আজ কি কেক কাটা হবে?
আজ নির্দিষ্ট কোন ক্রিকেটারের নয়, পুরো বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের জন্মদিন। বিশ পেরিয়ে আজ বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট পা রেখেছে একুশে। শুভ জন্মদিন বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট!
একুশ বছর জীবন-সময়ের একটা অনেক বড় মাইলফলক। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট বেশ আগেই সাবালক হয়েছে। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের বয়সও হয়ে গেল!
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ছেলেদের বিয়ের বয়স যে একুশেই শুরু! তবে বয়স বিশ হলেও বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট যে এখনো পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। বয়স বাড়ছে। কিন্তু শরীর রুগ্ন। পরিসংখ্যান ও পারফরমেন্সে প্রোটিনের ঘাটতি স্পষ্ট। নইলে একুশ বছরে পা রাখা একটা দল কেন মাত্র ১৪টি টেস্ট ম্যাচ জিতবে, ড্র করবে ১৬টিতে, আর হেরেছে ৮৯ টেস্টে; তাও আবার একশ’র বেশি ১১৯ টেস্ট ম্যাচ খেলে?
২০০০ সালের এক স্নিগ্ধ সকালে টেস্ট ক্রিকেট পরিবারের দশম সদস্য হয়েছিল বাংলাদেশ। অনেক ঐতিহ্যের স্বাক্ষী বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সেই ইতিহাসের গর্বিত অংশ।
২০০০ থেকে আজ ২০২০ সাল। এক দুই তিন করে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট আজ পা রাখছে পরিণত বিশে। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরের সুখও শেষ। এখন একুশে পা। বয়সটা দায়িত্ব নেয়ার। নিজের পরিচয়কে বিশ্বমণ্ডলে সমৃদ্ধ করার সময়। পরিণত হওয়ার আনন্দময় যাত্রা শুরুর দিন।
তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে- শুরুর ভুল এখন আর করা যাবে না। শুরুর ভুলকে অনেকে ‘এটা শেখার সময়’- এই ব্র্যাকেটে ফেলে হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে উঠে দাঁড়াতে সহায়তা করলেও এখন এই একুশে অন্য মেজাজ দেখাবে পরিচিত-অপরিচিত সবাই। এখন ভুল করলে অনভিজ্ঞতার দোহাই দেয়ার উপায় নেই। বরং সামর্থ্যের ঘাটতিকেই সাফল্য অর্জনে বড় বাধা বলে রায় দেবে সবাই!
পরিণত হওয়ার উদ্দাম আনন্দ আছে। তবে এই সময়ের লড়াইয়ে হঠাৎ করে ‘একা’ হয়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কাও থাকে। এই সময় পুরো পৃথিবী যেন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে! বিশ-একুশের এই সময়ের লড়াইয়ে জিততে না পারলে খুব অল্পতেই রায় চলে আসে- ‘ওকে দিয়ে হবে না!’
আজ একুশে পা রাখা বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের সামনে তাই নতুন চ্যালেঞ্জ। নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করার কঠিন পরীক্ষার গ্রহণকাল। এখন সময় পুরো পৃথিবীর কাছে নিজেকে ‘বিস্মিত’ করে তোলা। তাতে ব্যত্যয় হলে অক্ষমতার ক্ষারকে নিজেই ক্ষয় হতে শুরু করা!
বাংলাদেশের ফেলে আসা ২০ বছরের টেস্ট ইতিহাস খুব একটা সুখকর কিছু নয়। টানা হার দেখা, হোঁচট খাওয়া, সমস্যা- সংগ্রাম এবং কখনো সখনো মাঠের হিসেব বদলে দিয়ে খানিকটা আনন্দময় সময় উদযাপন; আপাতত যোগফলটা এমনই।
এই বিশ বছরে কিছুটা কীর্তি আছে। কেলেঙ্কারিও ছিল। কিঞ্চিত সাফল্য সুখ ছিল। তবে বেশির ভাগ সময় কেটেছে ব্যর্থতার বেদনায়।
টেস্ট ক্রিকেটের উন্নতির প্রধান শর্তই হল দেশের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট কাঠামো এবং এর গুনগত মানের উন্নয়ন। বাস্তবতা জানাচ্ছে পেছনের কুড়ি বছরে এখনো নিতান্তই কুঁড়িতে বাংলাদেশ! বছরে মাত্র ছয়টা প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে টেস্ট ক্রিকেটার খোঁজার স্বপ্নটা, বাসার ছাদে মই লাগিয়ে চাঁদে যাওয়ার মতোই রসিকতাই বটে!
টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের পেছনের সময়টায় আফগানিস্তানের মতো টেস্ট ক্রিকেটে নবীন দলের কাছে হার যেমন দেখেছে বাংলাদেশ, আবার ঠিক তেমন শ্রীলঙ্কার মাটিতে বলে কয়ে তাদের টেস্টে হারিয়েও দেয়ার চমকও দেখিয়েছে। হারিয়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিমানকে। মোহাম্মদ আশরাফুলের কৃতিত্ব দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। লর্ডস টেস্টে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। র্যাংকিং এ সাকিব আল হাসান শাসন করেছেন ক্রিকেট বিশ্ব একক কৃতিত্বে। শতাব্দি পুরানো টেস্ট ক্রিকেটের কিছু অনন্য রেকর্ড বাংলাদেশের নামের পাশে। এখানে ওয়ান ইনিংস ওয়ান্ডার ক্রিকেটারকেও দেখেছে বাংলাদেশ। আবার শুরুতে পিছিয়ে পড়ে ‘ দৌড়’ জেতার মতো প্রতিভাবানকেও পেয়েছে।
তবে বাস্তবতা হলো শুরুর এই বিশ বছরের হিসেবটা পরিস্কার- এখানে অর্জনের তুলনায় অসাফল্যের পরিসংখ্যান নিক্তি বেশি ভারী।
দুর্বল পরিকাঠামো। পরিকল্পনায় দুরদর্শিতার অভাব। পরিচালনায় পেশাদারিত্বের সংকট। নিজস্ব ক্রিকেটীয় সম্পদ, মস্তিস্ক এবং তাদের শক্তি-সামর্থ্যের ওপর আস্থাহীনতা। দ্রুত ছাঁটাই, বেশি বাছাই। অধিনায়কের সীমিত ক্ষমতা। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটকে অবহেলা। যথানিয়মে বছরব্যাপী প্রতিভা অন্বেষণের কার্যকর তাগিদের অভাব। ঘরোয়া ক্রিকেটে পাতানো ম্যাচের মহোৎসব। ক্লাব কর্তাদের ইচ্ছায় আম্পায়ারদের আঙ্গুল তোলার দাসত্বগিরি। মাঠের ক্রিকেটে ঘরে এবং আর্ন্তজাতিক মহলে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার চোখা কারণ মুলত এগুলোই। আর তাই বিশ্বের অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ড হয়েও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পাএরফরমেন্সের পরিসংখ্যান সেই গণি মিয়ার মতোই!
দিন আনি দিন খায়। বেশিরভাগ সময়ে উপোষ!
- এম. এম. কায়সার, ক্রীড়া সম্পাদক, বার্তা২৪