বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এই ‘বাড়ির’ ছেলেটি স্কুলে পড়ে

  •    
  • ৩১ মার্চ, ২০২২ ০৮:১৫

মানিকগঞ্জ পৌরসভার বেউথা সেতুর কাছে কালীগঙ্গা নদীর চরে পলিথিন আর বাঁশ দিয়ে তৈরি ছোট একটি টং ঘর। ঘরের আশপাশে বস্তাভরা ভাঙ্গারি। আর দরজার সামনে রয়েছে পুরোনো একটি ভ্যান গাড়ি।

বসবাসযোগ্য না হলেও ময়লা-আবর্জনার স্তূপের মতো দেখতে এই টং ঘরের বাসিন্দা তিনজন। স্থানীয় একটি বাজারে পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন বাড়ির কর্তা দেলোয়ার হোসেন। তার স্ত্রী রোমেজা বেগম ভাঙ্গারি টোকান। আর বেলা বাড়লে যার আশায় রোমেজা বসে থাকেন, সে তারই ছেলে রতন। স্কুলে পড়ে! ক্লাস ওয়ান।

স্কুল থেকে ফিরলেও বসে থাকার জো নেই রতনের। কারণ তারপরই মায়ের সঙ্গে ভাঙ্গারি টোকাতে যায় সে। সারা দিন টোকাইয়ের কাজ করে ফেরে সেই সন্ধ্যায়।

প্রবল ইচ্ছা থাকলেও এই টং ঘরে পড়াশোনার সুযোগ খুব কমই পায় রতন। কারণ বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সন্ধ্যার পর এখানে নেমে আসে অন্ধকার।

তবু পড়াশোনা করে অনেক বড় মানুষ হতে চায় রতন। আর সরকারের কাছে শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই চায় তার পরিবার।

নিজেদের জায়গাজমি এমনকি মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই বলেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন মানিকগঞ্জের শিবালয়ের শ্রীবাড়ির দেলোয়ার। কখনো রাস্তায় আবার কখনো নদীর বুকে টং ঘরে।

দেলোয়ার-রোমেজা দম্পতির চার সন্তান হলেও অভাব-অনটনের জন্য যমজ দুই সন্তানকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে নানির কাছে। আরেক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ পৌরসভার বেউথা সেতুর কাছে কালীগঙ্গা নদীর চরে পলিথিন আর বাঁশ দিয়ে তৈরি ছোট একটি টং ঘরে দিন পার করছে পরিবারটি। ঘরের আশপাশে বস্তাভরা ভাঙ্গারি। ঘরের দরজার সামনে রয়েছে পুরোনো একটি ভ্যান গাড়ি।

দুপুরের খাবার খেয়ে রতনসহ এই ভ্যান আর বস্তা নিয়ে ভাঙ্গারি সংগ্রহের জন্য বের হবেন রোমেজা। মায়ের সঙ্গে ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে রতন।

রতনের বাবা দেলোয়ার বলেন, ‘১০ বছর আগে বাড়ি থেকে আমাকে খেদায়ে দেয়। এরপর বউ আর তিন ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াইছি। মানুষের বাড়িতে, হাট-বাজারে কাজের টাকা দিয়ে ভাড়া বাসায় থাকছি, কিন্তু ঠিকমতো খাইতে পারি নাই। খুব কষ্টে আমাদের দিন চলে। অভাবের কারণে ভাড়া বাসা ছাইড়া দিছি। এরপর এই বেউথা নদীর চরে পলিথিন দিয়ে টং ঘর বানায়ে বউ পোলাপান নিয়ে থাকতেছি।’

দেলোয়ার আরও বলেন, ‘আমি বেউথা বাজারে পরিষ্কারের কাজ করি। যে টাকা কামাই তা দিয়া সংসার চলে না। এর জন্য ছোট ছেলেকে নিয়ে বউ রাস্তায় ভাঙ্গারি টোকায়। সরকার যদি একটু সাহায্য করত, তাহলে খুশি হইতাম।’

রতনের মা রোমেজা বলেন, ‘স্বামীর আয়ে সংসার চলে না। তাই ছোট ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভাঙ্গারি টুকাই। স্বামীর আর আমার টাকা দিয়া কোনো মতে দিন পার করি। ঠিকমতো খাইতেও পারি না। এক টুকরা জাগাজমি নাই যে ধারদেনা করে ঘর বানামু। এখন নদীর চরে থাকতেছি, বন্যা এলে রাস্তার পাশে থাকি। সরকার যদি আমাগো একটু দেখত, তাইলে পোলাপান নিয়ে একটু শান্তিতে থাকতে পারতাম।’

প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী রতন মিয়া বলে, ‘মা ভাঙ্গারি টোকায়, আর আমি ভ্যান চালাই। আসলে ভ্যান চালাতে মায়ের খুব কষ্ট হয়।’

পরিবারটির প্রসঙ্গ তুললে স্থানীয় অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, ‘যেহেতু আমাদের সংবিধানে নাগরিকের বসবাস নিশ্চিত করার কথা আছে। সেহেতু কেউ বসতিহীন থাকতে পারে না। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দায়িত্ব বসতিহীন খুঁজে বের করা এবং তাদের বসতভিটার ব্যবস্থা করা।’

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ জানান, নিউজবাংলার মাধ্যমে জানার পর ওই পরিবার সম্পর্কে জানতে ইউএনওকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদি তাদের জমি থাকে, তাহলে আমরা এক ধরনের ব্যবস্থা নেব। আর যদি নিজস্ব জায়গা না থাকে, তাহলে তাদের বাসস্থানের জন্য আমরা চেষ্টা করব।’

এ বিভাগের আরো খবর