বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঋণের কিস্তি শোধে এনজিওকর্মীদের ‘চাপ’

  •    
  • ১২ আগস্ট, ২০২১ ১২:৩৯

শরীয়তপুরের ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের অভিযোগ, করোনায় তাদের কোনো উপার্জন নেই জেনেও কিস্তি পরিশোধে চাপ দেয়া হচ্ছে। বাড়ি গিয়ে গালমন্দও করা হচ্ছে। সীমিত পরিসরে কিস্তি আদায়ের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালীন শরীয়তপুরের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কেন্দ্রে প্রতিদিনই দেখা গেছে কর্মী ও সদস্যদের। মুখে মাস্ক ছাড়া, গাদাগাদি করে গিয়ে ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতারা কিস্তি শোধ করেছেন।

এই ঋণগ্রহীতাদের অভিযোগ, করোনায় তাদের কোনো উপার্জন নেই জেনেও কিস্তি পরিশোধে চাপ দেয়া হচ্ছে। বাড়ি গিয়ে গালমন্দও করা হচ্ছে। সীমিত পরিসরে কিস্তি আদায়ের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

করোনার সবশেষ বিধিনিষেধ শুরুর পর গত ২৫ জুলাই মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি থেকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়, সীমিত পরিসরে সীমিত লোকবল নিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সেই সঙ্গে অসহায় জনগোষ্ঠীর মাঝে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জাম ও খাদ্য সহায়তা দেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়।

সরেজমিনে সদর উপজেলার বিভিন্ন সমিতির কেন্দ্রে দেখা গেছে সকাল হলেই ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার কর্মীরা কিস্তির টাকা দিতে আসছেন। সকাল ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত সব কেন্দ্রেই দেখা যায় ভিড়। সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের কোনো মাস্ক বা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম কিংবা খাদ্য সহায়তা দিতে দেখা যায়নি।

গ্রামীণ ব্যাংকের নীলকান্দি গ্রামের কেন্দ্রে ঋণের কিস্তি দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন রাশিদা বেগম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাগো তো কাম নাই কাজ নাই। পোলাডা তো ঘরে বহা। ধার কইরা সকাল বেলা কিস্তি দিলাম। কিস্তি না দিলে ওনারা বাড়িতে গিয়া হুদা গালাগালি করে। অপমান করে। হেই ডরেই কিস্তি দিয়া গেলাম… স্বামীডাও পঙ্গু। অহন মরণ ছাড়া উপায় নাই।’

উপরগাঁও গ্রামের শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (এসডিএস) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সদস্য বলেন, ‘যেই সব কিস্তি দিতে পারতাছি না, হেই কিস্তির উপর তো আবার সুদ নিব। দ্যাহা যায় সুদের কারণে এট্টা কিস্তিও বেশি অইয়্যা যায়। অহন কি করুম। এমনিতেই দিতে পারি না। আবার বেশি সুদের চিন্তা মাথায়।

‘আমাগো কাজকম্ম নাই। যদি কিস্তির বদলে সুদ নিয়া যায়। তয় আমরা বাঁচলাম কইতোন, তয় আমাগো তো মরাই লাগল। হেরা পারত না আমরা যে কষ্টের মইদ্দে আছি আমাগো সুদ না নিতে। আমাগো কতা কেউ ভাবে না। খালি ওপরে ওপরে দ্যাহায় আর কয়।’

এসডিএসের মাঠকর্মী সবিতা রানিকে ওই কেন্দ্রে ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য নিয়ে বসে কিস্তি তুলতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘অফিসের নির্দেশেই কিস্তি নিচ্ছি। কারও সঙ্গে জোড়াজুড়ি করি না। যে পারে সে দেয়।’

সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জাম ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সদস্যদের দেয়া হয়নি। অফিস থেকে দিলে আমরা তাদের কাছে পৌঁছে দিতাম। তবে কোনো সদস্য অফিসে গেলে তাদের মাস্ক দেয়া হয়।’

শরীয়তপুরে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থার সংগঠন ফেডারেশন অব এনজিও ইন বাংলাদেশ সূত্রে জানা যায়, মাইক্রোক্রেডিট অথোরিটি অনুমোদিত ১৬ এনজিও শরীয়তপুরে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব এনজিওর সদস্যসংখ্যা ২ লাখ ২৫ হাজার। তাদের কাছে দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ স্থিতি রয়েছে বলে জানায় এই সংগঠন।

গ্রামীণ ব্যাংকের আংগারিয়া শাখা ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কিস্তি বন্ধ থাকলে লেনদেনও বন্ধ থাকে। তাই স্বল্প পরিসরে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সদস্যদের ওপর জোরজুলম করা যাবে না। সাধ্যানুযায়ী তারা দেবে। কারও সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করা যাবে না। যদি কেউ এমন ধরনের কাজ করে থাকে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

শরীয়তপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনদীপ ঘরাই জানিয়েছেন, এ ধরনের কিছু অভিযোগ তিনিও পেয়েছেন।

মনদীপ বলেন, ‘কয়েকটি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না। যেহেতু বিষয়গুলো আমাদের সামনে এসেছে, আমরা জরুরি ভিত্তিতে এনজিওগুলোর সঙ্গে জুম মিটিং করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে আলোচনা করব।

‘কোনো ধরনের অমানবিক আচরণের সুযোগ নেই। আমরা যেই রিপোর্ট পাঠাই সেই রিপোর্টে এনজিওগুলোর এই নেতিবাচক বিষয়গুলো তুলে ধরব।’

এ বিভাগের আরো খবর