বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ভোরে দেখি বাড়ির বাগান হাওয়া হয়ে গেছে’

  •    
  • ১৯ আগস্ট, ২০২১ ২৩:২৫

মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার জাহান সুজন নিউজবাংলাকে জানান, শ্রীপুরের লাঙ্গলবাঁধ বাজার থেকে শুরু হয়ে আট কিলোমিটার পূর্বে কামারখালী হয়ে মহম্মদপুরের মধুমতি পর্যন্ত ভাঙছে গড়াই নদীর। আট কিলোমিটারে আটটি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সব পয়েন্টে ভাঙন শুরু হচ্ছে। নদীর গতি পরিবর্তনও সেসব জায়গায় লক্ষণীয়।

মধুমতির ভাঙনে বাড়ি হারিয়েছেন মাগুরার মহম্মদপুরের রুইজানি এলাকায় পান্নু শেখ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভোরসকালে উঠে দেখি বাড়ির বাগান হাওয়া হয়ে গেছে নদীর মদি (মধ্যে)। এরাম করে ১৯ বছর কয়েকবার বাড়ির জায়গা নদী থেকে সরাইছি।’

রান্নাঘর বিলীন হয়ে গেছে নদীতে। এবার বসতভিটা গ্রাস করতে এগিয়ে আসছে গড়াই নদী। শেষ সম্বল মূল ঘরটি যেকোনো সময় হারানোর শঙ্কায় উঠোনে নির্ঘুম রাত কাটে শ্রীপুরের কৃষক ইদ্রিস শেখের পরিবারের ৬ সদস্যের।

গড়াই ও মধুমতি নদীর আলাদা নাম হলেও প্রবাহ একই। মাগুরা-ফরিদপুর সীমান্তের কামারখালী ব্রিজ থেকে মিলিত প্রবাহ মূলত দুই নদী দুই নাম ধারন করে। পশ্চিমের প্রবাহের নাম গড়াই। পূর্বের দিকের নাম মধুমতি। এটি জেলার মহম্মদপুর উপজেলায় পড়েছে। এখন দুই নদীতে তীব্র স্রোত। প্রতি বর্ষায় নদীগুলোর পাড় ভেসে যায়। বিগত বছরগুলোর মত এবারও ভাঙন ব্যাপক আকার ধারন করেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গেল অর্ধশত বছরেও নদী ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। দ্রুত ভাঙন রোধে কিছু বাঁধ দেয়া হলেও তা টেকসই হয়নি।

স্থানীয় রুস্তম বিশ্বাস জানান, গত ৫০ বছরে শ্রীপুরের ঘসিয়াল মৌজার অধিকাংশ নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে । কাদের বিশ্বাস, শাহীন শেখ, ইদ্রিস শেখ, রসুল বিশ্বাস, বিপ্লব শেখসহ অনেকের ২৫টি বসতভিটা নদী ভাঙনে তলিয়ে গেছে।

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার দারিয়াপুর ইউনিয়নের ঘসিয়াল মৌজার পনেরো শ একর জমি, বসতভিটা, ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা, দুই ঈদগাহসহ অনেক স্থাপনা গড়াই নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে চর-চৌগাচী গ্রামের শতাধিক বসতভিটা।

মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার জাহান সুজন জানান, ভাঙন রোধে ওই সব এলাকায় এরই মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। শ্রীপুরের লাঙ্গলবাঁধ বাজার থেকে গড়াই নদীর ভাঙন শুরু হয়। সেখান থেকে আট কিলোমিটার পূর্বে কামারখালী হয়ে মহম্মদপুরের মধুমতি পর্যন্ত ভাঙন এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে।

মধুমতি নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড় যাওয়ায় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মহম্মদপুর উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চরপাচুড়িয়া, মহেষপুর, হরেকৃষ্ণপুর, আড়মাঝি, রায়পুর, রুইজানি ও ভোলানাথপুর।

মধুমতির ভাঙনে বাড়ি হারিয়েছেন মহম্মদপুরের রুইজানি এলাকায় পান্নু শেখ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘কয়েকযুগ ধরে এই ভাঙন। বর্ষা আলিই ভাঙন শুরু হয়। ধরেন রাতে ঘুমাইছি চিন্তা মাথাই নিয়ে। ভোরসকালে উঠে দেখি বাড়ির পাশে বাগান হাওয়া হয়ে গেছে নদীর মদি (মধ্যে)। এরাম করে ১৯ বছর কয়েকবার বাড়ির জায়গা নদী থেকে সরাইছি। কোন বাঁধ না থাকায় নদী ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির উঠোনে আসি পড়িছে।’

মাগুরার মহম্মদপুরে মধুমতির ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। ছবি: নিউজবাংলা

মাগুরার ভাঙনকবলিত দুই উপজেলার অধিবাসীদের এখন দিন কাটছে আতঙ্কে। এসব গ্রামের মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহসহ ফসলি জমি ও বসত-বাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে।

নদী ভাঙ্গন রোধ কমিটির সভাপতি সোলাইমান মোল্যা জানান, নদী ভাঙ্গন রোধে পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার জাহান সুজন নিউজবাংলাকে জানান, শ্রীপুরের লাঙ্গলবাঁধ বাজার থেকে শুরু হয়ে আট কিলোমিটার পূর্বে কামারখালী হয়ে মহম্মদপুরের মধুমতি পর্যন্ত ভাঙছে গড়াই নদীর।

আট কিলোমিটারে আটটি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সব পয়েন্টে ভাঙন শুরু হচ্ছে। নদীর গতি পরিবর্তনও সেসব জায়গায় লক্ষণীয়। এ কারণে প্রতি বছর বর্ষায় একই এলাকায় তীব্র স্রোত হচ্ছে। এতে পাড়ের মাটি সরে গিয়ে নদী ভাঙন শুরু হয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা দুই নদীর গভীরতা বাড়াতে ড্রেজিংয়ের সুপারিশ করেছি। নদীর পানি বাড়লে পাড়ে স্রোতের আঘাত কম লাগবে। তখন নদী ভাঙন অনেকটাই কমবে। প্রকল্পটি সুপারিশ পর্যায়ে আছে। অনুমোদন হলে এ সব এলাকা নদী ভাঙনে থেকে রেহাই পাবে।

এ বিভাগের আরো খবর