বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ষড়ঋতুর দেশে সুবাস ছড়াচ্ছে নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ

  •    
  • ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৫:৩৩

ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশে টিউলিপের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। আমার বাগানে পরপর দুবার টিউলিপ ফোটায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সেই চিন্তা থেকে এবার নেদারল্যান্ডস থেকে হলুদ ও লাল, চার ধরনের গোলাপি, কমলা, সাদা, পার্পেল রঙেরসহ ১০ ধরনের ৭০ হাজার টিউলিপের বীজ আমদানি করা হয়েছে।’

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে টিউলিপ ছিল স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্ব খণ্ডগ্রামের ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন ও সেলিনা আক্তার দম্পতি। গরমের দেশে শীতের নাজুক ফুল ফোটাবার সাহস প্রায় অবাস্তবই।

তবে বাংলাদেশের মাটি, জল, আবহাওয়ার অপার শক্তির সঙ্গে পরিশ্রম আর মেধায় টিউলিপের হাসি ফুটিয়েছেন এই দম্পতি। এবারই প্রথম নয়, এ নিয়ে তৃতীয়বার। এবার দেলোয়ারের বাগানে ফুটেছে প্রায় ১৩ রঙের বাহারি টিউলিপ।

গত বছর যখন টিউলিপ ফুল ফোটে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজর কেড়েছিল। বাগান পরিদর্শনে এসেছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দেলোয়ারের ফোটানো টিউলিপ খবর হয়েছিল খোদ ডাচ পত্রিকায়।

ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেনের প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ারস’। এর আগে জার্বেরা, চায়না গোলাপ ও বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষে সফল হয়েছেন তিনি। সফল ফুলচাষি হিসেবে ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পান দেলোয়ার।

প্রথমবার ২০২০ সালে নেদারল্যান্ডস থেকে ২০ হাজার বাল্ব (বীজ) আমদানি করে সীমিত পরিসরে কৃষক দেলোয়ার তার বাগানে টিউলিপের চাষ করেন। এরপর ২০২১ সালে ৩০ হাজার এবং এ বছর ৭০ হাজার বাল্ব আমদানি করেছেন তিনি। তবে করোনার কারণে প্রতিবন্ধকতা পোহাতে হচ্ছে দেলোয়ারকে।

নিউজবাংলাকে ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশে টিউলিপের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। আমার বাগানে পরপর দুবার টিউলিপ ফোটায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সেই চিন্তা থেকে এবার নেদারল্যান্ডস থেকে হলুদ ও লাল, চার ধরনের গোলাপি, কমলা, সাদা, পার্পেল রঙেরসহ ১০ ধরনের ৭০ হাজার টিউলিপের বীজ আমদানি করা হয়েছে।

‘১৩টি রঙের টিউলিপ নিয়ে কাজ করেছি। তার মধ্যে ৬টিতে সাফল্য এসেছে। আমদানি করা বীজগুলো থেকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৪০ হাজার, রাজশাহীতে এক হাজার ও যশোরের গদখালিতে পাঁচ হাজার বীজ দিয়ে বাগান তৈরি করে দেশের টিউলিপের এলাকা নির্ধারণে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।’

এরই মধ্যে সব জায়গায় টিউলিপ ফুল ফোটায় এ নিয়ে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি সাফল্য এসেছে পঞ্চগড়ে। কারণ সেখানকার তাপমাত্রা তুলনামূলক দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে কম।’

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণের লোকজন আমাদেরকে সব সময় সহযোগিতা করেন। তবে আমাদের দরকার অবকাঠামোগত সহযোগিতা। বাগান তৈরিতে যেসব নেট ব্যবহার করা হয় সেসবের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো প্রয়োজন। নেদারল্যান্ডস থেকে বীজ আনতে অনেক টাকা ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে যদি সহযোগিতা করা হয়, তাহলে শুধু টিউলিপ না বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফুল ও সবজি চাষ করা সম্ভব দেশে।’

দেলোয়ার বলেন, ‘মৌসুমে বাগান থেকে যে কেউ চাইলে টিউলিপ ফুল নিতে পারেন। একটি ফুল বিক্রি করা হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর টবে করে ফুল নিতে পারবে ২০০ টাকায়। এ ছাড়া যারা ফুল দেখতে আসছেন তাদের জন্য প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা বাগানে এসে ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে পারবেন।’

