উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও। এতে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চল। বিপাকে পড়েছেন জেলার গো-খামারিরা।
নদীর স্রোতে জেলার বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিরাজগঞ্জের শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টের গেজ রিডার আবদুল লতিফ নিউজবাংলাকে জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে পানি ১৮ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর উপজেলার মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও, বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে বইছে যমুনা।
এ দুটি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার আশঙ্কা থাকলেও, পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা কম বলে জানান পাউবোর এই কর্মকর্তা।
সপ্তাহজুড়ে যমুনার পানি বাড়তে থাকায় জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল এরইমধ্যে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
বাড়ছে যমুনা নদীর পানি, বিপাকে সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের মানুষ। ছবি: নিউজবাংলা
পানি বাড়ায় তলিয়ে গেছে জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ গো-চারণভূমি ও সবুজ ঘাস। ফলে দুই লাখের বেশি গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকার গো-খামারিরা।
বাড়ির ছোট ছোট খামারগুলোতে গাদাগাদি করে রাখায় গবাদি পশুগুলো নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্ষাকালে সবুজ ঘাস না থাকায় খড়, ভুসি, খৈলসহ প্যাকেটজাত খাবারে নির্ভরতাতে বেড়েছে ব্যয়, কমেছে দুধ উৎপাদন।
শাহজাদপুর উপজেলার কাওয়াকোলা গ্রামের খামারি ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমার ১৩টি গরুর মধ্যে ছয়টি গরু দুধ দেয়। গত এক সপ্তাহ ধরে জমিতে পানি ওঠার কারণে কাঁচা ঘাষ খাওয়াতে পারছিনা। শুকনা খাবার খাওয়ানোয় দিনে ৩৫ কেজি দুধের পরিবর্তে ২৩ কেজি পাচ্ছি।’
বেলকুচি উপজেলার বড়ধুল গ্রামের খামারি ফারুক সরকার বলেন, ‘চরে পানি উঠলে আমাগো গরু ছাগল পালন করায় ব্যয় বাইড়া যায়। বন্যার সময় গরুর খাবারও বেশি লাগে। আরাকদিকে দুধও কম হয়। কয়েকজন ব্যবসায়ী গরুর খাবার মজুদ রাইখা এই সময় বেশি দামে বিক্রি করে। আমাগো মতো খামারিগো মেলা লোকসান হয়।’
বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন ধানের ক্ষেত, বীজতলা, আখ, পাট, তিল ও সবজিবাগানসহ বিভিন্ন ফসল।
অন্যদিকে জেলার কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলের নাটুয়ারপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, তেকানি, মুনসুরনগর ও খাসরাজবাড়ি ইউনিয়ন এবং চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শুরু হওয়া নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে ফসলি জমি ও বসতভিটা। নদীর তীর থেকে ঘড়-বাড়ি সড়িয়ে নিচ্ছেন অনেকেই।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আরও দুদিন যমুনা নদীর পানি বাড়বে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা কম। দু-চারদিন পর থেকে পানি কমতে পারে। এতে চলতি বছরে বড় বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ‘যমুনা নদীতে পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে আছে। আমরা প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর রাখছি। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে।’
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা গৌরঙ্গ কুমার তালুকদার বলেন, ‘বন্যার পানি প্রবেশ করায় নিম্নাঞ্চলের ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গরু-ছাগলের জন্য কাঁচা ঘাস সংকট হলেও পর্যাপ্ত শুকনো খাবার আছে। আর কোনো ব্যাবসায়ী গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি করতে পারবে না। খবর পেলে সেখানে মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালনা করা হবে।’