গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রবাসীর আড়াই বছরের কন্যাশিশুকে নির্যাতনের মামলায় সৎমাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তার বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন শিশুটির দাদা আফাজ উদ্দিন।
গ্রেপ্তার আলিফা আক্তার রিপা ময়মনসিংহের পাগলা থানার বাঁশিয়া গ্রামের দুবাই প্রবাসী মোস্তফা কামালের দ্বিতীয় স্ত্রী। শিশুটিকে নিয়ে তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে মোস্তফার বাড়িতে থাকতেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, শনিবার দুপুরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নেয়া হয়। রাতেই আসামি রিপাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার সকালে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শিশুটির দাদা আফাজ উদ্দিন জানান, আট বছর আগে শিশুটির মা সাবিনা ইয়াছমিনকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন তার ছেলে মোস্তফা। বিয়ের আড়াই বছর পর শিশুটির জন্ম হয়। এর মধ্যে দুবাইয়ে রিপার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মোস্তফা।
এজাহারে বলা হয়েছে, সম্পর্কের কিছুদিন পর রিপা প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদসহ নানা শর্ত দিয়ে মোস্তফাকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। সেই শর্তে শিশুটির চার মাস বয়সেই মা সাবিনার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে তার বাবার।
প্রথম সংসারে জন্ম নেয়া শিশুকে দেখাশোনা ও মায়ের যত্নে লালন-পালন করার শর্তে রিপাকে বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করেন মোস্তফা। ছয় মাস আগে আড়াই বছরের শিশুকে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে রেখে ফের দুবাই যান মোস্তফা।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিয়ের কিছুদিন পর রিপা জানতে পারেন তিনি আর মা হতে পারবেন না। এরপর শ্রীপুরে ১৪ শতাংশ জমিতে মোস্তফার পাঁচতলা বাড়িটি তার নামে লিখে দিতে চাপ দিতে থাকেন রিপা। তবে স্ত্রীর নামে বাড়ি লিখে দিতে রাজি ছিলেন না মোস্তফা।
শিশুটির দাদা আফাজউদ্দিনের অভিযোগ, বাড়িটি লিখে নিতে মোস্তফার একমাত্র উত্তরাধিকার শিশুটির উপর নানাভাবে নির্যাতন শুরু করেন রিপা। বুধবার নাতনিকে দেখতে গিয়ে তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পান তিনি।
পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।
আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘বাড়িটি লিখে নিতে বিভিন্ন ফন্দি আঁটা শুরু করেছিলেন রিপা। বুধবার নাতনিকে দেখতে এসে তাকে খুব অসুস্থ। পরে দেখি তার পায়ুপথ ও যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত। এ বিষয়ে পুত্রবধূকে জিজ্ঞাসা করলে সে একেক সময় একেক কথা বলতে থাকে।’
তার অভিযোগ, এর আগেও কয়েকবার নাতনি রিপা নানাভাবে নির্যাতন করেছেন রিপা। বিভিন্নভাবে সতর্ক করার পরও তাদের কথা না শুনে শিশুটিকে এভাবে নির্যাতন করে হত্যার পরিকল্পনা ছিল রিপার।
তবে পুত্রবধূ রিপার দাবি, পা পিছলে ভাতের গরম মাড়ের ওপর পড়ে গিয়ে শিশুটির এমন ক্ষত তৈরি হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মইনুল আতিক বলেন, ‘শিশুটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার পায়ুপথ ছেঁড়া এবং যৌনাঙ্গে দগদগে ঘা ছিল। আমাদের ধারণা, শিশুটি মারাত্মক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শিশুটির ফরেনসিক পরীক্ষা প্রয়োজন, যাতে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে।’