ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উত্তাল পদ্মা। রাজবাড়ী ও ফরিদপুরে এই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বুধবার রাজবাড়ীতে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার এবং ফরিদপুরে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে পদ্মা। এতে দুই জেলার নিম্নাঞ্চলে ঢুকছে পানি।
রাজবাড়ী
জেলা সদরের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বাসিন্দারা পদ্মার পানিতে বন্দি হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে ভাঙছে নদীর পাড়ও।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপপ্রকৌশলী হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, মঙ্গলবার বিকেলে সদর উপজেলার সোনাকান্দর এলাকার ৩০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে।
তিনি জানান, এ নিয়ে গত একমাসে নদীগর্ভে হারিয়েছে জেলার প্রায় ৪০০ মিটার এলাকা।
সদরের সোনাকান্দর এলাকার বাসিন্দা রফিক শেখ বলেন, ‘পদ্মার ভাঙন বন্ধ হচ্ছে না। এই নিয়ে গেল এক মাসে আট জায়গায় ভাঙছে। আমরা পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা খুবই আতঙ্কের মধ্যে রইছি। কখন যে বাড়ি ঘর ভাইঙে যায়।’
রাজবাড়ীতে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে পদ্মা। ছবি: নিউজবাংলা
উপজেলার সিলিমপুর এলাকার আহাদ আলী জানান, নদীর পানি বাড়ায় বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যা হয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা হাফিজুর জানান, বুধবার সকালে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের প্রায় ৩০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। চরাঞ্চলসহ মিজানপুর ইউনিয়নের সিলিমপুর এলাকার বাসিন্দারা এখন পানিবন্দি।
তিনি আরও জানান, সদর উপজেলার গোদার বাজার এলাকায় পদ্মার কয়েকটি পয়েন্ট ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে প্রতিরোধের চেষ্টা করে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ফরিদপুর
ফরিদপুরের গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি বাড়ায় টইটম্বুর মধুমতি, আড়িয়াল খা, কুমার নদ।
এসব নদ-নদীর পানিতে বুধবার সকাল থেকে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বের্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, প্রতিদিনই নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। বুধবার সকালে এই জেলায় পদ্মা বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি বাড়ায় পাঁচটি উপজেলার কয়েকটি স্থানে নদীর পাড় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে প্রাথমিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে।’
বুধবার সকালে ফরিদপুরে পদ্মা বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান বলেন, ‘হঠাৎ করে গত চার-পাঁচ দিন ধরে পানি বাড়ছে। আমার ইউনিয়নটি পদ্মা নদী বেষ্টিত। চারপাশে এখন পানি। জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের চলাফেরা এবং গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে।’
একই উপজেলার ডিক্রিরচর ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বেশির ভাগই চরাঞ্চল। পানি বাড়ায় চরের মাঠ-ঘাট তলিয়ে গেছে। এই মুহূর্তে আউশ ধান ও অন্যান্য ফসলের ক্ষেত পানিতে দুবে গেছে।’
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির বিষয়টি আমরা সতর্ক ভাবেই দেখছি। জেলার বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে খোঁজ খবর রাখতে।’
তিনি বলেন, ‘যে সকল এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সেসব জায়গায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে।’