সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে জেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া অভ্যন্তরীণ সব নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। এরই মধ্যে ভাঙনে জেলার কাজীপুর ও চৌহালীতে ৫০টি বসতভিটা ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
টানা কয়েক দিন ধরে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার মানুষ। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে থাকায় বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে ও কাজীপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ সেন্টিমিটার।
জেলা শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টের দায়িত্বে থাকা গেজ মিটার (পানি পরিমাপক) আব্দুল লতিফ নিউজবাংলাকে জানান, শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে কাজীপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টের দায়িত্বে থাকা গেজ মিটার (পানি পরিমাপক) ওমর ফারুক বলেন, গতকাল একই সময়ে যমুনার পানি কাজীপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শুধু চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চরবিনানুই ও চর সলিমাবাদ গ্রামের প্রায় ৩৫টি বসতভিটা ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে শেষ সম্বল হারিয়ে উঁচুস্থানে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
চরবিনানুই গ্রামের মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমার বিয়ের ৪০ বছরে ৬ বার নদী ভাঙনে পড়ছি। আগুনে পুরে গেলে ভিটা থাকে কিন্তু নদীতে ভেঙে গেলে কিছুই থাকে না। আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই না, আমরা নদীভাঙন রোধ চাই।’
একই গ্রামের সবুর আকন্দ বলেন, সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে আর আমরা চৌহালীর মানুষ বাপ-দাদার আশ্রয় হারাচ্ছি। আমাদের দিকে সরকারের নজর নাই। বাড়িঘর হারায় এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় যাব বুঝতে পারছি না। এখন কেউ আশ্রয় দেয় না।
এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলার দায়িত্বে থাকা টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, চৌহালী উপজেলার ওই দুটি গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙন রোধে একটি পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই ভাঙনকবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও বস্তা ফেলার কাজ শুরু করা হবে।