গতির ঝড় তুলে তাসকিন আহমেদের যাত্রা শুরু দেশের ক্রিকেটে। বিপিএলে নিয়মিত ১৪০/১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করার পর ২০১৪তে সুযোগ হয় লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চাপানোর। অভিষেকটাও ছিল মনের মত, ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট।
ছন্দ ধরে রাখেন পরের দুই বছর। ২০১৫ বিশ্বকাপে খরুচে হলেও উইকেট পেয়েছেন। জাতীয় দলে তার ছন্দপতনের শুরু ২০১৬ সালের শেষভাগে। গত চার বছর এক সময়ে স্কোয়াডে অপরিহার্য তাসকিন হয়ে পড়েছেন অনিয়মিত।
এই বছর করোনাভাইরাস-পরবর্তী স্কিল ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন তিনি। লকডাউনে ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন, ফলস্বরূপ বোলিংয়ে ফিরে এসেছে পুরনো গতি ও ধার। নিউজবাংলার সাথে আলাপচারিতায় তাসকিন জানালেন, পুরনো ভুলগুলো আর করতে চান না, খেলতে চান তিন ফরম্যাটেই। শ্রীলংকা সফর বাতিল হওয়ায় হতাশ তিনি, তবে তাসকিনের লক্ষ্য যেখানে সুযোগ পান সেখানেই পারফর্ম করা। কেননা, তার জন্য প্রতিটি খেলাই এখন নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ।
নিউজবাংলার সঙ্গে তাসকিনের আলাপচারিতার বিস্তারিত:
লকডাউনে ফিটনেস নিয়ে কী ধরণের কাজ করেছেন?
ফিটনেসের জন্য লকডাউনের সময় পার্সোনাল ট্রেনার নিয়ে বেশ ফোকাসড ছিলাম। ওজন কমিয়েছি এবং স্ট্রেংথও আগের চেয়ে বেড়েছে। ডায়েট খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব কিছু মিলিয়েই মেইনটেইন করার চেষ্টা করেছি এবং করছি।
আপনি কি আপনার বর্তমান ফিটনেস নিয়ে সন্তুষ্ট?
আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে তবে আমার লক্ষ্য আরও উন্নতি করা। কারণ ওয়ার্ল্ড ক্লাস অ্যাথলিট হতে হলে ফিটনেসের বিকল্প নেই। ফাস্ট বোলার হিসেবে ফিটনেস যদি আরও উন্নত হয় ভবিষ্যতে, তাহলে দক্ষতা আরও বাড়বে আশা করি।
শ্রীলংকা সফর বাতিল হয়ে যাওয়ায় হতাশা কাজ করছে কি?
খারাপ তো লাগছেই। কারণ, অনেকদিন পর ক্রিকেট খেলা শুরু হতে যাচ্ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি হল না। হলে খুবই ভালো হতো। কিন্তু আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
২০১৯ সালের নিউজিল্যান্ড সফরে ইনজুরির জন্য সুযোগ পাননি, এবার সিরিজই বাতিল হয়ে গেল, নিজেকে কি দুর্ভাগা মনে হচ্ছে?
না না, তেমন কিছু মনে হয় না। হয়ত আল্লাহ আমাকে সুযোগ দিয়েছেন আমার ফিটনেস কিংবা স্কিল নিয়ে কাজ করার। জানুয়ারিতে খেলা আছে। এছাড়া সামনের দুই বছর কিন্তু অনেক খেলা। ফিট থাকলে অনেক খেলা যাবে।
অনুশীলনে দারুণ ছন্দে বোলিং করছেন, ছন্দ ফিরে পাওয়ায় কেমন লাগছে?
এতদিন ফিটনেস নিয়ে কাজ করছিলাম, এটার জন্যই হয়ত বোলিংয়ের ছন্দ খুঁজে পেয়েছি, উন্নতি হয়েছে। আমি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য পরিশ্রম করব সামনে।
তিন ফরম্যাটেই খেলার ইচ্ছা আছে কি?
তিন ফরম্যাটেই খেলতে চাই। যে ফরম্যাটেই আমাকে সুযোগ দেয়া হোক না কেন, আমি আমার সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করব।শ্রীলংকা সফর না হলেও হতে যাচ্ছে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট, সেখানে আপনার লক্ষ্য কী?
আমার লক্ষ্য নিজের সেরা পারফর্ম করা। কারণ, আমার জন্য এখন প্রতিটা ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ, হোক সেটি আন্তর্জাতিক কিংবা ঘরোয়া। আমি চেষ্টা করব নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে ভাল করার।
দারুণ শুরুর পর মাঝখানে মুদ্রার উলটো পিঠে দেখেছেন, এই উত্থান-পতন কি আপনাকে আরও পরিণত করে তুলেছে?
আসলে জীবনের প্রতিটা ব্যাপারে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে। আমার লক্ষ্য থাকবে যেই ভুলগুলোর জন্য আমি একটু পিছিয়ে পড়েছিলাম, সেই ভুলগুলো যেন আর না হয়। এবং এই ব্যাপারগুলো আসলে আপনাকে আরও পরিণত হতে সাহায্য করে।
বিয়ের পর কি আরও পরিণত হয়েছেন?
বিয়ের পরে পরিণত হয়েছি, এমন নয়। কিন্তু এই সময়টা পুরোটা মিলিয়েই আমি আরও পরিণত হয়েছি।
গতির ঝড় তুলেই আপনার শুরু, মাঝখানে সেই গতি আর দেখা যাচ্ছিল না, এখন কি সেই পুরনো গতি ফিরে পেয়েছেন বা পাচ্ছেন?
আগের থেকে বেটার। আমার অ্যাকুরেসি, সুইং এগুলো তো আছেই কিন্তু এগুলোর সাথে আমার গতি লাগবেই কারণ আমি একজন ফাস্ট বোলার। গতির সাথে অ্যাকুরেসি, ভ্যারিয়েশন নিয়েও কাজ করছি কিন্তু গতি যেন আমার না হারায় এই বিষয়ে আমি সতর্ক।
বোলিং এর কোন বিষয়টিতে উন্নতি করা নিয়ে এখন কাজ করছেন?
সবকিছু নিয়েই কাজ করছি এখন, অ্যাকুরেসি, গতি, মুভমেন্ট।
ওটিস গিবসনের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগছে? তিনি কি কোন বিশেষ কিছু শেখাচ্ছেন বা কোন বিশেষ টিপস দিচ্ছেন?
উনার সাথে কাজ করে উপভোগ করছি। এখন পর্যন্ত তিনি বিশেষ কিছু করার বিষয়ে কোন পরামর্শ দেননি। কিন্তু লকডাউনের সময় খালেদ মাহমুদ সুজন স্যার ও মাহবুব আলি জাকি স্যার আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন। আমি এই সময়ে তাদের ভিডিও পাঠিয়ে পাঠিয়ে বোলিং ড্রিল বা এক্সারসাইজগুলো করেছি।