শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তীব্র স্রোতে ব্যাহত হচ্ছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরি চলাচল। তলিয়ে গেছে তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজের তিনটি কাস্টিং ইয়ার্ড। এতে বন্ধ রয়েছে প্রকল্পের ওই অংশের কাজ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুরেশ্বর পয়েন্টের গেজ রিডার শিল্পি জানান, গত কয়েক দিন ধরেই পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মাসের ১৩ তারিখ থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে ৪৬৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি উঠেছে; যা বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জোয়ারের সময় তা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, এদিকে মেঘনায় পানি ধীরগতিতে নামছে। নদীতে তীব্র স্রোত রয়েছে। তীর উপচে পানি এখনও লোকালয়ে প্রবেশ করেনি। তবে এভাবে পানি বাড়তে থাকলে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব জানান, ভারতের কয়েকটি প্রদেশে এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও ঢলের কারণে প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। অতিরিক্ত পানি মেঘনা নদী দিয়ে সাগরে চলে যায়, কিন্তু মেঘনার পানির উচ্চতা বেশি থাকায় পদ্মার পানি ধীরগতিতে নামছে। ফলে সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। চলতি মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত এ পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে।
শরীয়তপুরে পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি আরও বলেন, ‘বিপৎসীমা অতিক্রম করায় পদ্মার ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের কীর্তিনাশা, চেরাগ আলী ব্যাপারীকান্দি ও ঈশ্বরকাঠি তিনটি কাস্টিং ইয়ার্ডে পানি প্রবেশ করেছে। এতে ওই অংশে প্রকল্পের কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে কয়েকটি স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙন রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।’
নরসিংহপুর ফেরিঘাটের বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক আব্দুল মোমেন জানান, মেঘনায় তীব্র স্রোতের কারণে চাঁদপুর হরিণা ফেরিঘাট থেকে ৪ কিলোমিটার উজানে গিয়ে নদীর পাড়ি দিতে হচ্ছে। এর ফলে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত বেশি সময় লাগছে। আসা-যাওয়া মিলিয়ে দুই ঘণ্টা পিছিয়ে পড়ার কারণে যানবাহন পারাপারে সময় বেশি লাগছে। তীব্র স্রোতের কারণে বুধবার দুপুর থেকে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ফেরিঘাট বন্ধ থাকায় শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরিঘাটে গাড়ির চাপ বেড়েছে। এমন অবস্থা থাকলে আবারও দীর্ঘ যানজট দেখা দিতে পারে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ‘ঢল ও বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বেড়ে কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি মাসে আরও কয়েক দিন এ অবস্থা থাকতে পারে। তবে এখনও তা বন্যায় রূপ নেয়নি।’
তিনি আরও জানান, কিছু কিছু এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।