বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসায় হামলার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। বলেছেন, এ ঘটনার সত্য অচিরেই উদঘাটিত হবে।
নগরীর নিজ বাসভবনে শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি।
মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সত্য আপনি দাবায়ে রাখতে পারবেন না। সত্য উদঘাটিত হবে। আমি যদি অন্যায় করে থাকি তাহলে আমার এই চেয়ারে থাকার অধিকার নেই।’
সংবাদ সম্মেলনের আগ পর্যন্ত মেয়রের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে তিনি আবার সাংবাদিকদের সামনে আসেন।
মেয়র বলেন, ‘আগস্ট মাসে কোনো বিশৃঙ্খলা হোক এটা আমরা চাই না। এই মাসে আমরা পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি। করলে অনেক কিছুই হতো। কিন্তু আমরা কার বিরুদ্ধে করব? যেটাই হবে সেটা আমার দলের বিরুদ্ধে যাবে, নেত্রীর বিরুদ্ধে যাবে। আমি প্রয়োজনে এখান থেকে চলে যাব; আমি দলের ক্ষতি চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত। আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাচ্ছি, পুরো ভিডিও দেখতে চাই। তা দেখে আমি যদি অপরাধী হয়ে থাকি, আমার দলের নেতাকর্মীরা যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরও বিচার হবে। অন্যায় যদি আমার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আমার বিচার হবে।’
উপজেলা পরিষদ চত্বরে বুধবার রাতে শোক দিবসের ব্যানার খোলাকে কেন্দ্র করে ইউএনও মুনিবুর রহমানের বাসভবনে হামলা হয়। এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর আনসার সদস্যদের গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। সংঘর্ষ হয় পুলিশের সঙ্গেও।
এতে মেয়র ও প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনসহ ৩০ জন আহত হন, যদিও আওয়ামী লীগের দাবি, আহতের সংখ্যা ৭০।
এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও ইউএনও মুনিবুর রহমানের করা দুই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে। মামলার মোট আসামি ৬০২ জন, তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার রাতের সংঘর্ষের পর থেকে নগরীর ময়লা আবর্জনা অপসারণ বন্ধ করে দেয় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ না করায় বরিশাল নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কে জমছে আবর্জনার স্তূপ। ছবি: নিউজবাংলা
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘সব সময় সিটি করপোরেশনের কর্মীরা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় কিন্তু অন্তত এবার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা আমার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আমি জানি না বরিশালের জনগণের মন জয় করতে পেরেছি কি না কিন্তু পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মন জয় করতে পেরেছি।
‘সাধারণ জনগণ যেন দুভোর্গের শিকার না হয় এটা আমার অনুরোধ। বরিশালের জনগণ কোনো অপরাধ করে নাই, ময়লা যদি পরিষ্কার করা না হয় তাহলে জনগণ দুভোর্গের মধ্যে পড়বে। আমার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনারা পরিচ্ছন্নতার কাজটি চালিয়ে যাবেন।’
তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজাখুঁজি না করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান। বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারি আছেন তাদের আপনারা বাধাগ্রস্ত করবেন না। তাহলে নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের কথা আমি বারবার বলে আসছি, এ ঘটনার মাধমে তা প্রমাণ হলো।
‘ব্যানার তো আমার দলের, এটা দলীয় বিষয়। এটাতে তো ইউওনও বাধা দিতে পারেন না, তিনি তো সরকারি চাকরি করেন। দলীয় ব্যানার লাগানোর দায়দায়িত্ব আমাদের, খোলার দায়দায়িত্বও আমাদের।’
নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তার করতে আমার বাসা ঘেরাও করতে হবে না। আমাকে বললে আমিই থানায় যাব।’