রাজবাড়ী জেলার পাংশা-কালুখালী-বালিয়াকান্দি উপজেলার ফসলি মাঠজুড়ে চোখে পড়বে সাদা ফুলের সমারোহ। কৃষকরা ওই ফুলকে কদম ফুল বা কালো সোনা বলে ডাকলেও তা আসলে পেঁয়াজের বীজ। বেশি দাম হওয়ায় পেঁয়াজের এ বীজকে চাষিরা ‘ব্ল্যাকগোল্ড বা কালোসোনা’ বলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পেঁয়াজ ফুলের বাগানে কেউ ওষুধ স্প্রে করছে, কেউ আগাছা তোলার কাজ করছে। অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভজনক এ ফসল ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এই জেলার কৃষকদের মাঝে। কিন্তু এ বছর মৌমাছির সংকটে পেঁয়াজ বীজে পরাগায়ন না ঘটায় হতাশ বীজ উৎপাদনকারী চাষিরা।
কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের কৃষক জলিল মোল্লা জানান, তিনি এ বছর ৪৮ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন। এ বছর ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে ভালো ফলনের আশা নেই, মৌমাছি নেই, ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে। এ বছর প্রচুর খরচ হয়েছে। এক কেজি বীজ কিনতে খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা, ফলে তাকে এখন লোকসান গুণতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো কৃষি কর্মকর্তারা আসেন নাই। এই পরিস্থিতিতে কি করা উচিত?’
জেলায় পেঁয়াজ আবাদে যে পরিমাণ বীজ প্রয়োজন তার অধিকাংশ বীজ রাজবাড়ীতেই উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত এসব বীজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।
বিঘা প্রতি প্রকার ও মানভেদে ৬ থেকে ১০ লাখ টাকার বীজ বিক্রি হয়। এ বীজ আবাদ করে চাষিরা অন্য ফসলের চাইতে অধিক পরিমাণে লাভবান হোন।
কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে কৃষি বিভাগ বলছে, তারা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছে।
আরেক কৃষক আলতাব প্রামানিক বলেন, ‘বৃষ্টিতে এবার খুব ক্ষতি হয়ে গেছে। মৌমাছি না থাকায় বীজ হচ্ছে না, ফুল শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। গত বছর এক বিঘায় যে বীজ হয়েছিল এবার চার বিঘা জমিতেও সেই বীজ হবে না। তা ছাড়া যদি বৃষ্টি হয় তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।’
শাবানা বেগম বলেন, ‘খরচের কথা তো কয়াই যাবে না। এক কেজি দানার দাম পাঁচ হাজার টাকা। সেই দানাডা এবার হতেইছে না মাইর চলে গেলো। এই দানা হবি কি, বৃষ্টি হলিই শ্যাষ। তালি কৃষক কীভাবে বাঁচপি। যারা কেনেচে এক কেজি দানা পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে, চারা দিছে সেই জিনিস যদি মাইর যায় তাহলি কৃষক বাঁচে থাকপি ক্যাম্নে।
‘মাছি নাই বলেই তো হবি নে। মাছি থাকলি তো তাও কিছু হতে নে। বৃষ্টিতে মধু ঝরে গেছে তাই মাছি নাই। এখন ধরেন এটা নিয়ে কষ্টই। কৃষক মরবি, কৃষকের কিছুই নাই।’
রাজবাড়ী কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ১৯৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়েছে। গত বছর যা ছিল ১৭৭ হেক্টর। পেঁয়াজ বীজ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে এর আবাদ। এ বছর জেলায় ৯৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সহীদ নূর আকবর বলেন, ‘পেঁয়াজের পরাগায়নের ক্ষেত্রে মৌমাছি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে না। কারণ পেঁয়াজের ফুল সাদা হয় এবং রেণু শুষ্ক হওয়ায় মৌমাছির আকর্ষণ কম থাকে।’
তিনি জানান, কৃষকদের পরামর্শের জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় কৃষকদের পাশে থাকে। তবে পেঁয়াজ বীজের জন্য ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি ক্ষতিকর। এই মুহূর্তে বৃষ্টি হলে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
সহীদ নূর আরও বলেন, ‘ডাল, তেল, মসলা, পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে কৃষকরা এসএমই প্রকল্পের মাধ্যমে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করছে। সারা দেশে রাজবাড়ীর পেঁয়াজ বীজ চাষে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।