সিলেট নগরীর বাগবাড়ি এলাকার ছোটমণি নিবাসে প্রায় ২ মাস বয়সী এক শিশুকে আছাড় দিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে ওই নিবাসের আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত শিশুর নাম নাবিল আহমদ। সে নিহত হয় গত ২২ জুলাই রাতে। পরের দিন একটি অপমৃত্যুর মামলা করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে নিবাসের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধারের পর হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরপর মধ্যরাতে সুলতানাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিসিটিভি ফুটেজ ২১ দিন পর উদ্ধার করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া ছোটমণি নিবাস কর্তৃপক্ষও এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ছোটমণি নিবাস সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওই অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক নিবাস চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি ঘটনা শুনেছি ২৩ জুলাই সকালে। একটি শিশু মারা যাওয়ার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে জানাই। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ দাফন করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় আমরা নিজেরা একটি তদন্ত কমিটি করেছি। জেলা প্রশাসক আরেকটি তদন্ত কমিটি করেছে।
‘অভিযুক্ত নারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া সিসিটিভি ফুটেজসহ সব ধরনের তথ্য দিয়ে আমরা পুলিশকে সহযোগিতা করছি।’
ছোটমণি নিবাস সূত্রে জানা যায়, শিশু নাবিলের বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাটে। মাসখানেক আগে তাকে ছোটমণি নিবাসে আনা হয়।
সিসিটিভির ফুটেজ থেকে পুলিশ জানায়, ২২ জুলাই রাতে খুব কান্নাকাটি করছিল নাবিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দায়িত্বে থাকা আয়া সুলতানা এক পর্যায়ে তাকে বিছানা থেকে তুলে ছুড়ে ফেলে দেন। এ সময় বিছানার স্টিলের রেলিংয়ে বাড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যায় শিশুটি।
তখনই জ্ঞান হারায় শিশু নাবিল। এরপর নাবিলের মুখের ওপর বালিশ চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন সুলতানা।
এ বিষয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ বলেন, ‘অপমৃত্যুর মামলা হওয়ার পর আমরা তদন্তে যাই। তখন ছোটমণি নিবাসের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়, সেই ফুটেজে শিশুটিকে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়।
‘বিষয়টি এসপি, ডিসি, সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ সকলকে জানানো হয়। পরে ওই নারীকে আটকের সিদ্ধান্ত হলে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।’
ওসি আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। আমরা সমাজসেবা কার্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলেছি মামলা করতে। তারা যদি মামলা না করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দেবে।
‘এ ঘটনা এখনও তদন্তাধীন। তদন্তে যদি ছোটমণি নিবাসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সিলেট সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীনে ছোটমণি নিবাসে বর্তমানে আছে ৪২ শিশু। নবজাতক থেকে সাত বছর পর্যন্ত বয়স এসব শিশুর। বর্তমানে সেসব শিশুর তত্ত্বাবধানে আয়া রয়েছেন পাঁচজন।