পেঁয়াজ উৎপাদনে রাজবাড়ী জেলা দেশের মধ্যে তৃতীয়। মাটি ও আবহাওয়ার প্রভাবে জেলায় উৎপাদিত পেঁয়াজের মান তুলনামূলক ভালো। তবে এ বছর পেঁয়াজের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় জেলার কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। তারা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত বছরের চেয়ে এ বছর আড়াই হাজার হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে।
রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলায়ই প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সদর, বালিয়াকান্দি, কালুখালী ও পাংশা উপজেলায় উৎপাদন অপেক্ষাকৃত বেশি।
মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন পেঁয়াজ তুলতে। অনেকেই শ্রমিক না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ ওঠাচ্ছেন।
কৃষকরা জানান, এমনিতেই পেঁয়াজের দাম নেই, তার ওপর আকাশে মেঘ জমছে, বৃষ্টি হলে সব শেষ হয়ে যাবে। রাজবাড়ীতে দুই ধরনের পেঁয়াজ আবাদ হয়। হালি পেঁয়াজ ও মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এখন হালি পেঁয়াজ তুলছেন কৃষকরা।
পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় এবার লোকসান হচ্ছে বলে জানান চাষিরা।
কৃষকরা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে খরচ হয়েছে ২৫-৩০ হাজার টাকা। এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকা মণ। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচই উঠছে না।
কৃষকরা বলেন, ‘এখন আমাদের দেশে যে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, তাতেই দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এই মুহূর্তে ভারতের এলসি পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করা জরুরি।’
সদর উপজেলার চন্দিনী ইউনিয়নের কৃষক পরিমল মালাকার জানান, তিনি তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে পেঁয়াজ ক্ষেত করেছেন। ২ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বীজ কিনে, সার, ওষুধ, সেচ, শ্রমিকের মজুরি দিয়ে তার খরচ হয়েছে বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, ‘প্রতি মণ উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ১ হাজার টাকা। সেখানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা মণ। এতে মণপ্রতি লোকসান হচ্ছে ২০০ টাকা। তারপর ভারতের এলসি পেঁয়াজ আসছে বাজারে। এই পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করতে হবে।’
আরেক কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করি। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকার ওপর। প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ হবে ৩৫ মণের মতো।
‘পেঁয়াজের বাজার ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে থাকলে কৃষক বাঁচত। ভোক্তাদেরও অতিরিক্ত দাম দিতে হতো না। এখনই পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ করলে দেশের কৃষক বাঁচবে।’
কৃ্ষক আজাদ হোসেন বলেন, ‘৭০০ টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি করে শ্রমিকরেই দ্যায় কি আর গৃহস্তেরই থাকে কি। প্রতিটি শ্রমিকের দাম ৬০০ টাকা করে। এ অবস্থায় ভারতে থেকে এলসি পেঁয়াজ আমদানি করা বন্ধ করতে হবে।’
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম সহীদ নূর আকবর নিউজবাংলাকে জানান, সারাদেশে পেঁয়ার উৎপাদনে রাজবাড়ীর অবস্থান তৃতীয়। এ জেলায় গত বছরের চেয়ে চলতি বছর আড়াই হাজার হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। মোট ৩৪ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে এবার পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ টন।
পেঁয়াজের দাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে থাকলে কৃষকরা লাভবান হতেন বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।