টিউলিপে সাফল্য পাওয়ার পেছনে রয়েছে তার স্ত্রীর অবদান। বলেন, ‘বাগান করতে আমাকে সব সময় সহযোগিতা করেছেন আমার স্ত্রী সেলিনা আক্তার। সে ইংলিশে অনার্স-মাস্টার্স করেছে। এ কারণে বিদেশি বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে বাল্ব সংগ্রহ করে সে। ফুল চাষ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলে সেটি নিরসনে বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে পরামর্শ করে স্ত্রী সেলিনা আক্তার।’

দেলোয়ারের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফুল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে। অর্থনীতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিদেশি ফুল দিয়ে আমাদের স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়। এরই মধ্যে জার্বেরা, চায়না গোলাপের পর বিদেশি টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে এসেছে একের পর এক সফলতা। এখন হলো সম্প্রসারণের কাজ করে যাওয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস টিউলিপ ফুল উৎপাদনকারী প্রধান দেশ। টিউলিপকে নিয়েই সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্প। সেখানে প্রতি বছর পালন করা হয় টিউলিপ উৎসব। সাধারণত মার্চ-এপ্রিলে নেদারল্যান্ডসে টিউলিপ ফুল ফোটে। তবে বিস্ময়ের বিষয় বাংলাদেশে এই ফুল ফুটছে দুই মাস আগেই। তাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশের টিউলিপ ফুল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির আশা জাগাচ্ছে।

‘এ ছাড়া দেশের শীতপ্রধান জেলাগুলোতে যদি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে টিউলিপ চাষ করা যায় তাহলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে। দেশের মানুষ তখন অনেক টাকা খরচ করে টিউলিপ দেখতে কাশ্মীর, নেদারল্যান্ডে যাবে না। তাই সরকারকে টিউলিপের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন টিউলিপে সুবাস ছড়াচ্ছে দেলোয়ারের বাগান। বাহারি রঙের টিউলিপ দেখে যে কারও মন পুলকিত হবে। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে দেলোয়ারের বাগানে ফুটতে শুরু করে এই টিউলিপ ফুল। এখন সব ফুল ফুটে দৃষ্টি জুড়াচ্ছেন দর্শনার্থীদের।

প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুরা দেলোয়ারের বাগানে আসছেন টিউলিপ দেখতে। তবে দর্শনার্থী সীমিত করতে দেলোয়ার হোসেন এবার প্রবেশ ফি নির্ধারণ করেছেন ১০০ টাকা। দর্শনার্থীরা নিজেদের মোবাইলে ধারণ করছেন টিউলিপের চিত্র। আর টিউলিপময় এ ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ নিয়ে তৃতীয়বার টিউলিপ ফুল ফোটায় দর্শনার্থীদের আগমনও বেড়েছে।

মহাখালীর ডিওএইচএস থেকে ছেলেকে নিয়ে টিউলিপ বাগান দেখতে এসেছেন বিথি আক্তার। তিনি বলেন, ‘আগে আমরা দেশের বাইরে যেতাম টিউলিপ বাগান দেখতে। যখন ফেসবুকে দেখলাম বাংলাদেশেই টিউলিপের বাগান হয়েছে, তখন থেকেই আসার পরিকল্পনা করি। আমার ছেলেও টিউলিপ ফুল অনেক পছন্দ করে। তাই তাকে নিয়ে সকাল সকাল বাগানে চলে এসেছি। দেশের মাটিতে টিউলিপ ফুটছে দেখে অনেক ভালো লাগছে।’

বাহারি রঙের টিউলিপ ফুল দেখে উচ্ছ্বসিত নার্সারি পড়ুয়া আসমিত জাদি বলে, ‘আমি ইউটিউবে বিভিন্ন রঙের টিউলিপ দেখেছি। এখানে এসে টিউলিপগুলো দেখে অনেক ভালো লেগেছে, অনেক সুন্দর লাগছে। অনেক রকমের টিউলিপ দেখেছি। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সাদা রঙের টিউলিপ।’

শ্রীপুরের দেলোয়ারের টিউলিপ চাষে মুগ্ধ হয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তারাও। নিউজবাংলাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক বশির আহমেদ সরকার বলেন, ‘আমরা তাদের উৎপাদনের জন্য যত রকমের প্রযুক্তিগত সহায়তা দরকার তা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সরকারও এ ব্যাপারে অবগত আছে।

‘উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কমপোস্ট সারের ব্যবহার, রোগবালাই ও পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষার সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে টিউলিপও অন্যান্য ফুলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় চলে আসবে।’

এ বিভাগের আরো খবর