অপেক্ষাটা দীর্ঘ হলো না। কবে রান পাবেন মুশফিকুর রহিম? এমন প্রশ্নের জবাবে এই টুর্নামেন্টে তার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন ম্যাচের আগে জানিয়েছিলেন মুশফিকের মাপের ব্যাটসম্যান যেকোনো দিন ফিরতে পারেন রানে।
অধিনায়কের কথা সত্যি হল বৃহস্পতিবার। চিরচেনা শের-ই-বাংলায় আরও একটা তিন অঙ্কের ইনিংসে খেলে মুশফিক জানান দিলেন তার ক্লাস। তবে, সতীর্থদের ব্যর্থতায় হারতে হল তার দলকে। তৃতীয় ম্যাচে ৪২ রানে নাজমুল একাদশনে হারিয়েছে তামিম একাদশ।
আগে ব্যাট করে ২২১ রানে পৌছেছিল তামিম একাদশ। জবাবে নাজমুল একাদশ করতে পারে মাত্র ১৭৯। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে মুশফিক ১০৩ রান করলেও, তার ইনিংস কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে।
মুশফিকের সেঞ্চুরি ছাড়া বাকিদের কোনো রকম অবদানই ছিল না ইনিংসে। বাকি নয় ব্যাটসম্যান মিলে করেছেন ৭৬। মুশফিকসহ মাত্র তিন জন পৌছাতে পেরেছেন দুই অংকের বেশি রানে। বাকিরা ফিরেছেন তার আগেই।
ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন তামিম একাদশের মেহেদি, ম্যাচের সেরা ব্যাটসম্যান হয়েছেন মুশফিক। সেরা বোলার মুস্তাফিজুর রহমান ও সেরা ফিল্ডার মোসাদ্দেক সৈকত।
তামিম একাদশের জয়ে টুর্নামেন্টে তিন দলেরই পয়েন্ট সমান। দুই ম্যাচ খেলে সবাই পেয়েছে একটি জয়। সবার সংগ্রহ দুই পয়েন্ট।
এর আগে দুপুরে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে এক সময় ১২৫ রানেই আট উইকেট হারিয়ে ফেলে তামিম একাদশ। সেখান থেকে মেহেদি হাসানের একক নৈপুণ্যে ২২১ রানের সংগ্রহ গড়ে তারা, ৫৭ বলে ৮২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। মেহেদি অর্ধশতকে পৌছান ৪৪ বলে, পরের ১৩ বলে চালান তাণ্ডব, তুলে নেন ৩০ রান।
রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই খেই হারান নাজমুল একাদশের ব্যাটসম্যানরা। প্রথম দশ ওভারে তারা হারায় দুই উইকেট। তামিম একাদশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান আসে মাত্র ১৬। বিদায় নেন সাইফ হাসান ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
শুরুর স্পেলে অসাধারণ বোলিং করেন মুস্তাফিজুর রহমান। পাঁচ ওভারে দুই মেইডেন দিয়ে পাঁচ রান খরচায় তুলে নেন দুই উইকেট।
১৫তম ওভারে সাইফুদ্দিনের দারুণ এক ইয়র্কারে ফিরে যাওয়ার আগে সৌম্য সরকার খেলেন স্বভাববিরোধী ধীরগতির ইনিংস। নয় রান তুলতে তিনি ব্যয় করেন ৪৭ বল। আফিফ হোসেন আর তৌহিদ হৃদয়কে ফেরান শরিফুল হাসান। পাঁচ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে চায় নাজমুলের দল।
সেখান থেকে ইরফান শুক্কুরকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেন মুশফিকুর রহিম। শুরুতে সাড়ে চারের আশেপাশে থাকা আস্কিং রেইট চলে যায় সাতের ওপরে।
দুজনের পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি ভাঙে ভুল বোঝাবুঝিতে। ২৪ রানে রান আউট হয়ে ফিরতে হয় ইরফানকে।
পরের ওভারেই এক সঙ্গে ফিরে যান নাঈম হাসান ও রিশাদ হোসেন। একা হয়ে পড়েন মুশফিক। আস্কিং রেইটও ছাড়িয়ে যায় আট রান।
এক প্রান্ত আগলে রাখেন অভিজ্ঞ মুশফিক। কাউন্টার অ্যাটাক করে তুলে নেন নিজের সেঞ্চুরি। ৪৪তম ওভারে সাইফুদ্দিনকে পরপর দুই চারে তিন অংক ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। পঞ্চাশ করতে খেলেছেন ৬১ বল। পরের পঞ্চাশ আসে ৪২ বলে।
সেঞ্চুরির পরই মুশফিককে ফেরান মুস্তাফিজ। শেষ উইকেটটি তুলে নিতেও দেরি করেনি তামিমের দল। পরের ওভারেই তাসকিন আহমেদকে এনামুল হক বিজয়ের ক্যাচ বানান সাইফুদ্দিন। তামিম একাদশ পায় ৪২ রানের জয়।
তামিম একাদশের শরিফুল চার উইকেট পান। মুস্তাফিজ আট ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন। অন্য দুই উইকেট শিকার করেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।
এর আগে, দুপুরে টস জিতে তামিম একাদশকে ব্যাট করতে পাঠান নাজমুল হোসেন। টানা দ্বিতীয় ম্যাচেও ব্যর্থ হয় তামিমের দলের টপ অর্ডার। দ্বিতীয় ওভারেই বিদায় নেন তানজিদ হাসান। আল-আমিন হোসেনের বলে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এই বাঁহাতি।অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গে জুটি গড়েন এনামুল বিজয়। তাসকিন আহমেদের বলে স্লিপে সৌম্য সরকারের দারুণ ক্যাচের শিকার হয়ে তাকে ফিরতে হয় ১২ রানে।
এরপর নাঈম হাসানের জোড়া আঘাতে ফিরে যান মোহাম্মদ মিথুন ও তামিম। মোসাদ্দেক হোসেন ও শাহাদত হোসেন মিলে দলকে আশা দেখালেও, সেই জুটি থেকে আসে ৪০ রান। রিশাদ হোসেনের বলে ফিরে যান মোসাদ্দেক।
ততক্ষণে আগের ম্যাচের সংগ্রহ ছাপিয়ে গেছে তামিম একাদশ। এরপরই একে একে উইকেট দিয়ে আসেন আকবর আলি, শাহাদাত হোসেন ও সাইফুদ্দিন। দ্রুত ১০৫/৫ থেকে ১২৫/৮ এ পরিণত হয় তামিমের দল।মেহেদির ব্যাটিংয়ের সময় বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে ঘন্টাখানেক। বিরতির পর মেহেদি এবং তাইজুলের ব্যাটে টুর্নামেন্টের প্রথম দল হিসেবে ২০০ ছাড়ায় তামিম একাদশ।
মেহেদি নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৪৪ বলে। পঞ্চাশের পর ১২ বলে ৩২ রান করেন মেহেদি। তামিম একাদশের স্কোর পেরিয়ে যায় ২২০।
তিন উইকেট নিয়ে নাজমুল একাদশের সেরা বোলার ছিলেন আল আমিন হোসেন। রিশাদ হোসেন ও নাঈম হাসান তুলে নেন দুটি করে উইকেট। মুকিদুল ও তাসকিন শিকার করেন একটি।