সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় লাগানো একটি বিলবোর্ড দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। ২০১৭ সালের ঘটনা এটি।সিলেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে লাগানো হয়েছিল বিলবোর্ডটি। বিলবোর্ডে শেখ হাসিনার ছবির পাশাপাশি তার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবিও যুক্ত ছিল। এতে জয়ের উদ্দেশে লেখা ছিল, ‘জয় তোমার শমশের আংকেল বলছি, জাতি তোমার নেতৃত্বের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।’
বিলবোর্ডটি লাগিয়েছিলেন শমশের বক্স নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা। সিলেট নগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তিনি। বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অন্ধভক্ত শমশের।
১৫ আগস্ট, জেল হত্যা দিবস, শেখ হাসিনার জন্মদিন, নির্বাচনসহ নানা উপলক্ষে নগরীতে নিজ খরচে নগরে বিলবোর্ড টানাতেন তিনি। ব্যতিক্রমী আর আবেগঘন লেখাসংবলিত এসব বিলবোর্ড নজর কাড়ত নগরবাসীর।
তবে ২০১৭ সালে জয়কে উদ্দেশ করে লাগানো বিলবোর্ডটি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। এই বিলবোর্ডের সূত্র ধরেই ‘শমশের আংকেল’ হিসেবে পরিচিতি পান শমসের বক্স। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলেরও শিকার হতে হয় তাকে।
তবু থেমে থাকেননি শমশের। বিভিন্ন দিবসে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে নিয়ে বিলবোর্ড টানাতেন তিনি।
কেবল বিলবোর্ডই নয়, ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্টে নিজ খরচে নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় মাইক লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজাতেন। এমনকি যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না তখনও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজাতেন শমশের।
আওয়ামী লীগ অন্তপ্রাণ এই লোকটি এখন ভালো নেই। বছরখানেক ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী তিনি।
পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী অবস্থায় থাকলেও আওয়ামী লীগের কেউ খোঁজ নেননি শমশেরের। জীবনভর আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার জন্য নিজ খরচে প্রচারণা চালালেও এখন তার চিকিৎসা চলছে আত্মীয়স্বজনের সহায়তায়। দলের পক্ষ থেকে মেলেনি কোনো সহায়তা।
ব্যক্তিগত জীবনে তিন কন্যাসন্তানের জনক শমশের। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।
তার বড় ভাই বাবর বক্স বলেন, ‘বছরখানেক ধরে শমশের ক্যান্সারে আক্রান্ত। মাস ছয়েক আগে ঢাকায় তার অস্ত্রোপচার হয়। এরপর আবার ক্যান্সার ফিরে আসায় গত সপ্তাহে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আবারও তার অস্ত্রোপচার হয়। এখনও তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
বাবর বক্স বলেন, ‘দুই দফা অস্ত্রোপচারে প্রায় ১৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আমরা পরিবার ও স্বজনরা মিলে এই খরচ বহন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবছর ১৫ আগস্টে শমশের নিজ খরচে গরু কোরবানি দিয়ে এতিমদের খাওয়াতেন। তবে অসুস্থ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের কেউ তার খোঁজ নেননি। এক দিন কেবল সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে আরমান আহমদ শিপলু তাকে দেখে গেছেন।’
সিলেট নগরের মুক্তিযোদ্ধা গলির ব্যবসায়ী ছিলেন শমশের। ওখানকার ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন।
সিলেট মুক্তিযোদ্ধা গলি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মহানগর যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মেহেদী কাবুল বলেন, ‘শমশের আওয়ামী লীগের জন্য উন্মাদ, আবেগী ও অন্তঃপ্রাণ একজন মানুষ। বন্দরবাজারের মোড়ে একটা সময় ব্যতিক্রমধর্মী বিলবোর্ড, ব্যানার পাওয়া যেত নিবেদক ‘শমশের বক্স’ নামে। বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তিনি তুলে ধরতেন নিজের মতো করে।’
কাবুল আরও বলেন, ‘কোনো প্রাপ্তির আশা না করে শমশের ৭ মার্চের ভাষণ সিলেট শহরে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে বাজিয়েছেন। এরকম নিবেদিতপ্রাণ কর্মীই আওয়ামী লীগের শক্তি। তাই তাদের দুর্দিনে দল ও নেতাকর্মীদের পাশে থাকা উচিত। এতে তৃণমূলের কর্মীরা উৎসাহিত হবেন। দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে আগ্রহী হবেন।’
তবে শমশের বক্সকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তাই মহানগরের সবাইকে চিনি না। তার অসুস্থতার বিষয়টিও জানি না।’
তবে খোঁজ নিয়ে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা।