আইসিসির দেয়া নিষেধাজ্ঞার শাস্তি ভোগ করছেন সাকিব আল হাসান। আইসিসির দেয়া প্রথম হলেও, তার ক্যারিয়ারে এটি তৃতীয় নিষেধাজ্ঞা। এর আগে দুই বারই সাকিব নিষিদ্ধ হন ২০১৪ সালে।
প্রথমবার তিন ম্যাচের জন্য। পরের বার প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের জন্য হলেও পরে তা কমিয়ে আনা হয় তিন মাসে।
প্রথম ও দ্বিতীয় বার মিলিয়ে সাকিব খেলতে পারেননি মোট পাঁচ ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি পরিত্যক্ত না হলে সংখ্যাটি হতো ছয়।
এরপর ২০১৯ সালে। পুরো এক বছরের জন্য হলেও করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সাকিব খুব বেশি ম্যাচ মিস করেননি।আরও পড়ুন: সাকিব হওয়া কঠিন
এবারের নিষেধাজ্ঞায় সাকিব ম্যাচ খেলতে পারেননি সব মিলিয়ে ১৫টি। ভারতের সঙ্গে তিনটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি টেস্ট। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে একটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টি টোয়েন্টি। পাকিস্তানের সঙ্গে একটি টেস্ট ও তিনটি টি-টোয়েন্টি।
সব মিলিয়ে ২৩ ম্যাচ। এই ২৩ ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়াই মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ।
২০১৪: সাকিব নেই তিন ম্যাচে
২০১৪ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে চলার সময় টিভি ক্যামেরায় অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হন সাকিব। এই তিন ম্যাচ ছিল শ্রীলংকা, ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। শেষ দুটি ম্যাচ ২০১৪ এশিয়া কাপের।
তিন ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। এমনকি তখন নবাগত আফগানিস্তানের কাছেও! প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে হারের পর ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ভালো করলেও বোলিংয়ে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। ভিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে হেরে যেতে হয় টাইগারদের। এর পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশ হারে তিন বিভাগেই। মেনে নিতে হয় ৩২ রানের পরাজয়।
পরের ম্যাচে ফেরেন সাকিব। তারপরও হেরে যায় বাংলাদেশ। ফেরার ম্যাচে সাকিব পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেন ১৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। বাংলাদেশ করে ওয়ানডেতে তাদের সর্বোচ্চ ৩২৯। তবে শহীদ আফ্রিদি ঝড়ে সে ম্যাচেও জেতা হয়নি স্বাগতিক দলের।
২০১৪: সাকিবকে ছাড়াই উইন্ডিজ সফর
বাংলাদেশ হেড কোচ চণ্ডিকা হাতুড়ুসিংহের সঙ্গে বাজে ব্যবহারের জন্য সাকিবকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিষিদ্ধ করে ছয় মাসের জন্য। সাকিবের নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম সিরিজ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যায় বাংলাদেশ।
প্রথম ওয়ানডেতে টক্কর দিতে পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ সাক্ষী হয় লজ্জার। ১৭৭ রানের পরাজয়ের সেই ম্যাচে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় মাত্র ৭০ রানে। তামিম ইকবাল ছাড়া বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানই সে ম্যাচে দুই অংকের রান পাননি। শেষ ম্যাচেও বাংলাদেশের ভাগ্যে জোটে ৯১ রানের বড় হার।
প্রথম টেস্ট ম্যাচে, ফলো অনে পড়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে লড়াইয়ের ফল হিসেবে ম্যাচ গড়ায় পঞ্চম দিনে। ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় ম্যাচে ফলো অনে না পড়লেও ম্যাচ শেষ হয় চার দিনে। বাংলাদেশের ভাগ্যে জোটে ২৯৬ রানের বিশাল পরাজয়।
সিরিজের পর সাকিবের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনা হয় তিন মাসে। সাকিব ফেরেন জিম্বাবুয়ে সিরিজে।
২০১৯-২০: সাকিবকে ছাড়া এক বছর
২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই ভারতে টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট সিরিজ খেলতে যায় বাংলাদেশ। দিল্লির প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সাত উইকেটের সহজ জয় পায় বাংলাদেশ। সাকিবের নিষিদ্ধাবস্থায় বাংলাদেশের প্রথম জয়। বাকি দুই ম্যাচ হেরে হারতে হয় সিরিজ। তবে সেই সিরিজজুড়েই বাংলাদেশ সমানে সমান টক্কর দিয়েছে ভারতের সঙ্গে।
টেস্টে ছিল পুরো উল্টো ছবি। সাকিবের জায়গায় অধিনায়কত্ব পাওয়া মুমিনুল হকের অধীনে দুই টেস্টই বাংলাদেশ হারে ইনিংস ব্যবধানে। দুটি ম্যাচই শেষ হয় তিন দিনে।
ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফরের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়লেও দ্বিতীয় ম্যাচে পারেনি বাংলাদেশ। দুই ম্যাচই জিতে নেয় স্বাগতিক দল। বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয় তৃতীয় ম্যাচ।
পাকিস্তানের সঙ্গে প্রথম টেস্টের ফলাফলে থাকে ভারত সফরের রেশ। হারতে হয় ইনিংস ও ৪৪ রানের ব্যবধানে। জিম্বাবুয়েকে ঘরের মাঠে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারিয়ে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন একমাত্র টেস্ট জিতে নেয় বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে লিটন দাস ও তামিম ইকবালের দারুণ ব্যাটিংয়ে ৩-০ তে সিরিজ জেতে টাইগাররা। লিটনের ব্যাট ছন্দে থাকে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। সেখানেও জিম্বাবুয়েকে ২-০ তে হারায় বাংলাদেশ।
এরপরই করোনাভাইরাসের কারণে থেমে যায় ক্রীড়া বিশ্ব। বাংলাদেশ আর কোনো সিরিজ খেলেনি, সাকিবকে ছাড়াও আর খেলতে হয়নি বাংলাদেশকে।
হার-জিতের খতিয়ান
তিন দফায় সাকিব না থাকাকালীন বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে মোট ২৪টি। ছয়টি টেস্ট, নয়টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। বৃষ্টিতে পণ্ড হয় দুটি টি-টোয়েন্টি। বাংলাদেশ জেতে তিনটি। বাকি চারটিতে জুটেছে পরাজয়। ছয় টেস্টের পাঁচটিতেই হেরেছে টাইগাররা।
এর মধ্যে তিনটিই ইনিংস ব্যবধানে। নয় ওয়ানডেতে জয় তিনটিতে, বাকি ছয়টিতে হার।
এই পরিসংখ্যান থেকে র্যাংকিংয়ে নিচে থাকা জিম্বাবুয়েকে বাদ দিলে বাংলাদেশ সাকিব নিষিদ্ধ থাকাবস্থায় জেতেনি একটি টেস্টও। ওয়ানডেতেও সংখ্যাটি শূন্য। টি-টোয়েন্টি জিতেছে মাত্র একটি।