বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ

  •    
  • ২১ আগস্ট, ২০২১ ২২:০৩

গ্রাম দুটিতে অন্তত ২০ জন আছেন, যারা ঘোড়া লালন-পালন করেন। ঘোড়াকেই তাদের আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। তারা বছরের কিছু সময় ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল আনা-নেয়া করেন। আবার ইরি-বোরো ও আমন মৌসুমে চারা রোপণের জন্য জমি সমান করতে ঘোড়া দিয়েই ক্ষেতে মই দেন।

হাল চাষের জন্য গরু আর মহিষই উপযোগী। কিন্তু ভিন্ন চিত্র দেখা গেল শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের গোল্লারপাড় ও বালুঘাটা গ্রামে। সেখানে ঘোড়া দিয়ে চাষাবাদ করার এক ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা এখনও চালু রয়েছে।

মানুষ বাহন হিসেবে ব্যবহার করে ঘোড়া। আবার ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতার জনপ্রিয়তাও অনেক। শৌখিন মানুষ ঘোড়ার গাড়িতে বসে একটু সময় কাটাতেও পছন্দ করেন। মাল টানতেও ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়।

কিন্তু ঘোড়া দিয়ে হাল চাষের দৃশ্য বিরল। এ যেন রূপকথা। কিন্তু রূপকথা নয়, বাস্তবেই ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ হচ্ছে গোল্লারপাড় ও বালুঘাটা গ্রামে।

গ্রাম দুটিতে অন্তত ২০ জন আছেন, যারা ঘোড়া লালন-পালন করেন। ঘোড়াকেই তাদের আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। তারা বছরের কিছু সময় ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল আনা-নেয়া করেন। আবার ইরি-বোরো ও আমন মৌসুমে চারা রোপণের জন্য জমি সমান করতে ঘোড়া দিয়েই ক্ষেতে মই দেন। এতে তারা একরপ্রতি ৭০০-৮০০ টাকা এবং প্রতি কাঠায় ৪০-৫০ টাকা করে পান। আবার জমি চাষ দিলে প্রতি কাঠার (৫ শতাংশ) জন্য ২০০ টাকা পান তারা। এতে তাদের বাড়তি আয়ও হয়।

ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহকারী ইলিয়াস আলী বলেন, ‘ঘোড়া আমি ছয় বছর আগে ছোট সময় ১২ হাজার টাহা দিয়ে কিনছি। তারপর ঘোড়ারে আস্তে আস্তে সোয়ারি হিসেবে বানাইছি। ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতায় আমি এই ঘোড়ারে নিয়া গেছি মেলাবার। ঘোড়া দিয়া মালও টানি। যখন আবার ইরি-বোরো ও আমন মৌসুম শুরু হয়, তখন একটু বাড়তি রোজগারের জন্য চাষাবাদের কামও করি। মালামাল টানার চাইতে চাষাবাদের কাজে রোজগার বেশি। ঘোড়া দিনে ২-৩ একর জমি মই দেওন যায়। আর আমরা প্রতি কাঠা ৪০-৫০ টাহা নিই। আর প্রতি কুড় বা একরপ্রতি ৭০০-৮০০ টাহা নিই। আর জমিতে হাল দিয়ে নিলে নিই প্রতি কাঠা ২০০ টাহা করে। দিনে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাহা পাই। এতে আমাদের দিনে ভালাই কামাই হই।’

ঘোড়া দিয়ে জমি হাল চাষকারী আকবর আলী বলেন, ‘এডা গরু কিনবার ধরলে মেলা টাকা পড়ে। গরুর দামের চেয়ে ঘোড়ার দাম কম। তাই একটা ঘোড়া কিনছি। ঘোড়া দিয়েই হাল চাষ করি। ঘোড়ার শক্তিও মেলা। ঘোড়া দিয়া তাড়াতাড়ি ও সুন্দরভাবে হাল চাষ করা যায়। আমি নিজের জমি চাষ করার পাশাপাশি অন্যের জমিও টাকার বিনিময়ে চাষ করে দিই। এতে করে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় হয়। প্রতিদিন তার ঘোড়ার খাবার বাবদ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হয়।’

ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহকারী মানিক মিয়া বলেন, ‘আমরা মই দিয়া প্রতি কাঠায় ৪০-৫০ টাকা কইরা নিই। এতে আমাদের সংসার বালাই চলে। আমাদের সরকারিভাবে ঋণ দিয়ে সাহায্য করলে ঘোড়ার সংখ্যা বাড়াবার পাইতাম।’

জমির মালিক মো. মারুফ হাসান বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বড় কোনো গরু বা মহিষ নাই। তার জন্য ঘোড়া দিয়ে আমাদের জমিগুলোতে মই দিতে হয়। ঘোড়া দিয়ে মই দিলে ঘোড়াওয়ালা প্রতি কাঠায় ৪০ টাকা কইরা নেয় আরকি।’

জমির মালিক মো. সারোয়ার হেসেন আপেল বলেন, ‘আমরা একরপ্রতি ৭০০-৮০০ টাকা করে ঘোড়া দিয়ে মই দিয়ে নিই। ঘোড়া দিয়ে খালি মই দেই না হালও বাই কিন্তু আমরা হাল মেশিন দিয়ে দেই। কারণ মেশিনে হাল দিলে হাল তাড়াতাড়ি হয়। আবার ঘোড়া দিয়ে মই দিলে জমি সুন্দর হয়। এতে ঘোড়া দিয়ে মই দিলে আমাদের যেমন সুবিধা ঘোড়া মালিকদেরও সুবিধা।’

স্থানীয় রফিকুল জানান, এসব জমি হাল বাওয়া মেশিন দিয়ে চাষ করলেও জমি সমান হয় না। ঘোড়া দিয়ে মই দিলে জমি সমান হয়। তাই তারা ঘোড়া দিয়েই মই দেন।

শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মুহিত কুমার দেবনাথ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একসময় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিল। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়ার গাড়ি প্রায় উঠেই গেছে। ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ করতে খুব একটা দেখা যায় না। এখন যান্ত্রিক উপায়েই জমি চাষ করে কৃষকরা। তবে গোল্লারপাড়ে অনেকেই তাদের বাড়তি আয়ের জন্য ঘোড়া দিয়ে মই দেয় বা হাল চাষ করে।’

তিনি আরও জানান, বর্তমান আধুনিক যুগে কৃষি চাষাবাদ হচ্ছে আধুনিক মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে। কৃষি বিভাগ আধুনিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে চাষাবাদ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করছে।

এ বিভাগের আরো খবর