ঢাকার সাভারে প্রায় দুইশ গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ার অভিযোগ উঠেছে একটি সমবায় সমিতির মালিকদের বিরুদ্ধে।
চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ নামে ওই সমিতিতে লগ্নিকৃত এফডিআর ও সঞ্চয়ের লাখ লাখ টাকা হারিয়ে দিশেহারা গ্রাহকরা। সমিতির মালিকানাধীন জায়গাটিও গোপনে বিক্রি করে মালিকপক্ষ সটকে পড়ায় পাগলপ্রায় তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ১৭ বছর ধরে সমিতিটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। বলা হয়েছিল, সর্বশেষ সমিতিতে জমা রাখা প্রতি লাখের বিপরীতে ১৮০০ টাকা করে লাভ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। তাই বেশি লাভের আশায় প্রায় ২০০ গ্রাহক এতে বিনিয়োগ করেন।
মাস কয়েক আগে কয়েকজন গ্রাহক তাদের টাকা ফেরত চাইলে মেয়াদ শেষ না হলে তোলা যাবে না বলে জানানো হয়। কিন্তু সম্প্রতি সমিতির নাম হটিয়ে কার্যালয়ের সামনে অন্য একটি সাইনবোর্ড দেখে গ্রাহকদের সন্দেহ হয়।
সম্প্রতি তারা জানতে পারেন ১৫ মার্চের মধ্যেই চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম, মালিক ও ম্যানেজার মাহমুদুল্লাহ ইকবালসহ ১৫ জন মালিক সমিতির জমি বিক্রিসহ গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন।
আশুলিয়ার জামগড়া ছয়তলা রূপায়ন মাঠ এলাকায় শনিবার গিয়ে দেখা, সমিতির কার্যালয়ের সামনে তালা ঝুলছে। সমিতির জায়গাসহ টিনশেডের ভবনটিও মঞ্জুরুল ইসলাম বুলবুল নামে এক ব্যক্তি কিনেছেন এমন একটি তথ্য লেখা রয়েছে দেয়ালে। এ সময় ভুক্তভোগী শতাধিক গ্রাহককে সমিতির সামনে বসে বিলাপ করতে দেখা যায়।
জামগড়া এলাকার মুদি দোকান ব্যবসায়ী আনিসুজ্জামান ও তার দুই ভাই মনিরুজ্জামান ও ওহিদুজ্জামান এ সমিতিতে ৭৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখন হাহাকার করছেন।
আনিসুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, ৫ বছর মেয়াদে ২০২০ সালে তারা তিন ভাই ৭৮ লাখ টাকার এফডিআর করেছিলেন। এর মধ্যে তার ৩০ লাখ টাকা। প্রতি লাখে তাদের ১৮০০ টাকা লভ্যাংশ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই দিন আগে জানতে পারেন জায়গা ও স্থাপনা বিক্রি করে সমিতির মালিকপক্ষ পালিয়েছে।
এরপর ভাইস চেয়ারম্যান রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দিনাজপুরে তাদের প্রজেক্ট বিক্রি করে টাকা পরিশোধের প্রুতিশ্রতি দেন। কিন্তু গত শনিবার তার মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি। এমন অবস্থায় কোথায় যাবেন, কী করবেন আর সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
গৃহবধূ মোসলেমা আক্তার কান্না জড়িত কণ্ঠে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক কষ্ট কইরা ৫ লাখ টাকা রাখছিলাম এই সমিতিতে। এখন তাদের কাউরেই ফোনে পাইতেছি না। সবার ফোন বন্ধ। সকাল থেকে তিনবার আসছি সমিতিতে। দরজায় তালা দেখে সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।’
সমিতির মালিকরা তাদের অফিসের জমি বিক্রি করে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। ছবি: নিউজবাংলাআনিসুজ্জামান ও মোসলেমা আক্তারের মতো আব্দুল জলিলের ২৯ লাখ টাকা, আল আমিনের ১১ লাখ, ওয়াসিম উদ্দিনের ১০ লাখ, আবুল কালামের ৪০ লাখ, আব্দুর রশিদের ১০ লাখ, সবুর খানের ১ লাখ ২০ হাজার, মিনু বেগমের ১ লাখ ৮৫ হাজারসহ প্রায় দুইশ গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে সমিতির মালিকপক্ষ।
বেলায়েত হোসেন নামে আরেক গ্রাহক বলেন, সমিতির সরকারি নিবন্ধন দেখে ১৮ লাখ টাকা রেখেছিলাম লাভের আশায়। কিন্তু মালিকপক্ষ গোপনে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকায় নিজেদের জায়গা বিক্রি করে পালিয়েছে। থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। আমরা সরকারের কাছে বিচার চাই।’
এ বিষয়ে চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান রেজা কিবরিয়া রাজুর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাকে পাঠানো এসএমএসের উত্তরে তিনি লেখেন, ‘আমি চেতনা পরিবার লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান, চেতনা মাল্টিপারপাসের নই। দুইটা টোটালি আলাদা প্রতিষ্ঠান। যে সমস্যা হয়েছে সেটি চেতনা মাল্টিপারপাসের।’
সমিতির জায়গা কেনা মঞ্জুরুল ইসলাম মন্ডল জানান, কিছুদিন আগে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তিনি সমিতির মালিকদের কাছ থেকে ৮.১৩ শতাংশ জায়গা কেনেন তবে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার বিষয়টি তিনি জানতেন না।
এ দিকে গ্রাহকদের অভিযোগ না নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠিয়ে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান।