বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে যাতায়াত ১০ লাখ মানুষের

  •    
  • ২৩ আগস্ট, ২০২১ ০৯:৩৮

সেতুটিতে গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশে তিন ফুট উঁচু চারটি পিলার দেয়া হয়েছে। এগুলোর কারণে ভারি কোনো যান সেতুতে উঠতে পারছে না। তবে রিকশা, অটোরিকশার মতো ছোট যান চলছে। এতে ট্রাক, মিটি ট্রাকের পাশাপাশি বাস, মাইক্রোবাসের মতো যাত্রীবাহী গাড়ি পারাপারও বন্ধ হয়ে গেছে।

পূর্ব বগুড়ার বাসিন্দাদের কাছে শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ফতেহ আলী সেতু। করতোয়া নদীর উপর নির্মিত সেতুটি প্রায় চার বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও তা সংস্কারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

হালকা যান চললেও ভারী যান চলাচল ঠেকাতে সেতুটির দুই পাশে দেয়া হয়েছে সিমেন্টের খুঁটি। এতে তৈরি হয়েছে নতুন সমস্যা। পণ্য আনা-নেয়ায় ভারী যানগুলোকে প্রায় আট কিলোমিটার ঘুরে শহরে আসতে হচ্ছে। এতে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

সেতু সংস্কারে ধীরগতির জন্য নদীর দূষণ ও কাজের পদ্ধতিগত জটিলতাকে দায়ী করছেন বগুড়া জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কর্মকর্তা। তারা বলছেন, সেতুটির তলদেশে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকায় নকশা তৈরি করতে সময় বেশি লাগছে।

বগুড়া সওজের তথ্যানুযায়ী, ১৯৬২ সালে করতোয়া নদীর ওপর ৭১ মিটার দৈর্ঘ্যের ফতেহ আলী সেতু নির্মাণ করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী এই সেতুসহ রেলসেতু যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলে ধ্বংস করে দেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত রেল ও সড়ক সেতু সংস্কার করা হয়।

প্রায় ৬০ বছরের পুরনো সেতুটির আয়ুষ্কাল শেষ হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ফতেহ আলী বাজার এলাকায় সেতুটির পাটাতন ও গার্ডারের কিছু অংশ দুই বছর আগে সংস্কার করা হয়। প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজে ‘বিশেষভাবে তৈরি’ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়।

সওজ আরও জানায়, সংস্কারের পর সেতুটি দিয়ে ভারি যান চলাচল সম্ভব কি না তা জানাতে সংস্থাটির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সেতু বিশেষজ্ঞরা পরিদর্শন করেন। তারা সেতুটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে হালকা যান চলার অনুমতি দেন।

সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করেই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি দিয়ে ভারী যান চলছিল। বাধ্য হয়ে প্রায় দুই বছর আগে সেতুর দুই পাশের মাঝামাঝিতে সিমেন্টের পিলার দেয়া হয়।

এরপর থেকে ভারি যান শহরে ঢুকছে প্রায় ৮ কিলোমিটার ঘুরে মাটিডালি এলাকা হয়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার পূর্বাঞ্চলের মানুষরা।

রিকশা, অটোরিকশা চললেও বাস বন্ধ থাকায় যাতায়াতে সমস্যায় পড়ছেন বাসিন্দারা। কৃষিপণ্য থেকে যেকোনো মালপত্র পরিবহনে সংকট হচ্ছে আরও বেশি। বেশি ভাড়ার পাশাপাশি সময়ও লাগছে বেশি।

বগুড়া শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। তবে ফতেহ আলী সেতু পার হয়েই মূল শহর। সেতুটি পূর্বাংশের চেলাপাড়া, নারুলী, সাবগ্রাম আকাশতারার বিশাল এলাকাকে নগরীতে সংযুক্ত করেছে। একই সঙ্গে পূর্ব বগুড়ার গাবতলী, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, ধুনট (আংশিক) উপজেলার বাসিন্দারা এ পথে শহরে যাতায়াত করেন।

