০ বছরে। 

‘আপনি যদি র‍্যাংকিংয়ের দিকে তাকান তাহলে কিন্তু আমরা এখনও অনেক পেছনে। কিন্তু স্ট্যান্ডার্ডের দিকে যদি তাকান, আমরা যখন শুরু করেছিলাম তার তুলনায় স্ট্যান্ডার্ড এখন অনেক ভালো’, বলেন বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ওয়ানডে শতক তুলে নেয়া এই ব্যাটসম্যান। 

হাসিবুল হোসেন শান্তর মতে, বাংলাদেশ এখনও তাদের প্রত্যাশার জায়গায় পৌঁছায়নি। তার মতে, এর পেছনের কারণ বাংলাদেশের টেস্ট কম খেলা। 

‘সত্যি কথা বলতে ওইভাবে পৌঁছায় নাই। তারপরও বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাস যদি দেখেন, বাংলাদেশ কিন্তু পাঁচ টেস্টের সিরিজ এখনও খেলেনি। বাংলাদেশ হাইয়েস্ট তিনটা টেস্টের সিরিজ খেলেছে। আমাদের কিন্তু টেস্ট কম খেলা হয়। ওই হিসাব করলে বলবো যে হ্যাঁ, টেস্টে আমরা পিছিয়ে আছি’, বলেন শান্ত।

‘কিন্তু প্লেয়াররা যদি আরেকটু বেশি করে লঙ্গার ভার্সন খেলতে পারে, তাহলে আমার মনে হয় যে, টেস্টে আমরা যে পিছিয়ে আছি এটা কভার হবে। তবে সত্যি কথা বললে, ২০ বছরে যা হবার কথা ছিল, সেটা থেকে একটু হলেও পিছিয়ে আছি’, যোগ করেন তিনি।

মোহাম্মদ রফিক অবশ্য সমালোচনা করলেন কড়া ভাষাতেই। তার মতে, বাংলাদেশ টেস্টে যেখানে ছিল, ঠিক সেখানেই আছে এখনও। 

‘আমি শতভাগ বলতে পারি যে, টেস্টে আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানেই আছি। টেস্টে যদি আপনি উন্নতি না করেন, তাহলে কিন্তু অন্য ফরম্যাটেও উন্নতি করতে পারবেন না। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে ভালো খেলছে। কিন্তু সেটির ধারাবাহিকতা রাখতে হলে টেস্ট ক্রিকেটকেও একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে; ভালো একটা অবস্থানে থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় চিন্তাটা হতে হবে টেস্টে কীভাবে আমরা আরও ভালো অবস্থানে আসব, পাঁচ-ছয়ে কীভাবে থাকব’, বলেন তিনি। 

এগিয়ে না যাওয়ার কারণ হিসেবে রফিক বলেন, ঘরোয়াতে যথেষ্ট ম্যাচের অভাব। তিনি বলেন, ‘আগে চার দিনের ম্যাচগুলোয় অনেক প্রতিযোগিতা হতো। আগে ঘরোয়াতে চার দিনের, তিন দিনের ম্যাচ হতো। এখন তো পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচই হয় না!

‘আমরা কিন্তু সেখানেই পিছিয়ে যাচ্ছি। আপনি যদি যথেষ্ট ম্যাচ না খেলেন, তাহলে আপনার অভিজ্ঞতা কোথায় থেকে হবে, আর আপনি পারফর্ম কীভাবে করবেন?’

জুটেছে আফগানিস্তানের সঙ্গে হারও। ছবি: বিসিবি

ওয়ানডেতে বাংলাদেশ সময়ের সঙ্গে এগিয়েছে অনেকটুকুই। টেস্টে সেই উন্নতি এখনও লক্ষণীয় নয়। ১১৯ টেস্টে জয় এসেছে মাত্র ১৪টি; জয়হীন কেটেছে শতাধিক টেস্ট।

সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয় যেমন এসেছে, তেমনি জুটেছে টেস্টে নবাগত আফগানিস্তানের বিপক্ষে হার। 

বিশ পেরিয়ে একুশে পা দিয়ে বাংলাদেশর টেস্ট ক্রিকেট আরও এগিয়ে যাবে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর টেস্ট দল এবং সময়ের হাতে। সেই উত্তর কী হবে, সেটি আপাতত থাক ভবিষ্যতের গর্ভেই।

এ বিভাগের আরো খবর