বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রতিবন্ধী নাহিদুলের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোয় বাধা করোনা

  •    
  • ১৭ আগস্ট, ২০২১ ১০:১৯

পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট একটি নির্মাণাধীন ভবনের তৃতীয় তলায় কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন নাহিদুল। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউড ও পঙ্গু হাসপাতালে তিন মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সংক্রমণ দেখা দেয়ায় পরে চিকিৎসক তার দুটি হাতের কনুইয়ের ওপর থেকে কেটে ফেলেন।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার রাহাপাড়া গ্রামের নাহিদুল ইসলামের দুটি হাত কেটে ফেলতে হয়েছিল দুর্ঘটনার পর। পাঁচ বছর আগের ওই দুর্ঘটনায় হাত দিয়ে কাজ করার ক্ষমতা হারালেও মাথা নিচু করেননি তিনি।

নিজের চিকিৎসায় হওয়া ঋণের বোঝা নিয়েই উপজেলার সুরেশ্বর-কেদারপুর সড়কের পাশে একটি কনফেকশনারির দোকান দেন তিনি। সেই দোকানের আয়ে তার পাঁচ সদস্যের সংসার ভালোভাবেই চলছিল।

তবে করোনা পরিস্থিতিতে নাহিদুল পড়েছেন বিপাকে। আয় কমে যাওয়ায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পার করছেন কষ্টের জীবন।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ঘরিসার ইউনিয়নের রাহাপাড়া গ্রামের প্রয়াত আব্দুল হামিদ চৌকিদারের ছেলে নাহিদুল। ২০১২ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব আসে তার কাঁধে। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় গিয়ে কাজ নেন নির্মাণ শ্রমিকের।

তার পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৫ সালে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় শাপলা হাউজিং সেন্টার নামের একটি বেসরকারি আবাসন প্রকল্পে কাজ শুরু করেন নাহিদুল। ১৮ আগস্ট নির্মাণাধীন ভবনের তৃতীয় তলায় কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি।

এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সস্টিটিউট ও পঙ্গু হাসপাতালে তিন মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সংক্রমণ দেখা দেয়ায় পরে চিকিৎসকরা তার দুটি হাতের কনুইয়ের ওপর থেকে কেটে ফেলেন।

নাহিদুলের চিকিৎসায় ওই সময় তার দরিদ্র পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। অর্থ জোগাড় করতে ফসলি জমি ও বসতঘর বিক্রির পাশাপাশি ঋণও করতে হয়।

তারা আরও জানান, ঋণের বোঝা ও সংসারের দায়িত্ব মাথায় নিয়েই গ্রামে ফেরেন নাহিদুল। আশ্রয় নেন সুরেশ্বর গ্রামে শ্বশুর নান্নু মালতের বাড়িতে। কিছুদিন পর গ্রামের সড়কের পাশে ছোট একটি কনফেকশনারির দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।

স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়। দোকানের আয় ও ভাতার টাকা দিয়ে সংসার ও দুই সন্তানের পড়ালেখার খরচ চলছিল তার।

তবে করোনার কারণে তার দোকানের বিক্রি কমে গেছে। আয় কমে যাওয়ায় স্ত্রী, দুই সন্তান ও মাকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন।

নাহিদুলের স্ত্রী মুক্তা আক্তার জানান, নাহিদুল যখন দুর্ঘটনায় হাত হারান তখন তাদের পৃথিবী থেমে গিয়েছিল। তবে নাহিদুলের মনের শক্তিতে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। করোনা তাদের সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আয় কমে যাওয়ায় দুই সন্তানের পড়ালেখার খরচ ও সংসারের খরচ জোগাতে এখন অনেক কষ্ট হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘মানুষের কাছে হাত পেতে নয়, আমরা পরিশ্রম করে বাঁচতে চাই। আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের সহায় হবেন।’

নাহিদুল বলেন, ‘আল্লাহ আমার হাত কেড়ে নিলেও মনের শক্তি ও সাহস বাড়িয়ে দিয়েছেন। চিকিৎসা শেষে কয়েক লাখ টাকার ঋণের বোঝা নিয়ে গ্রামে ফিরে আসি। কী করব ভাবতে পারছিলাম না।

‘দিশেহারা হয়ে স্বজনদের সহায়তা নিয়ে সড়কের পাশে দোকান খুলে বসি। তার আয় দিয়ে ভালোই চলছিলাম। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিক্রি কম, আয় নেই। চরম বিপাকে পড়েছি। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে আবার ঋণ করতে শুরু করেছি।’

ঘড়িসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রব খান বলেন, ‘নাহিদুলের দুটি হাত নেই, কিন্তু সমাজে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছে শক্তি তার।

‘হাত দিয়ে কিছু করতে পারে না, তারপরও তিনি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর দেয়া হয়েছে তাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় তাকে সাহায্য করে থাকি।’

এ বিভাগের আরো খবর