বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোথায় যাবেন মমেনা বেগম

  •    
  • ২০ আগস্ট, ২০২১ ১৬:০২

তিস্তা অববাহিকায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবার পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত হয়েছে চর ও নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্দশায় দিন কাটছে গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া আর পীরগাছা উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার মানুষের।

‘এর আগোত ১০-১২ বার নদীত বাড়িঘর ভাঙ্গি গেইছে। হামার টাকা নাই, হামরা কী দিয়ে জমি কেনমো? এখন আস্তাত (রাস্তায়) উটপের নাগবে৷ কাইও তো আগায় আইসে না, কিচ্চু দেয় না।’

চোখের সামনে তিস্তায় পুরো বাড়ি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পর নদীর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চর বিনবিনার মমেনা বেগম।

তিনি বলেন, ‘হামার ঘরোত কিচ্চু নাই বাহে, ট্যাকা যদি থাকিল হয় তাইলে নদী ভাঙ্গার আগোত বাড়িকোনা সরবার (সারাতে) পাইলোং (পারতাম) হয়। আরও অনেকবার বাড়ি ভাঙ্গছে সেলাও (তখনও) মানসের জাগাত উটছি, এবারও ওটমো।’

তিনি বলেন, ‘ওমরা (স্বামী) মরি গেইচে অনেক দিন হইল। দুইটা ছৈল ঢাকাত থাকে। করোনা হইচে দ্যাশোত, ছৈল-পৈলরাও টাকা কামবার পায় নাই। তার উপরে বাড়ি নদীত গেইল। কী যে হইবে আল্লায় জানে।’

উজানের ঢলে হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধিতে কয়েক দিন ধরে শুরু হয়েছে তিস্তার তীব্র ভাঙন। বিলীন হয়েছে কয়েক শ বসতবাড়ি, ফসলি জমি। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, পোস্ট অফিসসহ নানা স্থাপনা।

তিস্তা অববাহিকায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবার পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত হয়েছে চর ও নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্দশায় দিন কাটছে গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া আর পীরগাছা উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার মানুষের।

সরেজমিনে শুক্রবার দেখা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গঙ্গাচড়ায়। ভাঙনের কবলে এই এলাকার পূর্ব ও পশ্চিম ইচলি, চর বিনবিনা, শংকরদহ গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। খাবার ও সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে তারা। অনেকের বাড়িতে চুলা পর্যন্ত জ্বলছে না।

চর বিনবিনার বাসিন্দা আজহার আলী বলেন, ‘বচরে বচরে বাড়ি ভাঙ্গে, বন্যা গেইলে বাড়ি বানাই ফির বন্যা আসি সোগে নিয়ে যায়। এবারও নদীতে বাড়িঘর ভাঙ্গছে। এখন আমরা কই যামো আর কী খামো কিচ্ছু জানি না।’

আর কয়েকটি বাড়ি ভাঙলেই নিশ্চিহ্ন হবে গঙ্গাচড়ার শংকরদহ গ্রাম।

এই গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোন্নাফ আলী নিজেই বাড়িঘর হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের জায়গায়। এ পর্যন্ত ছয়বার তার বাড়ি ভেঙে নিয়ে গেল তিস্তা।

মোন্নাফ আলী বলেন, ‘খুব করুণ পরিস্থিতিতে দিন পার করছি। আমার ওয়ার্ডের বেশির ভাগ বাসিন্দাই বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।’

উপজেলার বড়াইবাড়ি এলাকায় তিস্তার বন্যানিয়ন্ত্রণ ও শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙনে সাউদপাড়া মাদ্রাসার সামনে প্রায় ১০০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে। ব্লক পিচিং সরে যাওয়ায় বাঁধটিতে ধস দেখা দিয়েছে। ধস ঠেকাতে ওই দিন থেকেই কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

স্থানীয় মজিবর রহমান জানান, তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ বাড়ছে। পানির স্রোতে গত শুক্রবার রাতে বড়াইবাড়ি এলাকায় মূল বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার অংশ থেকে ব্লক সরে যায়।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, অনেক মানুষ এখন সীমাহীন দুর্ভোগে। বাড়িঘর ও জমি হারিয়ে পথে বসেছে অনেকেই।

তিনি বলেন, ‘ভাঙনের শিকার ও পানিবন্দি মানুষ স্যানিটেশন, খাওয়ার পানি ও খাদ্যসংকটে ভুগলেও তেমন কিছুই করতে পারছি না। যতটুকু সম্ভব পাশে দাঁড়াচ্ছি। সরকারি যে সহায়তা দেয়া হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়, আরও প্রয়োজন।’

কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু বলেন, ‘আমাদের কাছে যে সহায়তা এসেছে তা দিচ্ছি। কিন্তু আরও প্রয়োজন।’

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলেই কেবল এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকা বাঁচবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, ‘তিন মাস আগে থেকেই আমরা কাজ শুরু করেছি। বিভাগের দুর্যোগপূর্ণ জায়গাগুলোতে ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ চলছে।’

রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ টি এম আখতারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার গঙ্গাচড়ার তিন ইউনিয়নে ১১ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদা চাওয়া হয়েছে, আরও দেয়া হবে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণের চাল ও টাকা আছে। প্রয়োজন হলে আরও চাহিদা পাঠানো হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর