চট্টগ্রামে বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুরের প্রদীপ রুদ্র। কাজের সূত্রে মা, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন কক্সবাজার শহরে ৯ নম্বর ওয়ার্ড ঘোনাপাড়া এলাকায়। সেখানে সবজি বিক্রেতা তিনি।
গ্রাম থেকে এক নিকটাত্মীয়ের অসুস্থতার খবর এলে রোববার সকালে পরিবারসমেত মাইক্রোবাসে করে বাঁশখালীর দিকে রওনা দেন তিনি।
পথে কক্সবাজারের চকরিয়ার ভেণ্ডিবাজার এলাকায় মাইক্রোবাসটি খাদের ডোবায় পড়ে গেলে ভেতরে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে আটকা পড়েন তিনি ও তার পরিবার। যতক্ষণে সবাইকে উদ্ধার করা হয় ততক্ষণে প্রাণ হারান তার স্ত্রী পূর্ণিমা রুদ্র, চার বছরের ছেলে স্বার্থক রুদ্র ও মা রানী রুদ্র।
আহতদের নেয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বেঁচে যাওয়া মেয়ে শ্যামলী রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছেন প্রদীপ।
তিনি বলেন, ‘কিয়াল্লাই বাঁচিলাম যেড়ে মা-বউ বাইচ্ছা বাঁচি না (কেন বেঁচে গেলাম রে! যেখানে আমার মা-স্ত্রী ও সন্তান বেঁচে নেই)। এড়ে আই বাঁচি কি গইজ্জুম, হারে লয় বাইচ্ছুম, আর মায়া শ্যামলীকে কি হই বুঝ দিয়ুম (তাদের ছাড়া কি করে থাকব, আর শ্যামলীকেই বা কি বলে সান্ত্বনা দিব)। এই পৃথিবীত আঁর বেক কিছু শ্যাষ (পৃথিবীতে থেকে আর কি হবে সব তো শেষ)।’
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ার ভেণ্ডিবাজার এলাকায় মাইক্রোবাস খাদে পড়ে শিশুসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। ছবি: নিউজবাংলা
ঘটনাটি খুব কাছ থেকে দেখেছেন মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মাইক্রোবাসটি দেখলাম হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে গিয়ে ধাক্কা লাগে। এরপর সেটা পাশের ডোবার পানিতে পড়ে যায়।
‘আশপাশের লোকজন দ্রুত গিয়ে গাড়িটি টেনে তোলার চেষ্টা করেন। তবে গাড়ির দরজা-জানালা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় আটকা পড়াদের বের করতে বেগ পেতে হয়।’
এই দুর্ঘটনায় প্রদীপের পরিবারের তিনজন ছাড়াও নিহত হন মাইক্রোবাসের তিন আরোহী ও এক পথচারী।
তারা হলেন চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের নতুনপাড়া গ্রামের রতন বিজয় দে ও তার স্ত্রী মধুমিতা দে, একই উপজেলার সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মানিকপুর গ্রামের মো. রিদুয়ানের মেয়ে তছলিমা জান্নাত বুলবুল। আর নিহত পথচারী হলেন চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের মো. ঈসমাইলের স্ত্রী হাজেরা বেগম।
হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম জানান, ধারণা করা হচ্ছে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদের দিকে পড়ার সময় পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া হাজেরা বেগমকে ধাক্কা দেয়। তার মরদেহও খাদ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যান মাইক্রোবাসচালক বাবর আলীও। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
এসআই সিরাজুল বলেন, ‘মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাইক্রোবাসটিও জব্দ করে থানায় নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।