ফারাক্কা বাঁধের ৯৫টি গেট খুলে দেয়ায় পদ্মা ও মহানন্দায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নদীতীরবর্তী এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে পদ্মা নদীতে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বেড়েছে ১৪ সেন্টিমিটার।
পদ্মায় দ্রুত গতিতে পানি বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পাউবো বলছে, ফারাক্কার অনেকগুলো গেট খুলে দেয়ায় এমনটা হয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুয়ায়ী, জেলার প্রায় ১৪৮ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর, অনুপনগর ইউনিয়ন। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা দূলভপুর, ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাকিব আল রাব্বি জানান, গত ৫ দিনের ব্যবধানে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকা ও দূলভপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা ডুবে গেছে। পাকা ইউনিয়নের নিশিপাড়া এলাকাটি ৫ দিন আগেও ভালো ছিল। এখন সেখানে বন্যার পানি চলে এসেছে।
নিশিপাড়ার ২০০ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা জানতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের তালিকা করে জমা দিতে বলা হয়েছে।
সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় ঢুকেছে বন্যার পানি। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৩২ রশিয়া গ্রাম, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের খলিফার চর, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তেকোনা গ্রাম, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জোহরপুর, বেলা পাড়াসহ বেশ কিছু এলাকা।
নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বানের পানি দুই-তিন দিন থ্যাকা বাড়ছে, খানিকেই গ্রামে পানি ঢুকে গেছে।’
জেলা সদর উপজেলার ইউএনও ইফফাত জাহান জানান, তিনি বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সেখানকার পরিস্থিতি দেখে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, মাঠে থাকা আউশ ও আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও ঢেঁড়স, পটলসহ সবজি ক্ষেতেও ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪৮ হেক্টর ফসলি জমি।
পানিবৃদ্ধির বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ময়েজ উদ্দিন বলেন, ‘ভারত ফারাক্কার প্রায় ৯৫টি গেট খুলে দিয়েছে। আর ওই দিকে গত কয়েকদিন অনেক বৃষ্টি হয়েছে। গেট খুলে দেয়ায় দ্রুত পানি আমাদের এদিকে আসছে।
‘গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ সেন্টিমিটার। বর্তমানে পদ্মায় বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মহানন্দায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পানি যদি আর না বাড়ে তবে এই পানি কমতে এক সপ্তাহ মতো সময় লাগবে। আর নিম্নাঞ্চলগুলো আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’