সেতুটিতে গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশে তিন ফুট উঁচু চারটি পিলার দেয়া হয়েছে। এগুলোর কারণে ভারি কোনো যান সেতুতে উঠতে পারছে না। তবে রিকশা, অটোরিকশার মতো ছোট যান চলছে। এতে ট্রাক, মিটি ট্রাকের পাশাপাশি বাস, মাইক্রোবাসের মতো যাত্রীবাহী গাড়ি পারাপারও বন্ধ হয়ে গেছে।

বগুড়ার মাছের মূল আড়ত ফতেহ আলী সেতুর পূর্বপাশের চাষী বাজারে। প্রতিদিন এ আড়তে অর্ধশত ট্রাক-মিনি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানে মাছ বিক্রি করতে আসেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। দূর দূরান্ত থেকে আসা মাছের গাড়িগুলো ফতেহ আলী সেতু হয়ে চাষী বাজারে যায়। সেতুটিতে ভারী যান চলাচলে বন্ধ থাকায় তাদের অন্য পথে বাজারে যেতে হচ্ছে। আবার যানজটেও পড়তে হচ্ছে।

চাষী বাজারের ফেলুরাম মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী রঞ্জন কুমার বলেন, ‘সেতু বন্ধ থাকায় আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

গাবতলী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জান্নাতুল মহল বলেন, ‘পূর্ব বগুড়া থেকে ফতেহ আলী সেতু দিয়ে যোগাযোগ সবচেয়ে ভালো। এই পথে আরও কয়েকটি উপজেলার মানুষ শহরে যাওয়া-আসা করে। এক অর্থে ফতেহ আলী সেতুকে পূর্ব বগুড়ার প্রবেশদ্বার বলা হয়।

‘অথচ এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। গুরুত্ব বিবেচনায় এখানে দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণ দরকার।’

শহরের রাজা বাজারের আড়তদার ও ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, ‘প্রায় চার বছর ধরে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। বাজারে আমাদের প্রায় সব পণ্য আনতে বা নিয়ে যেতে গাড়িগুলোকে অনেক দূর ঘুরতে হয়।

‘এতে এক হাজার টাকার ভাড়ার বদলে বাড়তি গুনতে হয় ৫০০ টাকা। এটা আমাদের জন্য বড় একটি ক্ষতি। এ ছাড়া ব্রিজের পূর্ব পাশে বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টরি আছে। যেগুলো মালপত্র আনা-নেয়ায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে।’

জেলার পরিবেশবিষয়ক নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক বলেন, ‘করতোয়া নদীর ওপর ফতেহ আলী ব্রিজের তলদেশ যেন ময়লার ভাগাড়। অথচ ঐতিহ্যবাহী এই ব্রিজ বগুড়ার কয়েকটি উপজেলার মানুষদের শহরে যাতায়াতের প্রধান পথ।

‘দুঃখজনক যে, এটি কবে সংস্কার হবে, কবে চালু করা হবে সে বিষয়েও কিছুই জানতে পারছে না বগুড়াবাসী। ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সাধারণ মানুষ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দাবি, শুধু ব্রিজ সংস্কার নয়। নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে দিয়ে ব্রিজটি যেন শহরের সৌন্দর্যবর্ধন করে এমনভাবে নির্মাণ করা হোক।’

বগুড়া সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান প্রথম বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি এটাকে পুনর্নির্মাণ করব। এ জন্য আমাদের নতুন করে নকশা তৈরি করতে হবে।

‘এখন ব্রিজ তৈরি করতে বিআইডব্লিউ থেকে ভার্টিকাল ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। তাদেরকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেয়া হয়েছিল। সেগুলোর ভিত্তিতে আমরা ব্রিজের উচ্চতা পেয়ে গেছি। এই উচ্চতা নকশা তৈরির ইউনিটকে দেয়া হয়েছে। তারা নকশা তৈরির কাজ করছেন। নকশা হয়ে গেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।’

তার দাবি, নদীর তলদেশে দীর্ঘ দিনের ময়লা-আবর্জনা জমে রয়েছে। এ জন্য ব্রিজের ভার্টিকাল ক্লিয়ারেন্সের জন্য করতে একটু বেশি সময় লেগেছে।

এ বিভাগের আরো খবর