ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে জমি খারিজ করার অভিযোগে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) রমেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বশর্মাসহ দুইজন আটক হন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজুল ইসলাম ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাবেরী রায় তাদের উদ্ধার করেন।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাবেরী রায়।
তিনি বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে আটক করেছিলেন। আমি আর ইউএনও স্যার উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা এবং তার ব্যক্তিগত সহযোগী (সরকারি কর্মচারী নয়) রিফাতকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।’
কাবেরী রায় বলেন, রিফাতকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর এ ব্যাপারে ডিসি স্যারের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অভিযুক্ত উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রমেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বশর্মাকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় জমির মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, পৌনে ৩ শতক জমির খাজনা দিতে আসলে ওই ভূমি কর্মকর্তা সাত হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে ওই টাকা ঘুষ দিয়ে গত ২৭ জুলাই খাজনা পরিশোধ করেছি।
পাঁচবাগ ইউনিয়নের দীঘির পাড় গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছ থেকে জমি খারিজের কথা বলে ১৬ হাজার টাকা নেন রমেন্দ্র নারায়ন বিশ্বশর্মা। কিন্তু মঙ্গলবার খারিজের রশিদে ২৩৫ টাকা লেখা দেখে ভূমি কর্মকর্তাকে ১৬ হাজার টাকা নেয়ার কারণ জানতে চাইলে আমাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়।
তিনি বলেন, ভূমি অফিসে উপস্থিত লোকজনের প্রতিবাদ ও হৈচৈ শুনে আরও ভুক্তভোগীরা ছুটে এসে ভূমি অফিস ঘেরাও করেন। একপর্যায়ে বাহির থেকে অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় কক্ষের ভেতর ভূমি কর্মকর্তা ও তার ব্যক্তিগত সহকারী রিফাত ছিলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভুক্তভোগীদের সুবিচারের আশ্বাস দিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তরিকুল ইসলাম রিপন বলেন, এক বছর আগে রমেন্দ্র বিশ্বাস পাঁচবাগ ভূমি অফিসে যোগ দেন। এর পর থেকেই তার বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠে। বাড়তি টাকা না দিলে কেউ সেবা পায়নি। ফলে জমির মালিকরা তার প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল। এর ফলেই এমন লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রমেন্দ্র নারায়ন বিশ্বশর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এত টাকা নেয়া হয়নি। অল্প টাকা নেয়া হয়েছিল। বিপদে পড়ায় লোকজন এখন বেশি বেশি বলছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অভিযুক্ত উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রমেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বশর্মাকে মৌখিকভাবে অব্যাহতি ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত অন্য কাউকে দিয়ে তার কাজ চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।