সাত মাস পর বাংলাদেশে ক্রিকেট ফেরানো প্রেসিডেন্টস কাপের বিজ্ঞাপন হয়ে ছিল ব্যাটিং ধ্বস। প্রতি ম্যাচেই ব্যাটসম্যানরা খাবি খেয়েছেন রান তুলতে। দল গুটিয়ে গেছে অল্প রানে। অবশেষে শেষ হল ব্যাটসম্যানদের রান খরা। টুর্নামেন্টে প্রথমবার এক ম্যাচের দুই ইনিংসেই ২০০ পার হল রান।
গুরুত্বপূর্ন ম্যাচে জয় ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না মাহমুদুল্লাহ একাদশের। ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে তামিম একাদশের বিপক্ষে জয় জরুরী ছিল তাদের। ডু-অর-ডাই ম্যাচে ভুল করেনি তারা। তামিমদের বিপক্ষে চার উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয় মাহমুদুল্লাহর দল।
ইয়াসির আলি চৌধুরী ও মাহিদুল ইসলামের ফিফটি এবং মোসাদ্দেক হোসেন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের শেষ দিকের ঝড়ে প্রথমে ব্যাট করে তামিম একাদশ সংগ্রহ করে ২২১। জবাবে শুরুতে দুই ওপেনার হারালেও, মাহমুদুল হাসান জয় ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ফিফটিতে চার উইকেট হাতে রেখে ২২২ রানের লক্ষ্য টপকে যায় মাহমুদুল্লাহ একাদশ।
ম্যাচসেরা ও ম্যাচের সেরা বোলার নির্বাচিত হন রুবেল হোসেন। সেরা ব্যাটসম্যানের পুরষ্কার পান মাহমুদুল হাসান। সেরা ফিল্ডার নির্বাচিত হন লিটন দাস।
ম্যাচে হারের পর কিছুটা দুশ্চিন্তায় তামিম একাদশ। ফাইনালে পৌছানোর জন্য লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে নাজমুল একাদশকে হারাতেই হবে। তারপরও ফাইনাল নিশ্চিত নয়। পরের ম্যাচে তামিম একাদশ জয়ী হলে তিন দলের সংগ্রহ দাঁড়াবে চার পয়েন্টে। হিসেব তখন হবে নেট রান রেটের। সেখানে আপাতত এগিয়ে নাজমুল একাদশ। তামিম একাদশ আশা করবে জয় দিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেবেন তারা।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে খেই হারিয়ে ফেলে তামিমের দল। টপ অর্ডারে তামিম ইকবাল, তানজিদ হাসান তামিম, এনামুল হক বিজয় ও মোহাম্মদ মিঠুন উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন শুরুতেই।
সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন ইয়াসির ও মাহিদুল। তাদের ১১১ রানের জুটিতে বিপদ সামলে ওঠে তারা। পায় লড়াই করার পুঁজি।
টুর্নামেন্টে প্রথমবার সুযোগ পেয়ে বাজিমাত করেন ইয়াসির। তুলে নেন নিজের ফিফটি। ফিফটি পেরিয়ে ইনিংস বড় করার সময় মাহিদুলের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে ৬২ রানে আউট হন ইয়াসির।
অন্যপ্রান্তে ১০৩ বলে ধীরস্থির অর্ধশতক তুলে নেন মাহিদুল। তাকেও ফিরতে হয় ফিফটি ছোঁয়ার পর। রুবেলের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন সাব্বির রহমানের হাতে।
তাতে থমকে যায়নি তামিম একাদশ। মোসাদ্দেক ও সাইফুদ্দিনের ৫১ বলে ৭৫ রানের ঝড়ো জুটিতে শেষ পর্যন্ত তারা থামে ২২১ রানে।
চার উইকেট নিয়ে মাহমুদুল্লাহ একাদশের হয়ে সেরা বোলার ছিলেন রুবেল হোসেন। দুটি উইকেট শিকার করেন এবাদত হোসেন। প্রথম ইনিংস শেষ হবার পরই আঘাত হানে বৃষ্টি। তবে সেই বাধায় নষ্ট হয়নি সময়।
তাড়া করতে নামা মাহমুদুল্লাহর দলের ব্যাটিংয়েও ছিল একই দৃশ্য। শুরুতে সাইফুদ্দিন ও মুস্তাফিজুর রহমানের শিকার হয়ে ফিরে যান দুই ওপেনার নাইম শেখ ও লিটন দাস। বিপদ আর বাড়তে দেননি ইমরুল কায়েস ও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য মাহমুদুল।
তাদের ৮৪ রানের জুটি আগায় আস্কিং রেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। ৪৯ রানে খালেদ আহমেদের ডেলিভারিতে পরাস্ত হন ইমরুল। পয়েন্টে দারুণ ক্যাচ নিয়ে তার বিদায় নিশ্চিত করেন মেহেদি হাসান।
তবে থেমে থাকেননি মাহমুদুল। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে গড়েন আরেকটি জুটি। ৮৬ বলে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। তাইজুল ইসলামের বলে ভেঙে যায় মাহমুদুল্লাহ এর সঙ্গে তার ৫৬ রানের জুটি।
সেখান থেকে নুরুল হাসান সোহানকে সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান মাহমুদুল্লাহ। ৭০ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া মাহমুদুল্লাহ আউট হন ৬৭ রানে। সোহান কোন ভুল করেননি। এক রান বাকি থাকতে সাইফুদ্দিনের বলে সাব্বির বিদায় নিলেও, তিনি ২৬ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে ফেরেন।
তামিম একাদশের সেরা বোলার ছিলেন সাইফুদ্দিন, তিনি তুলে নেন তিন উইকেট। একটি করে উইকেট পান মুস্তাফিজুর রহমান, খালেদ আহমেদ ও তাইজুল ইসলাম।