কয়েক মাস ধরে পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের সুতালড়ী, আজিমনগর ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের ঘরবাড়ি ও কয়েক শ বিঘা ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
পদ্মার ভয়ংকর থাবায় সবকিছু হারিয়ে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু রক্ষায় সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তারা।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হরিরামপুর উপজেলার তিন ইউনিয়নের মধ্যে সুতালড়ী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের হাত থেকে শেষ রক্ষা পেতে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা।
উপজেলার সুতালড়ী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুরের দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঢাকায় ব্যবসা বাদ দিয়ে ১৫ বছর আগে বাড়িতে এসে ১৫ বিঘা জমিতে কলাগাছের বাগান করেছি। এবার ফলনও হয়েছিল ভালো। কিন্তু গত ১০ দিনের নদীভাঙনে ১৩ বিঘা কলাবাগান পদ্মায় চলে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নদীভাঙন বাড়ির কাছে চলে আসায় ঘর সরিয়ে নিয়েছি। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে মনে হয় বাপ-দাদার রেখে যাওয়া ভিটেমাটিটুকুও থাকবে না।’
একই এলাকার টুম্পা আক্তার বলেন, ‘এইবারের পদ্মার ভাঙনে শেষ সম্বল বাড়িটাও নদীতে চলে গেল। নিজেদের জায়গা বলতে কিছু আর রইল না। থাকার কোনো জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশে ঘর বানিয়ে বসবাস করতেছি। সর্বনাশা পদ্মায় সব শেষ করে দিল।’
উপজেলার আজিমনগর এলাকার পাপিয়া বেগম বলেন, ‘শেষ সম্বল ছিল একটা বাড়ি। মাসখানেক আগে তা-ও নদী নিয়া গেল। কোনো জায়গাজমি না থাকায় রাস্তার পাশে কোনোমতে বেড়া দিয়া থাকতেছি। ভাঙনের চিন্তায় ঘরে চালা দিতে পারি নাই। কোন সময় আবার ভাঙা যাইব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাগো থাকার মতো কোনো জায়গা নাই। সরকারের একটু জায়গা ভিক্ষা চাই। যাতে পুলাপান নিয়া একটু রাইত কাটাতে পারি।’
পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত শেখ আসাদ মিয়া বলেন, ‘আমাগো এলাকার কয়েক শ বিঘা ফসলি জমি ও বসতভিটা পদ্মায় গিলে খাইছে। এখন আজিমনগর আশ্রয়ণ প্রকল্প, সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়, স্থানীয় হাটবাজার, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান খাওনের বাকি আছে। সরকার যদি ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সব শেষ হইয়া যাইব। খালি নামে থাকব এই তিন ইউনিয়ন।’
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, যে ভিটাগুলো নদীতে চলে গেছে সেগুলোর নাম উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে পাঠানো হয়েছে। আর যেসব এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে, সেগুলোর তালিকা করে পানি উন্নয়নের বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘চরে কাজ করলে কাজ টিকবে না। এরই মধ্যে একটা কাজ ফেল করছি। সেটা নদীতে চলে গেছে। তবে ইউএনও মহোদয় কিছু এলাকার তালিকা দিয়েছে। তার মধ্যে নদীর এপার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুরে ভাঙন রোধে কাজ করা হবে।’