পাঁচ বছর বয়স থেকে মহাদেবের দিন কাটছে বারান্দায় বসে। উঠানে পোঁতা খুঁটির সঙ্গে বাঁধা থাকে তার পায়ের শিকল।
এভাবেই ১০ বছর কেটে গেছে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের মহাদেব শীলের। আর্থিক অনটনের কারণে বাবা-মা পারেননি ছেলের চিকিৎসা করাতে। উপজেলা প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়েও মেলেনি কিছুই।
মহাদেবের পরিবার জানায়, ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে মহাদেবের জন্ম। জন্মের পর থেকেই তার খিঁচুনি হতে থাকে। স্থানীয় কবিরাজ দিয়ে তার চিকিৎসা করানো। পাঁচ বছর থেকে শুরু হয় আবারও খিঁচুনি ও অস্বাভাবিক আচরণ। নাপিত বাবা ছেলেকে কোনো ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি।
মা অর্চনা রানী শীল বলেন, ‘দশ বছরের বেশি পায়ে শিকল দিয়া বাইন্দা রাখছি। কোন মা তার নিজের ছেলেকে এইভাবে দেখতে চায় বলেন? বাইন্দা না রাখলে ওর মতো চলে যায়। একলা একলা চইলাও গেছিল আগে। অনেক খুঁইজা পাইছি।
‘এরপর থেইকা আর শিকল খুলি না। খালি শুয়ার সময় শিকল খুলি দেই। দিনের বেলায় ওর কাছে গেলে সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। অনেক সময় মারধর করে। খালি আমি আর ওর বাবার কথা শুনে।’
বাবা সুশান্ত শীল জানান, মাসে ১৫ হাজার টাকার মতো আয় করেন। এই টাকা দিয়ে পাঁচজনের সংসার চলে। মহাদেব ছাড়া তার একটি সাত বছরের মেয়ে আছে। সংসারে আছেন বৃদ্ধ মা। দোকান ভাড়া দিয়ে যা টাকা থাকে, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালান।
সুশান্ত বলেন, ‘ছেলের জন্য প্রত্যেক মাসে সাড়ে ৩ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। আমি কেমনে ওর ভালো চিকিৎসা করামু? সরকার যদি ওর চিকিৎসা করায়ে দেয় তাইলে চিকিৎসা হইব। নাইলে যত দিন বাঁচব এমন শিকলেই কাটব।’
মহাদেবের দাদি ছানি রানী শীল বলেন, ‘মাইনষের ছেলে-মেয়ে এই বয়সে স্কুলে পড়ালেখা করে, খেলাধুলা করে। আর আমার নাতিটার পায়ে শিকল দিয়া বাইন্দা রাখতে হইছে। সকালে বাড়ির সামনের ওই খুঁটিতে ওর মা বাইন্দা দেয়, রাইতে নিয়া আসে। আমার পোলা নাতির চিকিৎসা করাইব নাকি সংসার চালাইব?’
প্রতিবেশী সুমন শীল জানান, মহাদেবের বাবার ছেলের চিকিৎসা করানোর টাকা নেই। সরকার যদি তাদের একটু সাহায্য করত তাহলে হয়তো ছেলেটা ভালো হয়ে যেত।
মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান, অনেকেই সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। চিকিৎসা করাতে পারলে হয়ত মহাদেবও সুস্থ হয়ে যাবে।
মহাদেবের পরিবার সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি জানালেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিপ্লব হোসেন সেলিম নিউজবাংলাকে জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে মহাদেবের পরিবারকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা হয়েছে। তাকে প্রতিবন্ধী কার্ডও দেয়া হয়েছে। সে নিয়মিত ভাতা পায়।
তার সুচিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একাধিকবার কল দেয়া হলেও তারা ধরেননি।