নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুরা ইউনিয়নের পেমই গ্রামে শনিবার বিকেলে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় পেমই ছাড়াও কেন্দুয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শত শত মানুষ অংশ নেন।
এর আগে বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহ কেন্দুয়া উপজেলা সদরের আদমপুর এলাকার হেলিপ্যাডে আনা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক জিয়া আহমেদ সুমন এবং পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী ছাড়াও কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তার মরদেহ গ্রহণ করেন। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহটি সাত কিলোমিটার দূরের পেমই গ্রামে সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে আগে থেকেই জড়ো হয়েছিলেন অন্তত তিন-চার হাজার মানুষ। অ্যাম্বুলেন্সে করে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে মরদেহের কফিনটি তার গ্রামের বাড়ির সামনে নামানো হয়।
এরপর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক জিয়া আহমেদ সুমন, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী, কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনউদ্দিন খন্দকার, কেন্দুয়া পৌরসভার মেয়র আসাদুল হক ভূঁইয়াসহ এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে জেলা পুলিশের একটি দল সাবেক রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অফ অনার প্রদান করে। বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে মুফতি শহিদুল ইসলামের পরিচালনায় ওই বাড়িতেই (সাবেক রাষ্ট্রপতির) অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজা। জানাজার আগে সাবেক রাষ্ট্রপতির ছোট ছেলে সোহেল আহমদ তার বাবার জন্য এলাকাবাসীর দোয়া প্রার্থনা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘বাবা সারা জীবন সাদামাটা জীবনযাপন করেছেন। তার কোনো রকম উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না। নীতি-আদর্শের বাইরে তিনি কোনো কিছু করেননি। তিনি আমাদেরকেও সে শিক্ষাই দিয়ে গেছেন। দোয়া করবেন যাতে আমরাও বাবার আদর্শকে ধারণ করেই চলতে পারি।’
সোহেল আরও বলেন, ‘বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল একবার গ্রামের বাড়িতে আসার। কিন্তু আমরা তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারিনি।’
সোহেল আহমদ ছাড়াও তার স্ত্রী আমিনা ইশরাত ও তাদের ছেলে এজাজ আহমদ মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন।
জানাজার পর আবার একই অ্যাম্বুলেন্সে করে সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহটি কেন্দুয়া সদরের আদমপুর এলাকার হেলিপ্যাডে নেয়া হয়। পরে তা হেলিকপ্টারে করে আবার ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
তার ছেলে সোহেল আহমদ জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহটি প্রথমে তাদের গুলশানের নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। পরে রাতে তা সিএমএইচের হিমাগারে রাখা হবে। রোববার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজার পর বনানীর কবরস্থানে দাফন করা হবে।
সাহাবুদ্দীন আহমদের ছোট ভাই প্রয়াত মনিরুদ্দিনের ছেলে সোহরাব উদ্দিন জানান, তিনি সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। ওই সময়ে তিনি তার বাড়ির সামনে পেমই পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এরপর প্রধান বিচারপতি ও পরে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তিনি আর কখনও বাড়িতে আসেননি। সোহরাব উদ্দিন আরও জানান, সাহাবুদ্দীন আহমদের গ্রামের বাড়িতে দুটি টিনশেড ঘর রয়েছে। ওই ঘর দুটি তিনি নিজের বেতনের টাকায় নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে ঘরটিতে সোহরাব উদ্দিন তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। এ ছাড়া সাহাবুদ্দীনের গ্রামের বাড়িতে মিজানুর রহমান, খলিলুর রহমান, জসীম উদ্দিন ও জামাল উদ্দিন নামে আরও চার ভাতিজা বসবাস করেন।
পেমই গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক খোরশেদ আলী জানান, ‘সাহাবুদ্দীন সাহেব বাড়িতে এসেও খুব সাধারণভাবে চলাফেরা করতেন। তাকে দেখে কখনও মনে হতো না তিনি এত বড় মানুষ ছিলেন। সাধারণ পোশাক পরেই তিনি সবার সঙ্গে মিশতেন, ক্ষেতখলা দেখতেন। বাল্যবেলার বন্ধুদের খোঁজখবর নিতেন। কেউ তার সাহায্য চাইলে তিনি নৈতিকভাবে যদি সম্ভব হতো তবেই করতেন। কোনো অন্যায় আবদার গ্রহণ করতেন না। তাকে নিয়ে আমরা সব সময় গর্ব করি।’
খোরশেদ আলী বলেন, ‘সাহাবুদ্দীন সাহেব বলতেন আমি সারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। কোনো নির্দিষ্ট এলাকার নই। তাই রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী সারা দেশের মানুষের কথাই আমাকে ভাবতে হবে।’