ছেলের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক বৃদ্ধ বাবা।
বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সত্তরোর্ধ্ব বাবা ও সদর উপজেলার চরকাউয়ার নয়ানী গ্রামের বাসিন্দা আনসার আলী এই সহায়তা চান।
লিখিত বক্তব্যে আনসার আলী জানান, মেজো ছেলে আবুল কাশেম নান্নু কয়েকবারে তার প্রায় ১০ লাখ টাকার গাছ ও বাঁশ বিক্রি করেছেন। আর এতে তিনি যতবার বাধা দিয়েছেন ততবারই তাকে মারধর করা হয়েছে। এ নিয়ে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি নিজ বাড়িতে স্থানীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক হয়। তবে ওই সালিশের রায় মেজো ছেলে মেনে নেননি।
আনসার আলী বলেন, ‘এরপর ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি টাকা চেয়ে না পেয়ে নান্নু আমাকে বেদম মারধর করে এবং জোর করে বাছুরসহ একটি গরু নিয়ে যায়। তখন আমি আদালতে মামলা করি। জামিনে ছাড়া পেয়েই মেজো ছেলে নান্নু আমাকে আদালত চত্বরেই হুমিক দেয়। তখন আমি কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।’
তিনি বলেন, ‘আমার করা মামলায় সাক্ষী দেয়ায় দেলোয়ার মুন্সী নামে একজনকে মারধরও করে সে। পরে ২০১৭ সালের ১ জুন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরও একটি মামলা করি।’
আনসার আলী বলেন, ‘জাল দলিল দিয়ে নান্নু আমার কিছু জমি জোর করে চাষাবাদ করছে এবং জমিও দখল করতে চায়। চাষাবাদে বাধা দিলে আমাকে বসতঘর থেকে নামিয়ে দেয় নান্নু। আর তখন থেকে বড় ছেলে আলাউদ্দিন বাবুলের ঘরে থাকি।
‘২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাল দলিলের জোরে নান্নু লোকজন নিয়ে আমার ২৮৪ শতাংশ জমির ধান ও একটি গাছ জোর করে কেটে নেয়।’
তিনি বলেন, ‘জমিসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে পাঁচ বছর ধরে আমার সঙ্গে ঝামেলা করছে নান্নু। আমি জীবিত থাকা অবস্থায় জাল দলিল তৈরি করে আমার জমি আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী দুলুফা বেগম ২০১৫ সালে মারা যাওয়ার পর নান্নু দাবি করে তার মা তাকে দলিলমূলে প্রায় ৫ একর জমি দিয়ে গেছে। কিন্তু আমি আমার স্ত্রীকে কোনো দলিল দিইনি। আর নান্নু যে জাল দলিল তৈরি করেছে তার বড় প্রমাণ হলো আমি দুলুফাকে ১৯৬৭ সালেল ১৪ মার্চ বিয়ে করি। কিন্তু দলিলে উল্লেখ তারিখ থেকে জানা গেছে, বিয়ের ৬ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬১ সালের ২০ এপ্রিল আমি স্ত্রীকে জমি দিয়েছি।’
বৃদ্ধ বলেন, ‘এ ছাড়া আরও প্রায় দেড় একরের মতো জমি আমার মা কুলছুম বিবি দলিলমূলে দিয়েছে বলে নান্নু দাবি করছে। কিন্তু তার কাগজও আজ অবধি দেখাতে পারেনি। নান্নু জোর করে কিছু জমি চাষাবাদ করছে এবং আরো অন্য জমি দখল করতে চাচ্ছে।
‘আমি অনেক ঋণগ্রস্ত ছিলাম, সেই অর্থ আমার বড় ছেলে আলাউদ্দিন বাবুল পরিশোধ করেছে। সে জন্য আমি তাকে আড়াই একর জমি দিয়েছি। আবার মেজো ছেলে নান্নু লাখ লাখ টাকা দেনা হলে ১১৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে তা মিটিয়েছি এবং বিভিন্ন মামলা-মোকাদ্দমা থেকেও তাকে মুক্ত করেছি।’
আনসার আলী আরও বলেন, ‘সবশেষ চলতি বছরের ১ জানুয়ারি আমার ৩ একর জমির ধান কেটে নিয়ে যায় নান্নু ও তার লোকজন। ওই সময় বাধা দিলে নান্নু ও তার ছেলে এমরান ধারালো অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে আমাকে আহত করে। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
‘ওই ঘটনায় আমার বড় ছেলে বাবুল বাদী হয়ে নান্নুসহ ছয়জনকে আসামি করে থানায় মামলা করে। সেই মামলা চলাকালে নান্নু আমার জমির মুগডাল লোকজন দিয়ে জোর করে তুলে নেয়।’